হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে আমরি-কর্তারা প্রচুর টাকা ছড়াচ্ছেন বলে আদালতে অভিযোগ তুলল পুলিশ। তবে আমরি-কর্তাদের আইনজীবীদের বক্তব্য, এই অভিযোগ ‘হাস্যকর’।
বৃহস্পতিবার আলিপুরের মুখ্য বিচার বিভাগীয় মাজিস্ট্রেটের এজলাসে এই অভিযোগ করেন সরকারি আইনজীবী শক্তি ভট্টাচার্য। এই সংক্রান্ত তদন্তের নথি (কেস ডায়েরি) বিচারক চৌধুরী হেফাজত করিমের কাছে পেশ করা হয়। পুলিশি সূত্রের খবর, টাকা দিয়ে প্রভাবিত করার চেষ্টা হয়েছে, এমন দু’জন সাক্ষীর গোপন লিখিত জবানবন্দিও এ দিন বিচারককে দেওয়া হয়েছে।
পরে জামিনের আবেদন খারিজ করে অভিযুক্ত আট আমরি-কর্তাকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেল-হেফাজতে পাঠান বিচারক। দু’জন সাক্ষীর গোপন জবানবন্দি দেখার পরে বিচারক তাঁর আদেশে জানান, পুলিশের পেশ করা নথিপত্রে বোঝা গিয়েছে, আমরি মামলায় সাক্ষী না-হওয়ার জন্য কয়েক জনকে প্রচুর টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তেরা জামিন পেলে ওই ঘটনার প্রমাণ লোপের আশঙ্কা রয়েছে। সেই কারণেই জামিনের আবেদন খারিজ করা হল।
ঢাকুরিয়ায় আমরি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের মামলায় জেল-হেফাজতে থাকা ওই হাসপাতালের ছ’জন ডিরেক্টর এবং দুই কর্তাকে এ দিন আলিপুর আদালতে তোলা হয়। এ দিনই কলকাতা হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন জানান আমরির দুই ডিরেক্টর রাধেশ্যাম অগ্রবাল এবং রাধেশ্যাম গোয়েনকা। সোমবার বিচারপতি অসীম রায় ও বিচারপতি অসীম রায়ের ডিভিশন বেঞ্চে ওই দু’টি জামিনের আবেদনের শুনানি হতে পারে। |
এ দিনও আলিপুরের মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে আমরি-কর্তাদের জামিনের আর্জি জানান তাঁদের আইনজীবীরা। অভিযুক্তদের অন্যতম আইনজীবী অশোক মুখোপাধ্যায় বলেন, তাঁর মক্কেলদের আটকে রাখার জন্যই এ বার তাঁদের বিরুদ্ধে টাকা ছড়িয়ে সাক্ষীদের প্রভাবিত করার অভিযোগ তুলছেন তদন্তকারীরা। এই অভিযোগ হাস্যকর। কারণ, অভিযুক্তরা ৪১ দিন ধরে বন্দি রয়েছেন। অশোকবাবু বলেন, “প্রাথমিক ভাবে সংগৃহীত কিছু নথিপত্র, অভিযুক্তদের বক্তব্য নথিভুক্ত করা ছাড়া এই মামলার তদন্তে অগ্রগতি হয়নি। পুলিশ এমন কোনও তথ্যও পায়নি, যার সাহায্যে অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে আমরি-কর্তাদের সরাসরি যোগাযোগ প্রমাণিত হয়।” সে-দিকে তাকিয়ে অভিযুক্তদের অন্তর্বর্তী জামিনে মুক্তি দেওয়ার জন্য আবেদন জানান আইনজীবীরা।
আমরি-কর্তাদের অন্য আইনজীবী অমিতাভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য ছিল, তাঁর মক্কেলদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির যে-ধারা (অনিচ্ছাকৃত খুন)-য় মামলা দায়ের হয়েছে, তা যথাযথ নয়। অভিযুক্তদের আইনজীবীরা বলেন, আমরিতে অগ্নিকাণ্ড হাসপাতালের কর্তাদের গাফিলতিতেই ঘটেছে বলে দাবি করছেন তদন্তকারীরা। কিন্তু কেউ নিজের সম্পত্তিতে (এ ক্ষেত্রে আমরি) আগুন লাগাবেন কেন? তা ছাড়া আগে থেকে তাঁরা কী করেই বা জানবেন যে, হাসপাতালে একটি নির্দিষ্ট সময়ে আগুন লাগতে পারে?
জেল-হাজতে থাকা আমরির তিন কর্তা দয়ানন্দ অগ্রবাল, সত্যব্রত উপাধ্যায় ও সঞ্জীব পালের আইনজীবী অমিত ভট্টাচার্য জানান, তাঁর মক্কেলরা আমরির বেতনভোগী কর্মী। হাসপাতালের নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনও বিষয়ের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক ছিল না। শুধু আটকে রাখার উদ্দেশ্যেই পুলিশ বিনা কারণে তাঁদের জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করছে।
আমরি-কর্তাদের আইনজীবীরা দাবি করেন, ওই হাসপাতালের প্রশাসনিক, প্রযুক্তিগত এবং নিরাপত্তা বিষয়ক বিভাগ আলাদা। ধৃত আমরি-কর্তারা প্রশাসনিক দায়িত্বই সামলাতেন। সেখানকার দৈনন্দিন কাজকর্মের সঙ্গে তাঁরা জড়িত ছিলেন না। আইনজীবী সেলিম রহমান বলেন, আমরির কোন ডিরেক্টর কী কাজ করতেন, এফআইআরে তার উল্লেখ করা হয়নি।
জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করে সরকারি আইনজীবী শক্তিবাবু জানান, আমরি-তে প্রশাসনিক, প্রযুক্তিগত এবং নিরাপত্তা বিষয়ক বিভাগের দায়িত্ব পৃথক বলে হাসপাতাল-কর্তাদের আইনজীবীরা আদালতে জানিয়েছেন। হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্ব সেখানকার ডিরেক্টরদের হাতে ছিল না বলে যা জানানো হয়েছে, তা অত্যন্ত গুরুতর। ওই আইনজীবী বলেন, আমরির বেসমেন্টে গাড়ি রাখার জায়গায় ‘ফার্মাসি’ তৈরি হয়েছিল। সেটি অন্যত্র সরিয়ে নিতে বলা হয়েছিল। এই নিয়ে হাসপাতালের তরফে বারবার হলফনামা দেওয়া হলেও তা পালন করা হয়নি। তদন্তের স্বার্থে ধৃত আমরি-কর্তাদের জেল-হেফাজতেই রাখা দরকার। তাই তাঁদের জামিন মঞ্জুর না-করার আবেদন জানান তিনি। |