রাজনৈতিক খসড়া
সংগঠনে ক্ষয়, বৈঠকে ‘সমালোচিত’ কারাট
লের রাজনৈতিক খসড়া চূড়ান্ত করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে কার্যত ‘সমালোচনা’র শিকার হলেন দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যের একাংশের মতে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ‘সঠিক’ রাজনৈতিক কর্মসূচি নিতে না পারায় সাংগঠনিক ভাবে দলের শক্তি ক্রমেই কমছে।
সদস্যদের একাংশের মতে, শুধু পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরলে পরাজয় নয়, ত্রিপুরা বাদে সব রাজ্যেই সিপিএমের সাংগঠনিক শক্তি ক্রমেই গত চার বছরে কমেছে। এই প্রেক্ষাপটকে মাথায় রেখে এমন রাজনৈতিক প্রস্তাব গ্রহণ করতে হবে, যাতে দলের ‘ক্ষয়’ রুখে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি সম্ভব। আলিমুদ্দিনে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের তৃতীয় দিন ওই দাবি তুলেছেন একাধিক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
সোমবার, বৈঠকের প্রথম দিনে খসড়া রাজনৈতিক প্রস্তাব পেশ করে কারাট জানিয়েছিলেন, কংগ্রেস ও বিজেপির বিরোধিতার পাশাপাশি তৃতীয় ফ্রন্ট গড়ার কোনও কর্মসূচি দল নিচ্ছে না। বরং কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক নীতির বিরোধিতা করে বিভিন্ন রাজ্যে বাম-গণতান্ত্রিক জোট গড়ে তোলার চেষ্টা করা হবে। খসড়া প্রস্তাবের উপরে আলোচনা করতে গিয়ে অসমের নরুল হুদা, ঝড়খন্ডের জ্ঞানশঙ্কর মজুমদার, বিহারের বিজয়কান্ত ঠাকুর প্রমুখ বলেন, এমন ভাবে দলের রাজনৈতিক নীতি নির্ধারণ করতে হবে যাতে সংগঠনের বিস্তার সম্ভব। কিন্তু গত চার বছরে তা হয়নি। তাঁদের মতে, বুর্জোয়া পার্টিগুলির প্রচারে মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছেন। কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টির রাজনৈতিক নীতিও এমন ভাবে নেওয়া উচিত, যাতে আরও বেশি করে মানুষকে সঙ্গে পাওয়া যায়। ওই তিন রাজ্যেই এক সময়ে সিপিএমের যথেষ্ট প্রভাব থাকলেও বর্তমানে তা নেই। উত্তরপ্রদেশে দল কী করবে, তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। কারণ, এই রাজ্যেও দলের অবস্থা খুবই করুণ। রাজনৈতিক খসড়া প্রস্তাব এবং মতাদর্শগত দলিল আজ, শুক্রবার কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের শেষ দিনে চূড়ান্ত হওয়ার পরে আগামী সপ্তাহে তা দিল্লিতে প্রকাশ করা হবে। দলের লোকাল কমিটি থেকে রাজ্যস্তর পর্যন্ত রাজনৈতিক খসড়া প্রস্তাবের উপরে আলোচনার পরে ‘আপত্তি’ বা ‘সংযোজন’ দিতে পারবেন দলের সদস্যরা। তারপরে পার্টি কংগ্রেসে তা পেশ করা হবে।
তবে মতাদর্শগত দলিল প্রকাশের পরে দলের বাইরেও ‘বাম মনোভাবাপন্ন’ মানুষ তাঁদের মতামত জানাতে পারবেন। কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে কারাট বলেন, তাঁরা ‘অচেনা পথে’ চলছেন। বর্তমানে লাতিন আমেরিকার বামপন্থী দলগুলির সরকার ও তাদের কর্মসূচিকে সামনে রেখে মতাদর্শগত দলিলে কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে যে কেউ তাঁর মতামত জানাতে পারেন। তা নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আলোচনা করবেন। যদি সেই মত (দলের বাইরের কোনও ব্যক্তির) গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়, তা হলে তা গ্রহণ করা হবে বলেও কারাট জানিয়েছেন। এটি অবশ্য নতুন নয়। অতীতেও হয়েছে। ১৯৯২ সালে সোভিয়েতের পতনের পরে মতাদর্শ দলিলের কিছু প্রসঙ্গকে উত্থাপন করে নতুন দলিল তৈরি করা হয়। সেই দলিল পড়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দ্রকুমার গুজরাল তাঁর মতামত জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, প্রয়োগের কিছু ভুলে সোভিয়েতে সমাজতন্ত্রের পতন হয়েছে। একদা সোভিয়েত-ঘনিষ্ঠ গুজরাল কিন্তু সিপিএমের সদস্য ছিলেন না। দল গুজরালের মত গ্রহণ করেছিল। এ বারও তেমন কোনও মতামত এলে সিপিএম নেতৃত্ব তা গ্রহণ করতে পারেন। ১৯৬৪ সালে কমিউনিস্ট পার্টির বিভাজনের পর ১৯৬৮ সালে বর্ধমান প্লেনামে সিপিএমের মতাদর্শগত দলিল তৈরি হয়। সেই দলিল তৈরির সময় সিপিএমের সামনে ছিল সোভিয়েত রাশিয়ার অভিজ্ঞতা। কিন্তু সোভিয়েতের পতনের পরে মতাদর্শগত দলিল নিয়ে কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ায় ১৯৯২ সালে চেন্নাই পার্টি কংগ্রেসে মতাদর্শগত দলিলের কিছু প্রসঙ্গ নিয়ে নতুন দলিল তৈরি করে সিপিএম। তাও সম্পূর্ণ ছিল না। বিগত ২০ বছরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নানা পরিবর্তন এসেছে। তার পরিপ্রেক্ষিতেই নতুন দলিল তৈরি করা হচ্ছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.