|
|
|
|
বন্ধ চা বাগানে বাম ভূমিকায় ক্ষুব্ধ মন্ত্রী |
নিলয় দাস • বীরপাড়া |
বন্ধ ঢেকলাপাড়া চা বাগানের শ্রমিকরা বহুবার আর্জি জানানো সত্ত্বেও আগের বাম সরকার বাগান খোলাতে পারেননি। ক্ষমতা হাতবদলের পরে সাত মাস কেটেছে। তৃণমূল জোট সরকারও বাগান খোলাতে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে সাত মাসের মধ্যে তিন দফায় বাগানে গিয়ে শ্রমিকদের সাহায্যের চেষ্টা করেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। অথচ এলাকার আর এস পি বিধায়ক কুমারি কুজুর ও সাংসদকে মনোহর তিরকে সাত মাসের মধ্যে একদিনও বাগানে যাননি কেন সেই প্রশ্ন তুলেছেন শ্রমিকরা। সম্প্রতি গৌতমবাবু বাগানে গেলে বিধায়ক ও সাংসদের প্রসঙ্গ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শ্রমিকদের অনেকেই। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “৭ মাসে আমি তিনবার ঢেকলাপাড়ায় গিয়েছি। যতটা সম্ভব সাহায্যের চেষ্টা করছি। এমনকী, আদালতের বাইরে আলোচনার মাধ্যমে বাগান খোলানোর চেষ্টা করছি।” পাশাপাশি, মন্ত্রীর মতে, “ঢেকলাপাড়া চা বাগানের মানুষের ক্ষোভ সঙ্গত। স্থানীয় বিধায়ক ও সাংসদ মানবিকতার খাতিরে বাগানে যেতে পারতেন। বিধায়ক ও সাংসদ তহবিলের টাকায় কিছু একটা করলে মানুষ বুঝতেন তাদের পাশে ওই দু’জন আছেন।” মন্ত্রীর অভিযোগ, বাম বিধায়ক ও সাংসদদের দল সমালোচনা ছাড়া অন্য কাজ করছেন না।
কদিন আগেই বাগানে এক আরএসপি-এর শ্রমিক সংগঠন ইউটিইউসি অভিযোগ করে, প্রশাসনিক চরম ব্যর্থতার কারণে ওই বাগানে এক মাসে ৯ জনের অপুষ্টি-অনাহারে মৃত্যু হয়েছে। তা হলে নেতারা বাগানে যাচ্ছেন না কেন? জবাবে সংগঠনের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক অশোক ঘোষ বলেন, “অনাহারে বন্ধ বাগানের শ্রমিক মারা যাচ্ছে সে প্রসঙ্গে আমরা চিঠি দিয়ে সরব হয়েছি। তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে আলোড়ন পড়েছে। শ্রমিকদের সঙ্গে আমাদের নিত্য যোগাযোগ আছে। আমাদের চা ইউনিয়ন গুলি শ্রমিকদের প্রতিবাদের ভাষা দিয়েছে। আমাদের জনপ্রতিনিধিরাও শীঘ্রই বাগানে যাবেন।”
আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের আর এস পি সাংসদ মনোহর তিরকে জানান, সময়াভাবের কারণে ওই বাগানে যেতে পারেননি। তবে সেখানকার লোকজনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে বলে মনোহরবাবুর দাবি। মাদারিহাটের বিধায়ক কুমারী কুজুর বলেন, “বিধানসভা ভোটের প্রচারে বাগানে শেষ বার গিয়েছি। তবে যোগাযোগ রয়েছে। বাগানের লোকজন যে ভাতা পাচ্ছেন না সে কথা শ্রমমন্ত্রীকে বলেছি। তাড়াতাড়ি ওই বাগানে যাব।” ২০০২ সালের ২১ আগস্ট বাগান ছেড়ে মালিক চলে যান। বিপাকে পড়েন ৬০৪ জন শ্রমিক ও তাদের পরিবার। সরকারি অনুদান না পেয়ে একের পর এক অপুষ্টজনিত মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এক বছর বাদে মাসিক ৮০০ টাকা করে অনুদানের টাকা বিলি শুরু হয়। ক্রমশ তা অনিয়মিত হয়ে যায়। বন্ধ বাগানের চরম দুর্দশার খবর পেয়ে রামঝোরা বাগান পরিদর্শনে যান তকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গাঁধী। রাজ্যপালের সে দিন দুপুরে উপোস করে নীরব প্রতিবাদ জানান। তার পরেই প্রসাসন কিছুটা তৎপর হয়। বাগানে পানীয় জলের ব্যবস্থা সহ নানান প্রকল্পের কাজ ও অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা হয়। বাগানের বাসিন্দারা জানান, এক সময় সব কটি ট্রেড ইউনিয়ন থাকলেও বাগান বন্ধ হওয়ার পরে তাদের কোনও ভূমিকা না দেখে মানুষ তাদের ত্যাগ করতে থাকেন। বর্তমানে আরএসপি ও সিটুর সংগঠন সংগঠন দুর্বল। বাগানের বাসিন্দা তথা আদিবাসী বিকাশ পরিষদ নেতা বসন্ত তাঁতি বলেন, “বাম আমলে কোন বড় নেতা বা মন্ত্রী বাগানের মানুষের পাশে দাঁড়াননি। তবে তৃণমূল দলের মন্ত্রী গৌতমবাবু আমাদের পাশে থাকছেন। চেষ্টা করছেন। এটুকুও তো আগে হত না।” |
|
|
|
|
|