লিউকোপ্লাস্ট লাগবে না, পাল্টা সূর্যের
মতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেন তাঁর ‘লিউকোপ্লাস্ট’ সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ করেন! মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘কটাক্ষ’ এই ভাবেই ফিরিয়ে দিলেন প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা অধুনা বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র।
বিরোধী এবং সমালোচকদের উদ্দেশে বৃহস্পতিবারও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেছেন, “মুখে লিউকোপ্লাস্ট লাগিয়ে রাখুন!” পত্রপাঠ সূর্যবাবু ফিরিয়ে দিয়েছেন “লিউকোপ্লাস্ট হাসপাতালে সরবরাহ করুন! আমাদের দেওয়ার দরকার নেই!” এতে যেমন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাব দেওয়াও হয়েছে, তেমনই ‘বেহাল’ স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে কটাক্ষও হয়েছে!
দীর্ঘ সাড়ে তিন দশকের বাম জমানায় রাজ্যের উন্নয়ন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে, সর্বত্র পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে এই প্রচারের উপরে নির্ভর করেই আট মাস আগে বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল জয় পেয়েছিলেন বিরোধী নেত্রী মমতা। রাজ্য যত পঞ্চায়েত ভোটের দিকে এগোচ্ছে, সেই অভিযোগেরই পুনরাবৃত্তি করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। বাম জমানার ৩৪ বছরকে কাঠগড়ায় রাখার এই মমতা-নীতির মোকাবিলায় সেই ৩৪ বছরকেই পাল্টা দৃষ্টান্ত হিসাবে খাড়া করে এ বার এগোতে চাইছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল সিপিএম।
বাম জমানায় বহু কাজে ‘ব্যর্থতা’ মেনে নিয়েই সিপিএমের এখন পাল্টা বক্তব্য, ৩৪ বছরে রাজ্যে ‘যতটুকু কাজ’ তারা করতে পেরেছিল, তা-ও নস্যাৎ করার চেষ্টা হচ্ছে বাম জমানায়। সিপিএম নেতৃত্বের মতে, এই কথা বললে জনমানসে নিজেদের ‘ব্যর্থতা’ স্বীকারের ‘বিনম্রতা’ দেখানোর পাশাপাশিই ‘পরিবর্তনের প্রকৃত চেহারা’ তুলে ধরা যাবে। এই নীতি থেকেই সরকারের বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে সুর চড়াতে শুরু করেছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবু।
তাঁদের আমলে নানা কাজে ঘাটতির অভিযোগ অস্বীকার করছেন না প্রাক্তন স্বাস্থ্য ও পঞ্চায়েতমন্ত্রী সূর্যবাবু। নেতাজি ইন্ডোরে মুখ্যমন্ত্রীর পঞ্চায়েতি রাজ সম্মেলনের অব্যবহিত পরেই রাস্তার উল্টো দিকে বিধানসভা ভবন চত্বরে তিনি বলেছেন, “আমাদের সময়ে কী হয়েছিল, বারবার বলেছি। যা হয়েছে, সেটা পর্যাপ্ত বলে মনে করি না। মানতে অসুবিধা নেই। যেটুকু করেছিলাম, ভেঙে ফেলছেন ওঁরা। কৃষি, পঞ্চায়েত, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শিল্প সর্বত্রই এ-ই হচ্ছে। সব মিলিয়ে রাজ্য সম্পর্কে একটা ভেঙে পড়ার বার্তা যাচ্ছে।”
বস্তুত, রাজ্য সম্পর্কে এই ‘নেতিবাচক বার্তা’র প্রশ্নই এখন সিপিএমের কাছে পাল্টা ‘রাজনৈতিক হাতিয়ার’। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পঞ্চায়েত, নানা ক্ষেত্রেই এই ‘অর্জিত সাফল্যকে ভেঙে ফেলা’র কথা বলেই পরিবর্তিত জমানার ৮ মাসের মাথায় সুর চড়াতে শুরু করেছে সিপিএম। জেলা সম্মেলনগুলিতে জনসমাবেশ দেখে তাদের ‘উৎসাহ’ বেড়েছে। কলকাতায় সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির চলতি বৈঠকেও রাজ্যের পরিস্থিতি সম্পর্কে এই রিপোর্টই দিয়েছেন সূর্যবাবু, দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুরা। বিরোধী দলনেতা যেমন বিভিন্ন ক্ষেত্রে ‘গণতান্ত্রিক অধিকার’ লঙ্ঘনের কথা বৈঠকে উল্লেখ করেছেন। মহাকরণ থেকে মুখ্যমন্ত্রী-সহ রাজ্যের মন্ত্রীদের মন্তব্য কেমন ভাবে অশান্তিতে ‘ইন্ধন’ জোগাতে সাহায্য করছে, সেই কথাও বলেছেন। বিমানবাবু আবার সাংগঠনিক পর্যায়ে জেলা সম্মেলনগুলির মাধ্যমে নতুন করে মানুষের কাছে যাওয়া এবং তাঁদের সাড়া পাওয়ার কথা বলেছেন বলে সিপিএম সূত্রের খবর। সূর্যবাবু অবশ্য কেন্দ্রীয় কমিটির আলোচনা নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে তাঁরা বৈঠকে কী আলোচনা করছেন, এই প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সূর্যবাবু বলেছেন, “অত বড় মহাপুরুষকে নিয়ে এই কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে আলোচনার কিছু নেই!”
ঘটনাপ্রবাহ এবং সে সব সামাল দিতে রাজ্য সরকারের ‘অদক্ষতা’ই যে সিপিএমের ‘উৎসাহ’ বাড়াচ্ছে, তার প্রমাণ মিলেছে এ দিনই। ডায়মন্ড হারবারে ছাত্র-হত্যার খবর পেয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক ছেড়েই এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন সূর্যবাবু। তাই বলে রাতারাতি পরিস্থিতি ‘ঘুরে যাবে’ বলে অবশ্য সিপিএম মনে করছে না। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, “যারা এখন রাজ্যে ক্ষমতায়, তাদের সরকার চালানোর কোনও পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। ফলে পরিস্থিতি সামাল দিতে তারা সমস্যায় পড়ছে। এর জন্য আরও সময় লাগবে। কিন্তু সরকারে এসেই তারা যে ভাবে বলতে শুরু করেছে আমরা সব করে দিয়েছি, প্রতিবাদের জায়গাটা সেখান থেকে তৈরি হচ্ছে।” মহাকরণে গিয়ে শুরু থেকেই মমতা বিরোধীদের ‘চুপ’ করে থাকতে বলছেন। কিন্তু এখন স্বাস্থ্য ও পঞ্চায়েত নিয়ে শোরগোল হতেই সূর্যবাবুর বিরুদ্ধে ‘ব্যক্তিগত আক্রমণ’ শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে, স্বাস্থ্য ও পঞ্চায়েতমন্ত্রী হিসাবে দু’টি দফতরকে লাটে তুলে দেওয়ার পরে এখন আর তাঁর সমালোচনার অধিকার নেই। তাঁর পরিবার ও ঘনিষ্ঠ লোকেদের ‘দুর্নীতি’র অভিযোগও সামনে আনা হচ্ছে। খোদ সূর্যবাবু কী বলছেন? তাঁর জবাব, “কী রকম সরকার, যারা ফাইল হারিয়ে ফেলে? খালি বলে, তদন্ত হলে সব বেরোবে। বেরোচ্ছে না কেন? বসে আছি তো!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.