জন্মের সময়ে শিশুর ওজন কত হওয়া উচিত, তা নিয়ে বিতর্ক তুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বুধবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের পঞ্চায়েতি-রাজ সম্মেলনে রাজ্যে শিশুমৃত্যু নিয়ে বলতে গিয়ে মমতা মন্তব্য করেন, “জন্মের সময়ে বাচ্চার ওজন ১৫০০ গ্রাম হওয়া উচিত। এখানে প্রসূতিরা খাবার পায় না। ফলে ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের অপুষ্ট বাচ্চা জন্মায়। আর ওই শিশুরা মারা যায়।”
মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য নিয়ে চিকিৎসকের মধ্যেই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা ও প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্র নিজেও চিকিৎসক। মমতার এ দিনের মন্তব্যের পরে সূর্যবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী একটা আবিষ্কার করেছেন! বাচ্চারা নাকি দেড় কিলোগ্রাম ওজন নিয়ে জন্মায়! কম ওজনের বাচ্চাদের বাঁচিয়ে রাখাই সব চেয়ে বড় সমস্যা। কিন্তু এত কম ওজন নিয়ে বাচ্চারা সচরাচর জন্মায় না।”
প্রসবকালে শিশুর ওজন সম্পর্কে শিশু চিকিৎসকেরা কী বলছেন? শিশু চিকিৎসকেরা বলছেন, জন্মের সময়ে একটি শিশুর ওজন অন্তত ৩.১ কিলোগ্রাম থেকে ৩.৫ কিলোগ্রাম হলে সেটাই আদর্শ। কিন্তু এ রাজ্যে নবজাতকদের গড় ওজন থাকে ২.৯ কিলোগ্রাম। আড়াই কিলোগ্রাম বা তার কম ওজন হলে সে ‘কম ওজনের নবজাতক’ হিসেবেই বিবেচিত হয়। চিকিৎসকেরা বলছেন, “আমরা চাই, বাচ্চারা তিন কিলোগ্রাম ওজন নিয়ে জন্মাক। সে-ভাবেই অন্তঃসত্ত্বাদের খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।”
কোনও শিশু যদি দুই কিলোগ্রামের কম ওজন নিয়ে জন্মায়, তা হলে হাসপাতালে রেখে তার বিশেষ পরিচর্যা করতে হয় বলেও জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। শিশুটি যদি নির্দিষ্ট সময়ে জন্মায়, তা হলে ওজন কম হলেও ঝুঁকি কম থাকে। কারণ তত দিনে তার শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলি পূর্ণ আকার পেয়ে যায়। কোনও শিশু যদি আট মাসে জন্মায় এবং তার ওজন আড়াই কিলোগ্রামের কম হয়, তা হলে তার ক্ষেত্রে ঝুঁকি অনেক বেশি। রাজ্যের পরিবার কল্যাণ দফতর এ ব্যাপারে কী বলছে?
ওই দফতরের এক অফিসার বলেন, “এ ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু-র নির্দিষ্ট একটি নির্দেশিকা রয়েছে। সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী ভারতে নবজাতকের ওজন আড়াই কিলোগ্রামের বেশি হওয়া উচিত।”
তা হলে মুখ্যমন্ত্রী কীসের ভিত্তিতে দেড় কিলোগ্রামের তথ্য দিলেন?
স্বাস্থ্যকর্তারা বলছেন, “উনি ভুল করে বলে ফেলেছেন।” |