জমি হস্তান্তর না-হওয়ায় দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বন্দর(ল্যান্ড পোর্ট) প্রকল্পের কাজ গত দু বছরেও শুরু হয়নি। আধুনিক পরিকাঠামো সম্পন্ন বহির্বাণিজ্যের স্থল বন্দর তৈরির ওই প্রকল্পে গত ২০১০ সালে কেন্দ্রীয় সরকার জেলা প্রশাসনকে প্রথম দফায় ৩ কোটি টাকা দেয়। তারমধ্যে ওই জেলার আরএসপি সাংসদের সংসদ-তহবিলের ১ কোটি টাকা রয়েছে। প্রায় দু’বছর ধরে প্রকল্পের কাজ একচুল না-এগোনোয় টাকা ফেরতের আশঙ্কা করে বৃহস্পতিবার ক্ষুব্ধ সাংসদ প্রশান্ত মজুমদার বালুরঘাটে জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করেন। প্রশান্তবাবু বলেন, “দু’বছর আগে দেশে সীমান্তবর্তী ১৩ টি জেলায় বহির্বাণিজ্যের পরিকাঠামো উন্নয়নের সিদ্ধান্ত হয়। তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাস্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মাকেন এ কথা ঘোষনা করেন। সংসদের ভিতরে হিলি বহির্বাণিজ্যের বেহাল অবস্থার কথা উল্লেখ করলে প্রস্তাব গৃহীত হয়। এরপর কেন্দ্রীয় সরকার ওই টাকা বরাদ্দ করে। কিন্তু আজ অবধি প্রকল্পের কাজ শুরুই হয়নি। এরপর তো কেন্দ্রীয় সরকার আর বেশিদিন ওই টাকা ফেলে রাখবে না।” দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক দুর্গাদাস গোস্বামী বলেন, “হিলিতে প্রস্তাবিত স্থল-বন্দরের জমিটি ভূমি রাজস্ব দফতর থেকে শিল্প-বাণিজ্য দফতরে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া না-হওয়ায় কাজ আটকে রয়েছে। ফাইল অনেক আগেই ওই দফতরে পাঠানো হয়েছে। একাধিকবার তদ্বিরও করা হয়েছে। সমস্যা কোথায়, তা জেনে দ্রুত যাতে জমি-হস্তান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হবে।” জেলা ভূমি রাজস্ব দফতর সূত্রের খবর, হিলি সীমান্তের বৈকুন্ঠপুর এলাকায় ৩ একরের বেশি জমিতে বহির্বাণিজ্যের ওই স্থল-বন্দর গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই ছাতার তলায় ট্রাক টার্মিনাস, হোটেল, চালকদের থাকা-খাওয়ার সু ব্যবস্থা, শুল্ক দফতর, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় কেন্দ্র, অভিবাসন দফতর, গুদাম-সহ বহির্বাণিজ্যের আধুনিক সুবিধা-যুক্ত স্থল-বন্দর গড়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। এরপর দিল্লি থেকে শিল্প-বাণিজ্য দফতরের প্রতিনিধিরা এসে হিলি আন্তর্জাতিক চেক-পোস্ট সহ বাংলাদেশের সঙ্গে বহির্বাণিজ্যের অবস্থা সমীক্ষা করে যান। এরপরই ওই টাকা বরাদ্দ করা হয়। বালুরঘাটের সাংসদ প্রশান্তবাবুও তার কোটা থেকে ১ কোটি টাকা দেন। কিন্তু জমি হস্তান্তর নিয়ে জেলা ভূমিরাজস্ব দফতরের সঙ্গে শিল্প-বাণিজ্য দফতরের মধ্যে শুরু হয় দীর্ঘসূত্রিতা। জমি হস্তান্তর বিষয়ে বাণিজ্য দফতরের অধিকর্তার অফিস থেকে একাধিকবার নানা নথি ও তথ্য জানতে চেয়ে জেলা ভূমি রাজস্ব দফতরে ফাইল ফেরত পাঠানো হয়। বেহাল পরিকাঠামোকে সঙ্গে নিয়েই ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের সঙ্গে কোনওমতে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। হিলি এক্সপোর্ট এন্ড কাস্টমস ক্লিয়ারিং এজেন্ট সমিতির সম্পাদক অশোক মন্ডল বলেন, “হিলি চেকপোস্ট দিয়ে রোজ গড়ে প্রায় দেড়শ পণ্যবোঝাই ট্রাক বাংলাদেশে রফতানি হয়। গত বছর হিলি দিয়ে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বহির্বাণিজ্যের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে। ২০১০ সাল থেকে ২০১১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশের সঙ্গে রফতানি বাণিজ্য হয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। তা সত্ত্বেও কেন হিলিতে বহির্বাণিজ্যের পরিকাঠামো গত উন্নয়নে সরকারি তরফে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছেনা, আমরা বুঝতে পারছি না।” জেলাপরিষদ পরিচালিত ট্রাক-টার্মিনাস বেহাল, পার্কিংয়ের ভাল ব্যবস্থা নেই, ফলে বহির্বাণিজ্য মার খাচ্ছে বলে অশোকবাবুর মত ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন। |