আমজনতার বহু আনন্দ ও মন খারাপের সঙ্গী ‘কোডাক মোমেন্টস’। যা ফোটোফ্রেমে বন্দি থেকে বারে বারে সামনে আনে হাজারো স্মৃতিকে। আর এ বার সেই ‘কোডাক মোমেন্টস’-এর জন্মদাতাই তার ১৩০ বছরের ইতিহাস বুকে নিয়ে ‘ফ্রেমবন্দি’ হওয়ার পথে। কারণ দেউলিয়া ঘোষণার পথে হেঁটেছে ফোটোগ্রাফিক ফিল্ম তৈরির এই ঐতিহ্যবাহী মার্কিন বহুজাতিক ইস্টম্যান কোডাক। আপাতত ব্যবসা চালাতে সিটিগ্রুপ তাদের ১৮ মাসের জন্য ৯৫ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে। তবে জানানো হয়েছে, অন্য দেশের শাখাগুলি এর আওতায় পড়বে না। কোডাক ইন্ডিয়ারও দাবি, ভারতে তাদের কাজকর্ম ব্যাহত হবে না।
প্রথম হাতে ধরে ব্যবহারের ক্যামেরা যার আবিষ্কার। প্রথম চাঁদ থেকে পাঠানো ছবি বিশ্ববাসীকে দেখানোয় অন্যতম ভুমিকা যার। এমনকী আজকের ফোটোগ্রাফির দুনিয়া কাঁপাচ্ছে যে ডিজিটাল ক্যামেরা, সেটিকে প্রথম আমজনতার হাতে তুলে দেওয়ার কৃতিত্বও যে সংস্থার, জর্জ ইস্টম্যান প্রতিষ্ঠিত সেই কোডাক এ বার আরও আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তির সঙ্গে মানানোর প্রশ্নেই হোঁচট খেয়েছে। ২০০৩ থেকে ঝাঁপ বন্ধ হয়েছে ১৩টি কারখানায়। প্রবল প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে ২০০৭ থেকেই মুনাফার মুখ দেখা বন্ধ। নগদের অভাবে বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা ও পেনশন-সহ কর্মী ও অবসরপ্রাপ্তদের দায় মেটানোও হয়েছে অসম্ভব। সংস্থার সদর দফতর রচেস্টারেই কর্মী ৬০ হাজার থেকে নেমেছে ৭ হাজারে। এই অবস্থায় দেউলিয়া ঘোষণার মাধ্যমে সংস্থাকে ঘুরে দাঁড় করানোর চেষ্টাই একমাত্র পথ বলে মনে করেছেন কোডাক পরিচালন পর্ষদ, জানান চেয়ারম্যান আন্তোনিও এম পেরেজ। তাই বৃহস্পতিবার ১১ নম্বর ধারায় নিউ ইয়র্কে দেউলিয়া আদালতে এই ঘোষণা করেছে মূল সংস্থা কোডাক ও তার মার্কিন শাখাগুলি।
বস্তুত, ১১ নম্বর ধারায় দেউলিয়া ঘোষণার অর্থ, কোডাকের ব্যবসা গুটোচ্ছে না। ঋণদাতারা হাত দিতে পারবেন না সম্পদে। পেরেজের আশা, এর সাহায্যেই এ বার সংস্থার প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের পেটেন্টগুলি থেকে যতটা সম্ভব মূল্য আদায় করে ব্যবসা চালু রাখা যাবে। ব্যবসা ঘুরে দাঁড় করানোয় বিশেষজ্ঞ সংস্থা এফটিআই কনসাল্টিং-এর ভাইস চেয়ারম্যান দোমিনিক দি নাপোলি-কে মুখ্য পুনর্গঠন অফিসার রেখে এ ব্যাপারে মরিয়া চেষ্টাও চলছে। এ বার সময়ই বলবে ভবিষ্যতে ১৩০ বছরের ঐতিহ্য শুধু ফ্রেমেবন্দি ‘কোডাক মোমেন্টস’ হিসেবেই থাকবে কি না। |