এত দিন দুই গ্রামের মধ্যে যোগাযোগের উপায় বলতে ছিল একমাত্র আলপথ। তা না হলে প্রায় ৪ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে যেতে হত। এই অবস্থায় কেতুগ্রামের দুই গ্রামের মধ্যে যোগাযোগ সহজ করতে স্বেচ্ছায় জমি ও শ্রম দিয়ে রাস্তা তৈরি করলেন বাসিন্দারা। কেতুগ্রামের এহিয়াপুর গ্রাম থেকে দধিয়া গ্রাম পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার লম্বা ও ৯ ফুট চওড়া মাটির রাস্তা তৈরি করেছেন তাঁরা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দধিয়া গ্রামে রয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল। অন্য দিকে, এহিয়াপুর গ্রামে রয়েছে ডাকঘর। তাই দুই গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে রয়েছে নিত্য যাতায়াত। এছাড়া ফি-বছর মাঘ মাসে শুল্ক পঞ্চমীতে দধিয়া গ্রামে মেলা ঘিরে ভিড় জমান এহিয়াপুরের বাসিন্দারা। এই অবস্থায় একমাত্র আলপথ দিয়ে যাতায়াতে সমস্যায় পড়ছিলেন বাসিন্দারা। তাছাড়া আলপথ ব্যবহার না করলে ঘুরতে হত প্রায় ৪ কিলোমিটার রাস্তা। |
বেশ কিছু দিন ধরেই এই অবস্থার পরিবর্তন চাইছিলেন দুই গ্রামের বাসিন্দারাই। তাঁরা তৃণমূলের পালটিয়া অঞ্চল সভাপতি খায়রুল জামালের কাছে রাস্তা চওড়া করার দাবি জানান। খায়রুল বলেন, “এর পরে আমরা বাসিন্দাদের স্বেচ্ছায় জমি দিতে বলি। তাঁদের কাছে স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তাটি তৈরি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।”
অবশেষে মাস দেড়েক আগে দুই গ্রামের বাসিন্দারা যৌথভাবে আলপথটিকে চওড়া রাস্তায় পরিণত করার সিদান্ত নেন। ৪৫ জন চাষি মোট তিন বিঘা জমি দেন। প্রায় এক মাস ধরে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে মাটির রাস্তাটি তৈরি করেন ৩০০ জন বাসিন্দা। এমনকী গ্রামের বাইরে ট্রাক্টরে করে মাটি নিয়ে এলেও গাড়ির মালিকা বা চালকেরা কোনও টাকা নেননি বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। দশ দিন আগে রাস্তা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে।
এখন রোজ ওই নতুন রাস্তা দিয়েই স্কুলে যায় দধিয়া গোপাল দাস উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী ববিতা খাতুন, দশম শ্রণির আরজিনা খাতুনেরা। তারা বলে, “আমাদের আলপথ দিয়ে স্কুলে যেতে হত। আর যারা সেটা পারত না, তাদের স্কুলে যাওয়ার জন্য অনেকটা ঘুরে ঘুরে। রাস্তা তৈরি হওয়ায় এখন আর সেই সমস্যা নেই।” এহিয়াপুর গ্রামের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র দেবু ঘোষ বলে, “এখন তো এক ছুটে স্কুলে পৌঁছে যাই।” |
দধিয়া গোপাল দাস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, “এহিয়াপুর গ্রামের শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী এই স্কুলে পড়ে। বর্ষার সময় আলপথ দিয়ে আসার কারণে তাদের ছুটি দিয়ে দিতে হত। তবে এ বার সে সমস্যা মিটবে বলে আশা করা যায়।” রাস্তার জন্য স্বেচ্ছায় জমি দিয়ে খুশি এহিয়াপুরের মুকুলেশ্বর রহিম থেকে দধিয়া গ্রামের অনিল পালরা। তাঁদের কথায়, “রাস্তার অভাবে পড়ুয়াদের অসুবিধা হচ্ছিল। নিত্য যোগাযোগের ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছিল। তাই স্বেচ্ছায় জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। জমি না দিলে তো আর রাস্তা হত না!” রাস্তা তৈরির কাজে স্বেচ্ছায় হাত লাগান মিঠু মাঝি, রত্নাকর পাল, কিরণ হাজরারা। তাঁরা বলেন, “আমরা সকলেই রাস্তা তৈরি কাজে হাত লাগিয়েছিলাম বলেই আজ ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা ওই রাস্তা দিয়ে স্কুলে যেতে পারছে। সেটাই তো সবথেকে বড় আনন্দ।”
গ্রামবাসীরা স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা তৈরি করলেন, কিন্তু ১০০ দিনের প্রকল্প থেকে মাটির কাজ হল না কেন? স্থানীয় পালিটা পঞ্চায়েতের সচিব রফি আহমেদ বলেন, “আমরা সভা করে ওই রাস্তা তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিলাম। সরকারি নিয়ম মেনে গ্রামবাসীদের পঞ্চায়েতের হাতে জমি তুলে দিতে বলা হয়েছিল। তার আগেই তাঁরা রাস্তা তৈরি করে নিয়েছেন।” সিপিএম পরিচালিত ওই পঞ্চায়েত প্রধান যুথিকা দাস বলেন, “মিলিত প্রচেষ্টায় যে সব রকম বাধা অতিক্রম করা যায়, ওই দুই গ্রামের বাসিন্দারা সেটাই প্রমাণ করেছেন।”
ইতিমধ্যেই বাসিন্দারা বিডিও-র কাছে রাস্তাটিতে মোরাম দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। কেতুগ্রাম ১ বিডিও তরুণ ভট্টাচার্য বলেন, “গ্রামবাসীরা প্রশংসনীয় কাজ করেছেন। ওই রাস্তায় যাতে বর্ষার আগেই মোরাম পড়ে, তার দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে।”
|
ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়। |