ডায়মন্ড হারবারের পঞ্চগ্রামে স্কুলছাত্র মাসুদ হোসেন লস্কর খুনের ঘটনায় রাজনৈতিক চাপান-উতোর শুরু হয়েছে। তাতে বাড়তি মাত্রা যোগ হয়েছে বুধবার দুপুরে পাশের চৌসা গ্রাম থেকে মোয়াজ্জেম শেখ (৪০) নামে এক কংগ্রেস সমর্থকেরও রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হওয়ায়।
মাসুদ খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত, স্থানীয় বাসুলডাঙা পঞ্চায়েতের কংগ্রেস উপপ্রধান হাফিজুদ্দিন মোল্লার আত্মীয় হলেন মোয়াজ্জেম। নিহত ছাত্র মাসুদের বাবা ইলিয়াস লস্কর-সহ তাঁর পরিবারের সকলের বিরুদ্ধে থানায় ছেলেকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন মোয়াজ্জেমের বাবা আনোয়ার আলি শেখ। দু’টি খুনের ঘটনায় কংগ্রেস ও সিপিএম যেমন পরস্পরের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছে, তেমনই জড়িয়ে গিয়েছে তৃণমূলের নাম। |
বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন বলেন, “বিধানসভার ভিতরে ও বাইরে আমরা মাসুদ-খুনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাব।” এ দিন সকালে সূর্যবাবুর নেতৃত্বে মাসুদদের বাড়িতে যান সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী, ডায়মন্ড হারবারের প্রাক্তন সাংসদ শমীক লাহিড়ি প্রমুখ নেতারা। মাসুদের বাবা সূর্যবাবুকে বলেন, “সিপিএম করি বলেই আমাদের উপরে এই আক্রমণ চালিয়েছে তৃণমূল ও হাফিজউদ্দিনের দলবল। ওরাই আমার ছেলেকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করে খালে ফেলে দেয়।” তাঁর আরও অভিযোগ, “উপপ্রধানের বাড়ির কাছেই পুলিশ ক্যাম্প। পুলিশ সব জেনেও ব্যবস্থা নেয়নি। পুলিশ তৎপর হলে হয়তো ছেলেকে বাঁচানো যেত।”
এর পরেই সূর্যবাবুর অভিযোগ, “ওরা (তৃণমূল) বিধানসভা ভোটের পর থেকে সন্ত্রাস চালাচ্ছে। সিপিএম সমর্থকদের বাড়িঘর ভাঙচুর করছে। বারুইপুরে গিয়ে দু’দিন আগে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আই ক্যান বি ডেঞ্জারাস’! কতটা বিপজ্জনক ওঁরা হতে পারেন, সেটা আজ প্রত্যক্ষ করলাম। মুখ্যমন্ত্রী যদি এ কথা বলতে পারেন, তা হলে এরা কী করবে? প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে কেউ এ ধরনের কাজ করতে পারে?”
সোমবার থেকে নিখোঁজ মাসুদের ক্ষতবিক্ষত দেহ বুধবার এলাকার একটি খাল থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশি ‘নিষ্ক্রিয়তা’র অভিযোগ তুলেছেন সূর্যবাবুও। তাঁর দাবি, “পুলিশ সময়ে হস্তক্ষেপ করলে ছেলেটিকে বাঁচানো যেত। তার বাবা পুলিশের গাড়ির চালক। অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও কোনও ‘অদৃশ্য হাত’ ছিল বলে পুলিশ এগিয়ে আসেনি।”
দলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল বিধায়ক দীপক হালদার। তিনি বলেন, “ছাত্র খুন হওয়া দুঃখজনক। কিন্তু সিপিএমই এলাকায় সন্ত্রাস চালাচ্ছে। ছাত্র খুনের ঘটনায় আমাদের কেউ জড়িত নন। প্রশাসন নিরপেক্ষ ভাবে তদন্ত করুক।” মাসুদ খুনের প্রতিবাদে ও দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে মহকুমাশাসকের অফিসের সামনে এ দিন দীপকবাবুর নেতৃত্বে বিক্ষোভও দেখায় তৃণমূল। দীপকবাবুর পাল্টা অভিযোগ, “আমাদের জোটসঙ্গী কংগ্রেসের সমর্থক খুনের পিছনে সিপিএমই রয়েছে। ছাত্র খুনের বদলা নিতেই মোয়াজ্জেমকে খুন করা হয়েছে।” একই অভিযোগ জেলা কংগ্রেস নেতা বিজন পাত্রের। সিপিএম অভিযোগ মানেনি। মাসুদের বাবাও বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।” কোনও খুনের ঘটনাতেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ ধরা পড়েনি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) কঙ্করপ্রসাদ বারুই বলেন, “দু’টি খুনের মামলা দায়ের করেছে। সমস্ত অভিযোগই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ঠিক নয়।” |