মেদিনীপুরে মেলায় এসে খুশি অন্য জেলার হস্তশিল্পীরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
জঙ্গলমহলের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর। ইদানীং জঙ্গলমহল খানিক শান্ত থাকলেও একটা চোরা আশঙ্কা রয়েই গিয়েছে। উপরন্তু রাজ্যের মধ্যে অন্যতম ‘পিছিয়ে পড়া’ এই জেলা। লোক হবে কি না, বেচাকেনা ভাল হবে কি নাওঁদের মনে একটা সংশয় ছিলই। রাজ্য হস্তশিল্প মেলা এ বার মেদিনীপুরে হবে শুনে খানিক অস্বস্তিতেই ছিলেন বিশ্বজিৎ বিশ্বাস, দেবকুমার সরকারে মতো শিল্পীরা। শনিবার মেলা শুরু হওয়ার পরে ছ’দিন পেরিয়েছে। এ ক’দিনে মেলা ঘিরে মানুষের আগ্রহ, ভাল বেচাকেনা ওঁদের মনের সব সংশয় সরিয়ে দিয়েছে।
বিশ্বজিতের কথায়, “মেদিনীপুরের মেলায় এই প্রথম এলাম। বলতে দ্বিধা নেই, প্রথম যখন শুনি এখানে মেলা হবে, তখন ভেবেছিলাম, পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো এলাকায় ভাল মেলা হবে তো? এখানে এসে কিন্তু ভাবনাটা পাল্টে গিয়েছে। কলকাতার মেলাও বোধহয় এত ভাল হয় না।” নদিয়া জেলার এই শিল্পী বুধবার রাতে মেলার মাঠে দাঁড়িয়ে যখন এ কথা বলছেন, তখন তাঁর সামনে পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর আর বাঁকুড়া জেলার তিন সভাধিপতিগান্ধী হাজরা, অন্তরা ভট্টাচার্য আর পার্থপ্রতিম মজুমদার। সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদের আরও কয়েক জন পদাধিকারী। সরকারি এক কর্মসূচিতে যোগ দিতে বুধবার মেদিনীপুরে এসেছিলেন পার্থবাবুরা। রাজ্য হস্তশিল্প মেলা চলছে শুনে আর বসে থাকতে পারেননি। সার্কিট হাউস থেকে বেরিয়ে সোজা চলে আসেন শহরের কলেজ-মাঠে। মেলার প্রাঙ্গণে। রাত তখন সাড়ে ন’টা। মেলা প্রায় শেষ। বিক্রেতারা তাঁদের পসরা গোচ্ছাচ্ছেন। সাধারণ মানুষের ভিড় অবশ্য তখনও। যা দেখে অভিভূত সকলেই। |
রাজ্যের প্রতিটি জেলা থেকে ক্ষুদ্র-কুটির শিল্পীর দল মেদিনীপুরে এসেছে। নদিয়া, দক্ষিণ দিনাজপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া--একে একে প্রায় সব জেলার স্টলই ঘুরে দেখলেন গান্ধীবাবুরা। তারই ফাঁকে শিল্পীদের সঙ্গে কথা চলল। শুনলেন তাঁদের অভাব-অভিযোগ। নিজেদের হাতে তৈরি পসরা নিয়ে মেলায় আসা প্রত্যেকেই জানালেন, মেদিনীপুরের মতো এলাকায় এত ভাল মেলা হতে পারে বলে তাঁদের ধারণাই ছিল না। নদিয়া থেকে আসা দেবকুমার বলছিলেন, “মানুষ মাটির তৈরি বিভিন্ন জিনিস চাইছেন। আমরা দিতে পারছি না। দেওয়ালে যে সব মূর্তি ঝোলানো আছে, তারও অধিকাংশ ‘বুক’ হয়ে গিয়েছে।” তাঁর আক্ষেপ, “বিক্রি এত ভাল হবে বুঝলে আরও জিনিসপত্র নিয়ে আসতাম।”
মেলায় সবথেকে বেশি চাহিদা একটি ফুলের। দক্ষিণ দিনাজপুরের শিল্পীরা কৃষ্ণডিঙ্গা গাছের বিভিন্ন অংশ দিয়ে তৈরি করছেন এই ফুল। ২৩ জন শিল্পীর অন্যতম ঊষা বশ্যের কথায়, “ফুলের চাহিদা প্রচুর। রাতভর ফুল তৈরি করে সাজিয়ে রাখছি। দুপুর থেকে সন্ধের মধ্যেই সব ফুল শেষ হয়ে যাচ্ছে! অনেকে আজ না-পেয়ে কাল আসছেন।” মেলা থেকে সভাধিপতিরাও কিছু শিল্পদ্রব্য কিনলেন। পূর্ব মেদিনীপুরের সভাধিপতি যেমন একটি দুর্গামূর্তি কিনেছেন। যে মূর্তির মুকুটের সাজে ব্যবহৃত হয়েছে ধান। দাম ২০০ টাকা। গান্ধীবাবু বলছিলেন, “এ সব কাজ দেখে সত্যিই মুগ্ধ হতে হয়।” একই মত বাঁকুড়ার সভাধিপতির। পার্থবাবুর কথায়, “কী সুন্দর সুন্দর সব শিল্পদ্রব্য। দেখলে চোখ ফেরানো যায় না।” পুরুলিয়া থেকে আসা শিল্পীরা টুপির পসরা সাজিয়েছেন। টুপি তৈরি হয়েছে গম গাছের অংশ দিয়ে। দাম ১৩০ টাকা। যা দেখে পশ্চিম মেদিনীপুরের সভাধিপতি বলেন, “এত সূক্ষ্ম কাজ। ভাবাই যায় না।”
১৪ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে রাজ্য হস্তশিল্প মেলা। চলবে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। বাকি দিনগুলোতে ভিড় আরও বাড়বে বলেই আশাবাদী সবাই। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার জিনিসপত্র বিক্রি হচ্ছে। বুধবার রাতে সভাধিপতিদের সঙ্গেই ছিলেন জেলা শিল্পকেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার প্রহ্লাদ হাজরা। তাঁর কথায়, “মেলা ঘিরে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। বাজার ভাল থাকায় বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শিল্পীরাও খুশি। আমরাও এটাই আশা করেছিলাম।” তবে এ সব ছাপিয়েও অন্য একটা ব্যাপারে ‘তৃপ্ত’ পশ্চিম মেদিনীপুরের আধিকারিকেরা। এ জেলা সম্পর্কে অন্য জেলার শিল্পীদের ধারণাই যে পাল্টে দিয়েছে মেলা। |