লছিমন-সহ বিভিন্ন বেআইনি যান চলাচলের বিরোধিতা করে গত বছরের শেষের দিকে মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়ে বাস ধর্মঘট পালিত হয়। সেই সময়ে ১৫ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আশ্বাস দিলেও লছিমন চলাচলে জেলাপ্রশাসন যে লাগাম টানেনি, তার প্রমাণ রবিবার কাটোয়া-আজিমগঞ্জ শাখার জিবন্তি হল্ট স্টেশনের কাছে আপ পুরী-কামাখ্যা এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্ঘটনা। ওই দিন দুপুর ১২টা নাগাদ একটি প্রহরাবিহীন লেভেল ক্রসিং পার হওয়ার সময়ে রেললাইনের উপরে যন্ত্রচালিত লছিমন চলে আসে। সেই সময়ে পুরী-কামাখ্যা এক্সপ্রেস ট্রেনটি অত্যন্ত দ্রুত গতিতে এসে ধাক্কা মারলে লছিমনটি ভেঙে গিয়ে রেললাইন থেকে দূরে ছিটকে পড়ে। তার আগে লছিমন ভ্যানে চালক-সহ চার জন আরোহী লাফিয়ে পড়ে প্রাণে বাঁচে। ওই ঘটনায় ইঞ্জিনের ‘প্রেশার পাইপ’ ফেটে যাওয়ায় ট্রেনটি ঘটনাস্থলে ঘন্টা দুয়েক দাঁড়িয়ে থাকে। পরে আজিমগঞ্জ জংশন থেকে অন্য একটি ইঞ্জিন নিয়ে আসার পরে ট্রেনটি ছেড়ে যায়। ওই ঘটনার জেরে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়।
জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক তপন অধিকারী বলেন, “প্রশাসন যে আশ্বাস দিয়েছিল, তা যে মানেনি, তা তো অনেকদিন থেকেই দেখছি। আগে গ্রামের রাস্তায় লছিমন চলত। প্রশাসনের উদাসীনতায় এখন তা রাজ্য সড়ক ও জাতীয় সড়ক ধরে যাত্রী বোঝাই করে বহরমপুর শহরে ঢুকছে। লছিমনে রাশ টানার কোনও চেষ্টাই প্রশাসন করছে না।” তপনবাবুর কথায়, “জিবন্তিতে বড় ধরনের ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে গেলে লছিমনের কারণেই হত। তার পরেও পুলিশ বা প্রশাসনের হুঁশ ফেরেনি।” যদিও অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) অজয় ঘোষ বলেন, “লছিমনের কোনও আইনি স্বীকৃতি নেই। কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে সরকারি ক্ষতিপূরণেরও কোনও ব্যবস্থা নেই। বেআইনি লছিমন অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং সেই মতো জেলাপ্রশাসন ব্যবস্থাও নিচ্ছে।” কিন্তু জেলার সব রাস্তায় বাস চলে না। সে ক্ষেত্রে ওই সব রাস্তার যাত্রীরা অনেক সময় লছিমনের উপরেই নির্ভর করতেন ও করেন। সেক্ষেত্রে তাঁদের কী হবে? বাসযাত্রী সমিতির জেলা সম্পাদক সমরেন্দ্র ভট্টাচার্য বলেন, “জেলার সমস্ত রুটে বাস চলাচল করে না। তার উপরে যত সংখ্যক মানুষ লছিমনের উপরে নির্ভরশীল, সেই তুলনায় বাসের সংখ্যা নগন্য। ফলে লছিমনে চড়তে বাধ্য হন একশ্রেণির যাত্রী।” আর সেই কারণেই লছিমন বন্ধ হয়েও হচ্ছে না মনে করা হচ্ছে। সমরবাবুর কথায়, “রাজ্য সড়ক মোড়ে নেমে প্রত্যন্ত গ্রামে যেতে হলে আমাকে লছিমনেই উঠতে হয়। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে লছিমনে করেই হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ যেতে হয়।” তপনবাবু কিন্তু বলেন, “লছিমনের জন্য টাঙা চালক থেকে রিকশা ও ভ্যান চালকদের রুজি-রোজগারে যে টান পড়েছে, সেক্ষেত্রে কী হবে? আর যাঁরা বলছেন বাসের সংখ্যা নগন্য তাঁদের জন্য বলি, জেলার সমস্ত রুটে আগে যেখানে ১০-১২টি বাস চলত, সেই সব রুটে এখন ৫০-৬০টি বা চলাচল করে। আশির দশকে ইসলামপুর রুটে ১১০ বার বাস চলাচল করত, এখন সেখানে ৪০০ বার বাস যাতায়াত করে থাকে।” তাঁর কথায়, “সরকারি সমস্ত নিয়ম মেনে আমরা বাস চালাব আর অন্য পক্ষ বেআইনি ব্যবস্থা চালু রেখে মুনাফা লুটবে, তা মেনে নেওয়া যায় না।” |