ভোট ঘিরে তাণ্ডব নেতাজিনগর কলেজেও, অভিযুক্ত টিএমসিপি
নেতাজি ইন্ডোরের সভায় বৃহস্পতিবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ছাত্র-রাজনীতি ঘিরে অশান্তি তিনি বরদাস্ত করবেন না। তাঁর সেই ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা না-কাটতেই শুক্রবার দক্ষিণ শহরতলির নেতাজিনগর কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে তাণ্ডব চলল দিনভর। কলেজে ভাঙচুর, এমনকী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ধাক্কাধাক্কিও করা হয় বলে অভিযোগ।
এবং এ ক্ষেত্রেও আঙুল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-এর দিকে। শুধু তা-ই নয়। বৃহস্পতিবারের সভায় জনপ্রতিনিধিদের অকারণে কোনও কলেজে ঢুকতে নিষেধ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। অথচ নেতাজিনগরের ঘটনায় অভিযোগ উঠেছে, তৃণমূলেরই দুই কাউন্সিলর এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে গোলমালে ইন্ধন জুগিয়েছেন!
সাম্প্রতিক কালে রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে যে অশান্তি রায়গঞ্জ কলেজ থেকে শুরু হয়েছিল, মাজদিয়া-রামপুরহাট হয়ে তার ধারাবাহিকতায় নবতম সংযোজন নেতাজিনগর কলেজ। এ দিন সেখানে ছাত্র সংসদের নির্বাচন ছিল। বেলা পৌনে এগারোটা নাগাদ ভোট শুরু হওয়ার পরেই কলেজ-কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলেন টিএমসিপি সদস্যেরা। তাঁরা বলতে থাকেন, এসএফআই প্রার্থীদের পক্ষে ছাপ দেওয়া ব্যালট আগে থেকেই ভোটবাক্সে ভরে রাখা হয়েছে।
এর প্রেক্ষিতে বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ নির্বাচন প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। অধ্যক্ষ পিনাকী রায় ভোট পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠক করেন। তাতে টিএমসিপি-র অভিযোগের ভিত্তি মেলেনি। পৌনে ১টা নাগাদ ফের ভোট প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দেন অধ্যক্ষ।
তখনই গণ্ডগোল শুরু হয়। পিনাকীবাবু অভিযোগ করেন, টিএমসিপি-র ছেলেরা ঘরে ঘরে ঢুকে ব্যালট বাক্স ভাঙতে থাকে। তাঁর কথায়, “সব ভোটবাক্স ভেঙে ফেলা হয়। শিক্ষকদের কয়েক জনকে ঘর থেকে ধাক্কা দিয়ে বার করে দেওয়া হয়।” অভিযোগ: উত্তেজনা ও ধাক্কাধাক্কি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, চুমকি রায় নামে এক শিক্ষিকা অচৈতন্য হয়ে পড়েন। তাঁকে স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসার পরে তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়। হঠাৎ জ্ঞান হারানোর কারণ কী?
ওই শিক্ষিকা বলেন, “চোখের সামনে দেখছি ধাক্কাধাক্কি, মারামারি হচ্ছে। আমিও ধাক্কা খেয়েছি। এমন দৃশ্য আমি কোনও দিন দেখিনি। সেই কারণে হয়তো অজ্ঞান হয়ে গিয়েছি।”
অসুস্থ শিক্ষিকা চুমকি রায়। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
পুলিশি সূত্রের খবর: গোলমালের জেরে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে কলেজের ভিতরের বিশৃঙ্খলা বাইরে চলে আসে। কলেজের সামনের রাস্তায় এসএফআই-টিএমসিপি সংঘর্ষ বেধে যায়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এর পরে এনএসসি রোড অবরোধ করেন টিএমসিপি। পাল্টা মিছিল করে এসএফআই-ও।
এ দিকে নেতাজিনগর কলেজটি যে এলাকায়, কলকাতা পুরসভার সেই ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর তপন দাশগুপ্ত এবং ১১ নম্বর বরোর তৃণমূল চেয়ারম্যান গোপাল রায় কলেজের গেটের বাইরে চেয়ার নিয়ে বসেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এসএফআইয়ের অভিযোগ: তৃণমূলের ওই দুই নেতার নেতৃত্বেই তাদের মারধর করা হয়েছে। গোপালবাবু এই অভিযোগ অস্বীকার করলেও কলেজে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। কিন্তু নেত্রী নিষেধ করা সত্ত্বেও কলেজে গিয়েছিলেন কেন?
গোপালবাবুর ব্যাখ্যা, “আমার এলাকায় বসবাসকারী ছাত্রছাত্রীদের এসএফআই মারধর করেছে। এ খবর শুনেই কলেজে গিয়েছিলাম। কলেজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে।” একই বক্তব্য তপনবাবুরও।
ছাত্র সংসদের ভোট উপলক্ষে এ দিন সকাল থেকে নেতাজিনগর কলেজ ও তার আশপাশে কার্যত সাধারণ নির্বাচনের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কলেজের প্রধান ফটকের সামনেই বিশাল হোর্ডিংয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। হোর্ডিংয়ে লেখা ‘নেতাজিনগর কলেজে পরিবর্তন চাই।’ কাছেই সিপিএমের পার্টি অফিসে গিজগিজে ভিড়। রাস্তার দু’পাশেও তৃণমূল এবং টিএমসিপি সমর্থকদের জমায়েত। দক্ষিণ কলকাতা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি সঞ্জয় দে বলেন, “কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রার্থীর এজেন্টকে ফাঁকা ভোট-বাক্স না-দেখিয়েই নির্বাচন শুরু করে দিয়েছিলেন। তাই প্রতিবাদ করেছি। ভোট পণ্ড করার পরিকল্পনা আমাদের ছিল না।” নেতাজিনগর কলেজের ঘটনায় টিএমসিপি এবং এসএফআই পুলিশের কাছে পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে। কলেজের তরফে একটি রিপোর্ট পুলিশকে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.