দক্ষিণ ২৪ পরগনার সংগ্রামপুরে চোলাই মদ খেয়ে মৃতদের পরিজনকে ক্ষতিপূরণের প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা দেওয়া হবে ‘দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু’র ত্রাণ তহবিল থেকে। জেলাশাসককে সেই মর্মেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মগরাহাটের ওই বিষমদ-কাণ্ডে মৃত ১৭২ জনের পরিবারপিছু দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা গত ১৫ ডিসেম্বর ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতো বুধবার ৩ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসককে পাঠিয়ে দিয়েছে সরকার। জেলাশাসক নারায়ণস্বরূপ নিগম বৃহস্পতিবার বলেন, “নির্দেশটি পেয়েছি। দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণের খাত থেকে এই টাকা দেওয়া হবে।”
এত দিন বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়, নৌকাডুবি, অগ্নিকাণ্ড, বাস দুর্ঘটনা, সাপের কামড় বা বজ্রপাতের মতো কিছু ক্ষেত্রে প্রাণহানি বা আঘাতপ্রাপ্তির ঘটনায় রাজ্য সরকার ওই ত্রাণ তহবিল থেকে ক্ষতিপূরণ মিটিয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে এই তহবিল ব্যবহার করা যায়, তার তালিকাও রয়েছে রাজ্যের হাতে। কিন্তু চোলাই খেয়ে কেউ মারা গেলে কোন তহবিল থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, সে সম্পর্কে কোনও নির্দেশিকা নেই।
তাই মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে কোন খাত থেকে এই টাকা দেওয়া হবে তা নিয়ে প্রশাসনের কর্তারা ধন্ধে পড়ে যান। তাঁদের একাংশের বক্তব্য: এর আগে রাজ্যে চোলাই মদে মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নজির নেই। শেষে দেখা যায়, ‘দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু’র তালিকায় বিভিন্ন দুর্ঘটনা ছাড়াও ‘অন্যান্য’ বলে একটি বিষয় রাখা আছে। কর্তারা স্থির করেন, বিষমদ-কাণ্ডকে সেই ‘অন্যান্য’ বিষয়ের মধ্যে রেখে তার ক্ষতিপূরণকে ‘দুর্ঘটনাজনিত ত্রাণ তহবিলের’ আওতায় আনা হবে।
মহাকরণ সূত্রের খবর: গত ১৮ জানুয়ারি রাজ্য সরকারের অফিসার অন স্পেশ্যাল ডিউটি এবং এক্স-অফিসিও ডেপুটি সেক্রেটারি অমিত চৌধুরী দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসককে একটি চিঠি (নম্বর: আর এল/৩৩১-এফ আর/৪পি-১০/১১) দিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, উস্তি থানার সংগ্রামপুরে বিষমদ খেয়ে মৃত ১৭২ জনের পরিবারপিছু এককালীন দু’লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়ার জন্য মোট ৩ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দের অনুমতি দিয়েছেন রাজ্যপাল। ক্ষতিপূরণ পাবেন মৃতদের নিকট আত্মীয়েরাই।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ক্ষতিপূরণের টাকা মেটানোর পাশাপাশি জেলা প্রশাসনকে রাজ্য সরকারের কাছে দাখিল করতে হবে চারটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মৃতের নাম-ঠিকানা, সংশ্লিষ্ট নিকটাত্মীয়ের নাম, মৃত্যুর সঠিক কারণ ও তারিখ এবং ময়না-তদন্তের তারিখ। এক স্বরাষ্ট্র-কর্তা জানাচ্ছেন, মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে হলে ভিসেরা-রিপোর্ট দরকার। কিন্তু যে হেতু এত জনের ভিসেরা-রিপোর্ট দ্রুত পাওয়া সম্ভব নয়, তাই ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টের ভিত্তিতেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
রাজনৈতিক নেতারা কী বলছেন?
সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী কাকে কোন তহবিল থেকে টাকা দেবেন, তা নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। তবে রাজ্যে বিভিন্ন জায়গায় যে সব কৃষক ফসলের দাম না-পেয়ে আত্মহত্যা করছেন, তাঁদের পরিবারকেও ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত।” মগরাহাট (পশ্চিম)-এর তৃণমূল বিধায়ক গিয়াসউদ্দিন মোল্লার মন্তব্য, “মানবিক কারণেই ওই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। কোন খাত থেকে, তা প্রাসঙ্গিক নয়।” |