|
|
|
|
বৃদ্ধা খুনে ধৃত আরও ১, পুলিশের দাবি ঘিরে প্রশ্ন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শান্তিনিকেতন |
অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষিকা রেণু সরকার খুনের ঘটনায় তারাপীঠ থেকে আটক করা তিন জনের মধ্যে মঙ্গল সাহানিকে গ্রেফতার করল পুলিশ। সেই গ্রেফতারি ও পুলিশের দাবিকে ঘিরেই উঠল একাধিক প্রশ্ন। খুনের ঘটনায় বাড়ল আরও ধোঁয়াশা।
বীরভূমের পুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনা
বৃহস্পতিবার দাবি করেন, “চুরি করতে গিয়ে বাধা পেয়েই রেনুদেবীকে খুন করেছে বলে মঙ্গল জেরার মুখে
পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। মঙ্গলের সঙ্গে অবশ্য আরও একজন ছিল। তার খোঁজ করা হচ্ছে।” বৃহস্পতিবার বোলপুরের এসিজেএম পীযূষ ঘোষ ধৃতকে পাঁচ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
কলকাতার ভবানীপুরের বাসিন্দা ওই বৃদ্ধা শুক্রবার রাতে শান্তিনিকেতনের বাড়িতে খুন হওয়ার পরে পুলিশ বাড়ির কেয়ারটেকার উজ্জ্বল তপাদারকে গ্রেফতার করেছিল। সেই সময়ও পুলিশ সুপার দাবি করেছিলেন, জেরায় তাঁদের কাছে উজ্জ্বল খুন করার কথা স্বীকার করেছেন। ওই খুনের ঘটনায় আর কেউ জড়িত আছে কি না, বা খুনের উদ্দেশ্য কী তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আবার এ দিন মঙ্গলও খুনের কথা কবুল করেছে জানানোয় নিহত বৃদ্ধার পরিবারের সদস্যদের মনেও নানা প্রশ্ন জেগেছে। পুলিশ সুপার এ দিন অবশ্য বলেন, “খুনের ঘটনায় উজ্জ্বলের ভূমিকা স্পষ্ট নয়। তাকে আরও জেরা করা হচ্ছে। মঙ্গলের সঙ্গে তার কোনও যোগ ছিল কি না, দেখা হচ্ছে।” মঙ্গল ও উজ্জ্বলকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করার কথাও পুলিশ ভাবছে। |
|
বোলপুর কোর্টে মঙ্গল সাহানি।-বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী |
মঙ্গলের দাবি, “এক সঙ্গীকে নিয়ে গত শুক্রবার রাত পৌনে দু’টো নাগাদ ওই বাড়িতে চুরি করতে ঢুকেছিলাম। লোহার রড দিয়ে গ্যারাজের পাশের কোল্যাপসিবল গেটের তালা ভাঙি। তার পরে দু’টি দরজা ঠেলে বৃদ্ধার শোওয়ার ঘরে ঢুকি। দরজা দু’টি ভেজানো ছিল। বৃদ্ধার ঘুম ভেঙে যায়। তিনি চিৎকার করে ওঠেন। আমি তাঁর মুখে রডের ঘা মারি। তিনি লুটিয়ে পড়েন।” মঙ্গল জানিয়েছে, বালিশের পাশে রাখা মোবাইল ফোন আর ব্যাগ হাতড়ে আড়াইশো টাকা বের করে তার সঙ্গী। এর পরে দু’জনে পালায়।
মঙ্গলের আরও দাবি, উজ্জ্বলকে তারা আগে থেকে চিনত। বৃদ্ধা মারা যেতে পারে এই আশঙ্কায় তারা বৃদ্ধার ফোন থেকেই উজ্জ্বলকে ফোন করে দু’বার বলেছিল, ‘মনিবের বাড়িতে চুরি হয়েছে। মনিবকে চোরেরা মেরেছে। গিয়ে দেখ।’
মঙ্গলের এই দাবিকে ঘিরেই বেশ কিছু প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশকে এত দিন এই ফোনের কথা উজ্জ্বল জানায়নি কেন? পুলিশ সূত্রেরই খবর, মঙ্গল বছর খানেক হল চুরি-ছিনতাই করত না। তারাপীঠে সব্জি বিক্রি করত। তা হলে সে হঠাৎ কেন ওই বাড়িতে চুরি করতে গেল, মেলেনি সে প্রশ্নের জবাবও। যেমন জানা যাচ্ছে না, প্রথমে উজ্জ্বল ও পরে মঙ্গল, দু’জন ধৃতের ক্ষেত্রেই পুলিশ কেন খুনের কথা কবুল করার দাবি করল। নিহত রেণুদেবীর মেয়ে অদিতি সরকার বলেন, “ওই ক’টা টাকা আর সাধারণ একটা মোবাইল ফোনের জন্য কেউ মানুষ খুন করতে পারে? তা ছাড়া ঘরে অত রক্ত কী করে এল?” তাঁর সংশয়, “যা হচ্ছে, তা সাজানো আর অবিশ্বাস্য বলেই মনে হচ্ছে। রাজ্য পুলিশের ডিজি’র সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলব।”
পুলিশের রেকর্ড থেকে জানা গিয়েছে, বোলপুরের শুঁড়িপাড়ার বাসিন্দা, বছর ত্রিশের মঙ্গল ২০০৪ সাল থেকে এলাকায় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতির অনেক ঘটনায় যুক্ত। বিশ্বভারতীর দুই বিদেশি ছাত্রের ঘর থেকে টাকা, ল্যাপটপ ছিনতাই করা থেকে এলাকায় বহু মোটরবাইক চুরির ঘটনাতেও সে অভিযুক্ত। মাঝে মধ্যে ভয় দেখানোর জন্য সে একটি পাইপগান সঙ্গে রাখত। তবে তার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আগে ওঠেনি। অনেক সময় এলাকার অপরাধীদের গতিবিধি জানার জন্য পুলিশ তার কাছে খোঁজও নিত। প্রায় এক বছর আগে কেতুগ্রামে তার এক সঙ্গী খুন হয়ে যাওয়ার পর থেকেই সে বোলপুর ছেড়ে তারাপীঠে চলে যায়। |
|
|
|
|
|