সম্পাদকীয় ১...
বিচারপতির বাণী
বিলম্বিত বিচার বিচার না হওয়ার শামিল। তবে বিচার না হওয়া অপেক্ষা বিলম্বিত বিচার শ্রেয়। দুই শত সত্তর রজনী তিহার সংশোধনাগারে কাটাইবার পরে অবশেষে জামিন পাইয়া সুরেশ কলমডী নিশ্চয়ই এই কথা স্বীকার করিবেন। কিছু কাল আগে টুজি স্পেকট্রাম সংক্রান্ত মামলায় বিচারাধীন এবং তিহারে বন্দি ডি এম কে নেত্রী কানিমোঝিও জামিন পাইয়াছেন। যে যুক্তিতে এই মামলাগুলিতে ইদানীং জামিন মঞ্জুর হইতেছে, এত দিন সেই যুক্তি কেন প্রযোজ্য ছিল না? লক্ষণীয়, সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট বিচারাধীন অভিযুক্তদের স্বাভাবিক ভাবে জামিন মঞ্জুর করিবার পক্ষে মত দিয়াছেন। বিশেষত, সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি এস এইচ কাপাডিয়া একাধিক বার এই বিষয়ে প্রবল ভাবে সওয়াল করিয়াছেন। তাঁহার অভিমত, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জামিন দেওয়াই রীতি হওয়া উচিত, জামিন নামঞ্জুর করার সিদ্ধান্ত বিরল ব্যতিক্রম হইতে পারে। তাহার পরেই বিভিন্ন মামলায় আটক ‘ভি আই পি’ কয়েদিদের জামিন মিলিয়াছে। জামিন মঞ্জুরির পিছনে প্রধান বিচারপতির উচ্চারণের প্রণোদনা আছে, এমন অনুমান অতএব অসঙ্গত নয়। প্রধান বিচারপতির এই অভিমত স্বাগত। ভারতীয় দণ্ডবিধির আদর্শ অনুসারে, অভিযুক্ত ব্যক্তির অপরাধ যত ক্ষণ প্রমাণিত না হয়, তত ক্ষণ তাঁহাকে নির্দোষ বলিয়া গণ্য করিতে হইবে। সুতরাং তাঁহাকে কয়েদ করিয়া রাখা অনৈতিক। তদুপরি, ‘হেবিয়াস কর্পাস’ বিধিকে তাহার প্রাপ্য মর্যাদা দিতে চাহিলেও সচরাচর যথাসম্ভব দ্রুত জামিন মঞ্জুর করাই বিধেয়। সুপ্রিম কোর্টের অনুশাসনে সত্যই যদি পরিবর্তন ঘটে, ভাল।
লক্ষণীয়, যে ‘নাগরিক সমাজ’ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবিতে অহরহ সরব, তাহার কণ্ঠেও ‘হেবিয়াস কর্পাস’-এর আদর্শ অনুসরণের দাবি শোনা যায় নাই। দিল্লিতেও নহে, কলিকাতাতেও নহে। জামিনের ‘অধিকার’ সম্পর্কিত এই অগ্রচিন্তা আসিয়াছে বিচারবিভাগের অভ্যন্তর হইতে, বস্তুত তাহার শীর্ষ হইতে। সমাজ এই দাবি তোলে নাই। প্রধান বিচারপতি সরাসরি কোনও আদালতের বা বিচারকের সমালোচনা করেন নাই, কোনও বিশেষ মামলা বিষয়ে তাঁহার অভিমত জানান নাই। তাহা সঙ্গত এবং শোভনও হইত না। তিনি গণতন্ত্রের সামগ্রিক চরিত্র তথা বিচারব্যবস্থার নীতি ও আদর্শ সম্পর্কে একটি সাধারণ অনুশাসন উল্লেখ করিয়াছেন। আরও লক্ষণীয়, রাজনীতিক তথা প্রশাসকরা যখন জনপ্রিয়তার কাঙাল, বিচারপতি তখন সরাসরি বিচারকদের জনপ্রিয়তার আকর্ষণে না ভুলিয়া কেবল ন্যায়ের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখিবার পরামর্শ দিয়াছেন। জামিনের ক্ষেত্রে এই প্রশ্নটি বিশেষ প্রাসঙ্গিক। জামিন মঞ্জুর করিবার ব্যাপারে বিচারকের সিদ্ধান্তই নিশ্চয় আইনত শেষ কথা, কিন্তু সেই কারণেই বিচারকরা জামিনের প্রশ্নটি গভীর ভাবে বিবেচনা করিলে বিচারব্যবস্থার মঙ্গল। তাহার পাশাপাশি, প্রশাসনকেও বিচারের নৈতিক কাঠামোটির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হইতে হইবে। অভিযোগ যত বড়ই হউক, অভিযুক্তকে আগে হইতে অপরাধী বলিয়া সাব্যস্ত করা প্রশাসনের কাজ হইতে পারে না, প্রশাসনের নায়কনায়িকাদের কথায় ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত কোনও বিরাগ বা বিদ্বেষের প্রকাশ ঘটা অত্যন্ত অনুচিত, অভিযুক্ত ব্যক্তি সম্পন্ন বা প্রতিপত্তিশালী বলিয়া তাঁহাদের জামিন না দিয়া ‘উচিত শাস্তি’ দিবার মানসিকতায় প্রশাসন বশীভূত হইলে গণতন্ত্রের সর্বনাশ। হয়তো সামাজিক চেতনাতেও এই অনৈতিক ধারণার প্রভাব রহিয়াছে, সমাজ প্রায়শই অভিযুক্ত এবং অপরাধীর ফারাক করিতে পারে না। কিন্তু প্রশাসন তথা বিচারবিভাগের কাজ সমাজকে অনুসরণ করা নয়, তাহাকে যথার্থ পথে নেতৃত্ব দেওয়া, তাহার ন্যায়-অন্যায় বোধ জাগ্রত করা। অভিযুক্ত ব্যক্তি যত গুরুত্বপূর্ণই হউন, তদন্ত এবং বিচারের প্রক্রিয়াটি দ্রুত এবং সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ভাবে সম্পন্ন করা জরুরি, অপরাধ প্রমাণিত হইলে শাস্তিবিধানও সমান আবশ্যক, কিন্তু বিচারের আগেই শাস্তি নৈব নৈব চ। পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থা প্রধান বিচারপতির প্রণোদনায় কান পাতিলে রাজ্যের সমাজ উপকৃত হইবে, গণতন্ত্রও।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.