|
|
|
|
কারাটের ‘সেনাদের’ নিয়ে প্রশ্ন সেই বঙ্গ ব্রিগেডেরই |
সন্দীপন চক্রবর্তী • কলকাতা |
শুধু রণকৌশল নয়। আগামী দিনের সৈনিক কারা হবেন, সেই প্রশ্নেও জোর বিতর্ক বেধেছে সিপিএমে!
দলের দুই শীর্ষ কমিটি পলিটব্যুরো এবং কেন্দ্রীয় কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটের অনুগামীরাই ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ’। কোঝিকোড়ে আসন্ন পার্টি কংগ্রেস থেকে কারাটেরই তৃতীয় বারের জন্য সাধারণ সম্পাদক হওয়ার সম্ভাবনা। তবে তার আগেই দলের শীর্ষ স্তরে কারাট নিজস্ব ঘুঁটি সাজানোর চেষ্টা করছেন বলে সিপিএম সূত্রের খবর। তা নিয়েই বিতর্ক বাড়ছে। এবং পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকার থাকাকালীন অনেক বিষয়ে যেমন হত, এ ক্ষেত্রেও কারাট-শিবিরের সঙ্গে দলের অন্দরে লড়াই লাগছে বঙ্গ ব্রিগেডের!
সিপিএম সূত্রের খবর, পলিটব্যুরো এবং কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তত এমন দু’জনকে কোঝিকোড় পার্টি কংগ্রেসে ছাড়পত্র দিতে চাইছেন কারাট, যাঁদের ভূমিকা নিয়ে দলের অন্দরেই বহু প্রশ্ন আছে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে কারাট আনতে চাইছেন তাঁর ‘অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ’ তথা তাত্ত্বিক নেতা প্রসেনজিৎ বসুকে। পশ্চিমবঙ্গের সিপিএমকে ‘সংশোধনবাদী’ বলে কটাক্ষ করা থেকে শুরু করে আলিমুদ্দিনের কট্টর সমালোচনার জন্যই প্রসেনজিৎ এ কে জি ভবনে পরিচিত। পাশাপাশিই, পলিটব্যুরোয় নতুন মুখ হিসাবে সুভাষিনী আলির নাম দলীয় মহলে ঘোরাফেরা করছে। যিনি কারাট-দম্পতির ‘কাছের লোক’ বলে পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গের এক প্রাক্তন সাংসদকে পলিটব্যুরোয় নিয়ে যাওয়ার জন্য আলিমুদ্দিনের যাত্রাভঙ্গ করতেই হিন্দি বলয়ের ওই নেত্রীর নাম কারাট-শিবির সামনে আনছে বলে সিপিএমের একাংশের ব্যাখ্যা। যার জেরে দ্বন্দ্ব বাড়ছে। বলাই বাহুল্য, পার্টি কংগ্রেসের আগে কোনও নামই অবশ্য চূড়ান্ত নয়।
এর মধ্যে আপত্তি অনেক বেশি প্রবল প্রসেনজিৎকে নিয়ে। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসাবেই কারাটের চোখে পড়েছিলেন তিনি। কারাটই তাঁকে তুলে এনে এ কে জি ভবনে পার্টি কেন্দ্রে বসিয়েছেন, অর্থনীতি সংক্রান্ত বিভাগের দায়িত্ব দিয়েছেন। সাধারণ সম্পাদকের ‘শিষ্য’ হিসাবেই সিপিএমের তাত্ত্বিক মুখপত্রে নিয়মিত লেখেন তিনি। তাঁর স্ত্রীও দলের দিল্লি রাজ্য কমিটির সদস্য। গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রায় এক মাসের জন্য প্রসেনজিৎকে পশ্চিমবঙ্গে পাঠিয়েছিলেন কারাট। উদ্দেশ্য ছিল দলের বিধায়কদের অর্থনীতির ‘ক্র্যাশ কোর্স’ করানো। তার ফল যে কী হয়েছে, আলিমুদ্দিন হাড়ে হাড়ে জানে! সিপিএমের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তাঁর পরিচয় আলিমুদ্দিন-বিরোধী হিসাবেই। স্বভাবতই, বঙ্গ ব্রিগেড মনে করছে, কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিজের দল আরও ভারী করতে এবং আলিমুদ্দিনকে আক্রমণ করানোর ‘ঘুঁটি’ হিসাবেই প্রসেনজিৎদের সামনে আনতে চাইছে কারাট-শিবির।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, বঙ্গ ব্রিগেডের ‘ঘনিষ্ঠ’ নেতা হিসাবে পরিচিত পলিটব্যুরোর সদস্য সীতারাম ইয়েচুরির প্রভাব দলের যুব ও ছাত্র ফ্রন্টে তুলনামূলক ভাবে বেশি। তাই দলের একাংশের মত, কারাট-শিবির অন্য ফ্রন্টগুলিকে বেছে নিতে চাইছে ইয়েচুরি-শিবিরকে কোণঠাসা করার জন্য। ঠিক যে ভাবে সেই জেএনইউ-সংযোগে কারাটরা কৃষক সভার যুগ্ম সম্পাদক করেছেন বিজু কৃষ্ণনকে। সিপিএমের এক কেন্দ্রীয় নেতার প্রশ্ন, “আন্দোলনের অভিজ্ঞতা নেই, জনভিত্তি নেই। শুধু ক্যাম্পাস-রিক্রুট করে দল কি এগোতে পারবে?”
বর্ষীয়ান শ্রমিক নেতা মহম্মদ আমিন এ বারের পার্টি কংগ্রেসে পলিটব্যুরো থেকে ‘অব্যাহতি’ নিতে চান বলে দলীয় সূত্রের ইঙ্গিত। সেই জায়গায় সংখ্যালঘু মুখ হিসাবেই এ রাজ্যের এক প্রাক্তন সাংসদকে পাঠাতে চায় বঙ্গ সিপিএমের একটি বড় অংশ। কিন্তু সুভাষিনীর নাম সামনে এনে সেই পরিকল্পনা কারাট-শিবির ভেস্তে দিতে চাইছে বলে এ কে জি ভবনেরই একাংশের মত। হিন্দি বলয়ের মহিলা মুখ, সংখ্যালঘু এই সব ‘মাপকাঠি’কেই সুভাষিনীর পক্ষে ধরা হচ্ছে। কিন্তু কারাট-বিরোধী অংশের পাল্টা বক্তব্য, জন্মসূত্রে সুভাষিনী মোটেও সংখ্যালঘু নন। তা ছাড়া, উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বে কারাট নিজেই। তাঁর নেতৃত্বে ওই রাজ্যে সুভাষিনী দলের ভিত প্রসারে কী অবদান রেখেছেন? রাজ্য সিপিএমের এক নেতার কথায়, “শুধু তত্ত্ব বলতে পারলেই হল? জনভিত্তি নেই, মানুষকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা নেই, এমন নেতা-নেত্রীদের পদে বসিয়ে এই সঙ্কটের সময়ে দলের কী উপকার হবে? ভুঁইফোড় নেতা হলে দলের ভিতরেই গ্রহণযোগ্যতায় যে প্রশ্ন থাকে, অতীত অভিজ্ঞতাতেই তো দেখা গিয়েছে!”
ঘটনাপ্রবাহ যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে ‘মিশন কোঝিকোড়’ কার সফল হয় নজর রাখছে সিপিএম! |
|
|
|
|
|