সরকারের বেঁধে দেওয়া সহায়ক মূল্যেই ধান বিক্রি করেছিলেন তাঁরা। শিবির করে সেই ধান কিনে সঙ্গে সঙ্গেই চেক লিখে দিয়েছিল স্থানীয় চালকল।
এ পর্যন্ত ঠিকই ছিল। গণ্ডগোল বাধল সেই চেক ব্যাঙ্কে জমা দিলে। মুর্শিদাবাদের ভরতপুর ১ ব্লকের বেশ কয়েক জন চাষির অভিযোগ, ভরসা করে সরকার অনুমোদিত চালকলকে ধান বিক্রি করে ব্যাঙ্কে গিয়ে তাঁরা শোনেন, ‘চালকলের অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় বাউন্স করেছে চেক!’ সাগরদিঘির রতনপুরেও জনা দশেক চাষির চেক ‘বাউন্স’ হয়েছে বলে অভিযোগ। খাদ্যমন্ত্রীর আশ্বাস সত্ত্বেও সহায়ক মূল্যে ধান কেনার মতো পর্যাপ্ত টাকা রাজ্য সরকারের আছে কি না, সেই প্রশ্ন উস্কে দিয়েছে এই ঘটনা। চালকল চেকের টাকা উসুল করে সরকারের থেকেই। সরকারি টাকার জোগান ঠিক না থাকায় চালকল অনেক পরের তারিখের, ‘পোস্ট ডেটেড’ চেক দিচ্ছে বলে আগেই অভিযোগ উঠছিল। এ বার ‘চেক বাউন্স’ করায় বিরোধীদের সমালোচনার সুযোগ আর বাড়লল।
বিষয়টি যে চাষিদের আরও দ্বিধাগ্রস্ত করতে পারে, তা মেনে নিয়ে বড়ঞার বিডিও সুব্রত মহান্তি বলেন “চাষিদের থেকে সরকারি দরে ধান কেনার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, এই ঘটনায় তা নিয়ে সংশয় তৈরি হল। চাষিদের কাছে ভুল বার্তা গেলে তাঁরা সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে ভরসা পাবেন কেন? গোটা প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে।” জেলা খাদ্য দফতর অবশ্য চালকল কর্তৃপক্ষকে ‘সতর্ক’ করেই দায় সেরেছে। জেলা খাদ্য ও সরবরাহ আধিকারিক সমীর দেবের আশ্বাস, “সতর্ক করার পাশাপাশি ফের এমন ঘটলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে চালকলটিকে জানানো হয়েছে।”
খাদ্য দফতর সূত্রের খবর, গত ডিসেম্বরে ভরতপুরের শাবলপুর পঞ্চায়েত এলাকায় শিবির করে ধান কেনা শুরু করে চালকলটি। ২৩ ডিসেম্বর তারা ৭২ জন চাষির থেকে সাড়ে চারশো কুইন্টাল ধান কেনে। ধান বিক্রি বাবদ স্থানীয় চাষি নবি নওয়াজ ৭০৭৪ টাকার, কৈলাসপতি ঘোষ ৫৭৪৬ টাকার, সাফায়েত হোসেন ৫৭৩৫ টাকার, দিনেশ ভট্টাচার্য ৫৭৫৬ টাকা এবং ইসমাইল শেখ ৫৬৩৮ টাকার চেক পান। তাঁরা চেক একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে জমা দিয়েছিলেন। চলতি মাসের মাঝামাঝি ব্যাঙ্ক জানায়, চেক ‘বাউন্স’ করেছে। এর পরেই তাঁরা ব্লক প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
ওই চালকলের মালিক আকাশ দাসের বক্তব্য, “অধিকাংশ চাষিকে বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্কের চেক দেওয়া হয়। একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ১ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয় বাকিদের। কিন্তু ওই অ্যাকাউন্টে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা ছিল। তাই কয়েক জনের চেক বাউন্স করে। ওঁদের নগদে টাকা দিয়েছি।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের টিপ্পনী, “রাজ্য সরকার যে হাতে টাকা না নিয়েই ধান কিনতে নেমে পড়েছে, তার প্রমাণ মিলল।” জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত সাহা পাল্টা বলেন, “সিপিএম রাজ্যকে দেউলিয়া করে দিয়েছে। তবু আমাদের সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করছে চাষিদের পাশে দাঁড়ানোর। কিন্তু ওঁদের সেটাও সহ্য হচ্ছে না।” |