জেলায় কলেজ-ভোট একই দিনে
অহেতুক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢুকতে নেতা-বিধায়কদের নিষেধ মমতার
কারণে কোনও বিধায়ক বা জনপ্রতিনিধিকে শিক্ষায়তনে ঢুকতে নিষেধ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার তৃণমূলের পঞ্চায়েতি-রাজ সম্মেলনের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী দলের নেতাদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, “অকারণে কোনও বিধায়ক বা জনপ্রতিনিধি কলেজে ঢুকবেন না। কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে জানান। প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। আইন হাতে তুলে নেবেন না।”
এ দিকে এ দিনই রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, একটি জেলার সব কলেজে একই দিনে ছাত্র সংসদ নির্বাচন সেরে ফেলা হবে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, বহু কলেজে ইতিমধ্যে নির্বাচন হয়ে গিয়েছে। বাকি রয়েছে প্রায় দু’শো কলেজ। সেগুলোয় ফেব্রুয়ারির মধ্যে ছাত্র সংসদের ভোট সেরে ফেলতে হবে। এক জেলায় সব কলেজে মনোনয়নপত্র পেশও হবে একই দিনে। এতে কলেজ-ভোট ঘিরে হিংসা এড়ানো যাবে বলে সরকার মনে করছে। পাশাপাশি রাজ্যের সিদ্ধান্ত, আগামী বছর থেকে রাজ্যের সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হবে সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত লিংডো কমিটির সুপারিশ মেনে।
গত এক মাসে রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-অধ্যক্ষ নিগ্রহের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য-রাজনীতি তোলপাড় হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। যাদবপুর বিদ্যাপীঠ, রায়গঞ্জ কলেজের ঘটনায় তৃণমূলের নেতারা উপস্থিত থেকে শিক্ষক নিগ্রহে ‘মদত’ দিয়েছেন বলেও অভিযোগ। সেই প্রেক্ষিতে নেতা-নেত্রীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢোকার ব্যাপারে দলনেত্রীর এ দিনের ‘নিষেধাজ্ঞা’ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন তৃণমূলের একাংশ।
মমতা জানিয়েছেন, ছাত্র রাজনীতি ঘিরে অশান্তি তিনি বরদাস্ত করবেন না। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যদের প্রতি তাঁর নির্দেশ: বিরোধীরা মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দিলে সংঘর্ষের পথে না-গিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “ছাত্র-যৌবন সব সময় কারও বাধা শোনে না জানি। তা সত্ত্বেও বলব কোনও কলেজে মনোনয়ন জমা দিতে না-পারলে গণতান্ত্রিক পথে ও শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলন করতে।”

লিংডোর এক ডজন
• ছাত্র সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের সংস্রব নয়
• নির্বাচনের সময় বহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধ
• পরীক্ষায় অকৃতকার্য পড়ুয়া প্রার্থী নয়
• প্রার্থী হতে ক্লাস-হাজিরা চাই অন্তত ৭৫ শতাংশ
• ফৌজদারি বা বিশ্ববিদ্যালয় আইনে সাজা হলে প্রার্থী নয়
• স্নাতক স্তরের প্রার্থীর বয়স ১৭-২২ বছর
• স্নাতকোত্তরে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা ২৪/২৫ বছর
• পদাধিকারী হতে এক বার, কার্যকরী সমিতির জন্য দু’বার ভোটে লড়া যাবে
• পঠনপাঠনে ব্যাঘাত ঘটিয়ে প্রচার নয়
• পোস্টার হবে হাতে লেখা, সাঁটতে হবে নির্দিষ্ট জায়গায়
• নির্বাচনের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুলে ফেলতে হবে পোস্টার
• বিধি ভাঙলে শাস্তি: ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা, দু’বছর পর্যন্ত জেল
একই সঙ্গে রামপুরহাট কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ওঠা আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগের উল্লেখ করে তৃণমূলনেত্রী বলেন, “রামপুরহাট কলেজের টিচার-ইন-চার্জ বা কোনও কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে তদন্ত হবেই। যে নেতা-ই তাঁদের পাশে থাকুন না কেন!”
অন্য দিকে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিনই অধ্যক্ষ নিগ্রহের ঘটনা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। সূর্যবাবুর কথায়, “অনেক দিন পরে মুখ্যমন্ত্রীকে একটা চিঠি দিয়েছি! বিভিন্ন কলেজে কারা আক্রমণ করেছে, তাদের নাম-ধাম জানিয়েছি। দেখা যাক, কী হয়!” শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতিকদের প্রবেশে মমতার ‘নিষেধাজ্ঞা’র পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধী দলনেতার বক্তব্য, “কতগুলো প্রতিষ্ঠানের পরিচালন সমিতির মাথায় তৃণমূল বিধায়ক বা মন্ত্রীরা আসীন, তার তালিকা আমরা আগেই দিয়েছি। বিধানসভাতেও বলেছি। তার পরে এখন এই কথা শুনছি!” সূর্যবাবুর মন্তব্য, “সব টিচার-ইন-চার্জদের আমরা নিয়োগ করেছিলাম, এ কথা বলার মানে কী? উনি (মুখ্যমন্ত্রী) বলছেন, বাংলার বাইরে থেকেও পড়ানোর লোক আনবেন। আবার বলছি, যা হচ্ছে, তাতে বাংলার লোকেরাই ছেড়ে চলে যাবে! বাংলার বাইরে থেকে আর কে আসতে চাইবে?”
কলেজে কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একের পর এক হিংসাত্মক কার্যকলাপে সরকারের উদ্বেগের কথা আগেই জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। কী ভাবে এই প্রবণতা রোখা যায়, তা নিয়ে নানা স্তরে আলাপ-আলোচনার পরে এ দিন তিনি স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি দু’টি সিদ্ধান্তের কথা জানান। ব্রাত্যবাবু বলেন, “এ বছর বেশির ভাগ কলেজেই ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়ে গিয়েছে। ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাকিগুলোয় নির্বাচন শেষ করতে হবে। গোলমাল এড়াতে এক-একটা জেলায় এক-এক দিনে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মনোনয়ন জমা দেওয়া, ফল ঘোষণা ইত্যাদির সময়ও গোলমাল এড়াতে জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।”
কিন্তু ঘটনা হল, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে হিংসা ও রাজনৈতিক দলাদলি রুখতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গঠিত লিংডো কমিটি ২০০৬ সালে যে একগুচ্ছ সুপারিশ করেছিল, তার প্রায় কোনওটাই রাজ্যে কার্যকর হয়নি। ২০১০-এ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য উচ্চশিক্ষা সংসদ যে খসড়া বিধি তৈরি করে, লিংডো কমিটির বহু সুপারিশ সেখানেও গুরুত্ব পায়নি। তবে এ বার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে লিংডো-সুপারিশ অনুযায়ী ছাত্র সংসদ নির্বাচনের নিয়ম তৈরি করতে বলা হচ্ছে বলে শিক্ষামন্ত্রী এ দিন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে উচ্চশিক্ষা সংসদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি আলোচনা করবে। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সঙ্গেও কথা হবে। তার পরে যে নির্বাচনী-বিধি তৈরি হবে, সেটি পাঠানো হবে মুখ্যমন্ত্রীকে। তিনি সম্মতি দিলেই তা কার্যকর হবে।
আর আগামী বছর থেকে লিংডো কমিটির সুপারিশ মেনেই যে সর্বত্র ছাত্র সংসদ নির্বাচন করতে হবে, শিক্ষামন্ত্রী এ দিন তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.