ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে পেট্রাপোল ও বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে আমদানি-রফতানির কাজ সহজ করতে চালু হচ্ছে অভিন্ন ‘কার পাশ’ ব্যবস্থা। অর্থাৎ, শুল্ক দফতরের অফিসারদের সই করা বিশেষ একটি ‘ফর্ম’-এ থাকবে দু’দেশেরই চালক-খালাসির ছবি, লাইসেন্সের তথ্য, ট্রাক ও মালপত্রের বিবরণ। আজ, শনিবার ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল আব্দুল মুহিতের উপস্থিতিতে পেট্রাপোল বন্দরে চালু হচ্ছে এই ব্যবস্থা। যা দু’দেশেই প্রথম।
নতুন ব্যবস্থা ঠিক কী রকম? শুল্ক দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশে পণ্য নিয়ে যাওয়া এ দেশের ট্রাকের ক্ষেত্রে মালপত্র ও নথি খতিয়ে দেখে চালককে ওই ‘পাশ’ দেওয়া হবে। তাতে চালক, খালাসি ও মালপত্র সংক্রান্ত তথ্য ও ছবি থাকবে। একই ‘পাশ’-এর একটি শুল্ক দফতরের অফিসারেরা রেখে দেবেন। দু’টি দেওয়া হবে ট্রাক-চালকদের। একটি চালক নিজের কাছে রাখবেন। অন্যটি বাংলাদেশের শুল্ক অফিসারেরা রেখে দেবেন। চালকের কাছে থাকা ‘পাশ’-এ সই ও ছাপ মেরে দেবেন দেবেন সে দেশের শুল্ক অফিসারেরা। মাল নামিয়ে ট্রাকটি ফেরার সময়ে ভারতীয় শুল্ক দফতরের অফিসারেরাও ‘পাশ’টি খতিয়ে দেখে সই ও ছাপ মারবেন। একই নিয়ম বাংলাদেশের ট্রাক-চালকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। ওই ‘পাশ’ নিয়ে এক বারই ঢোকা ও বেরনো যাবে।
বিস্তারিত দেখতে
ছবিতে ক্লিক করুন |
|
এত দিন দুই স্থলবন্দরের মধ্যে মাল খালাসের কাজ হত কিছুটা ‘জটিল’ ভাবে। বাংলাদেশগামী পণ্যভর্তি ট্রাক পেট্রাপোলে পৌঁছে প্রথমে ‘সেন্ট্রাল ওয়্যারহাউস কর্পোরেশন’-এ (সিডব্লিউসি) ঢুকত। সিডব্লিউসি কর্তৃপক্ষ ট্রাকে কী পণ্য আছে দেখে চালকের কাছে থাকা নির্দিষ্ট কাগজে (চালান) ক্রমিক নম্বর লিখে দিতেন। এর পরে ওই পণ্য রফতানির ‘ক্লিয়ারিং এজেন্ট’ কাগজপত্র নিয়ে শুল্ক দফতরে জমা দিতেন। অফিসারেরা ট্রাকে থাকা পণ্যের নথিপত্র মিলিয়ে, ক্ষেত্র বিশেষে পরীক্ষা করে ছাড়পত্র দিতেন। এজেন্ট তখন বেনাপোলে গিয়ে বাংলাদেশের শুল্ক দফতর থেকে ‘গেট পাশ’ (কার পাশ) নিয়ে আসতেন। তার পরে পেট্রাপোলের অভিবাসন দফতরের কর্মীরা চালক-খালাসির নাম ও ট্রাক সংক্রান্ত তথ্য নথিবদ্ধ করতেন। তার পরে থাকত শুল্ক দফতরের অপরাধ দমন শাখার বেশ কিছু নিয়মকানুন মানার পালা। ফলে, ট্রাকটির বেনাপোলে যাওয়ার অনুমতি পেতে দীর্ঘ সময় লেগে যেত। একই ঘটনা ঘটত বেনাপোলেও। নতুন ব্যবস্থায় ট্রাকগুলির যাতায়াত ও মালপত্র নামানোর সময় অনেক কম লাগবে এবং বেআইনি ভাবে মালপত্র নিয়ে যাওয়া বা অনুপ্রবেশের মতো সমস্যা ঠেকানো যাবে বলেও মনে করছেন দু’দেশের আধিকারিকরা।
শুল্ক দফতর সূত্রের খবর, পেট্রাপোলে পণ্যবাহী ট্রাক থেকে কয়েক বছর আগে সোনার বাট, আগ্নেয়াস্ত্রও মিলেছে। অনেক ক্ষেত্রে নথিপত্রের জন্য চালক-খালাসিরা বিদেশে ঢুকে সমস্যায় পড়তেন। এ সব সমস্যা দূর করতেই দু’দেশের সরকার বিস্তারিত আলোচনার পরে ওই ব্যবস্থা চালু করছে। ভারতের ‘সেন্ট্রাল বোর্ড অব এক্সাইজ অ্যান্ড কাস্টমস’ এবং বাংলাদেশের ‘ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউ’ সেই ব্যবস্থা অনুমোদন করেছে। ‘পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, “আমদানি-রফতানির কাজ সহজ হলে, আমরা অবশ্যই এই নতুন ব্যবস্থাকে স্বাগত জানাব।” |