সার্বিক স্বাস্থ্যবিধান প্রকল্প থমকে আরামবাগে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আরামবাগ |
সরকারি স্তরে ‘নজরদারি’ এবং ‘প্রচার’-এর অভাবে হুগলির আরামবাগ মহকুমায় ‘সার্বিক স্বাস্থ্য বিধান প্রকল্প’ থমকে গিয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সরকারি দফতরের মধ্যে চাপান-উতোরও রয়েছে।
২০০৭-’০৮ আর্থিক বছরে কেন্দ্র সরকার ‘নির্মল পঞ্চায়েত সমিতি’ হিসাবে পুরস্কৃত করেছিল আরামবাগ এবং গোঘাট-২ পঞ্চায়েত সমিতিকে। কিন্তু এখন ওই দু’টি ব্লকের তো বটেই, বাকি চারটি ব্লকের (পুড়শুড়া, গোঘাট-১, খানাকুল-১ ও ২) মোট ৬৩টি পঞ্চায়েত এলাকার অন্তত ৭০০ গ্রামের বহু বাসিন্দাই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে মাঠ-ঘাটেই যান। এ তথ্য মিলছে মহকুমা প্রশাসনের তরফেই।
কেন্দ্র সরকারের এই প্রকল্পটি চালু হয় ১৯৯৯-২০০০ সালে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রকল্পের মোট বরাদ্দের ১৫ শতাংশ চেতনা ও প্রচার কর্মসূচির জন্য। ২০০৫ সালে ‘নির্মল গ্রাম’ পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়। গোড়ার দিকে এই প্রকল্পে গতি থাকলেও কয়েক বছরের মধ্যে তা শ্লথ হয়ে পড়ে।
প্রকল্পটি থমকে যাওয়ার পিছনে বিভিন্ন ব্লকের আধিকারিকেরা জেলা প্রশাসনের ‘উদ্যোগের অভাব’ রয়েছে বলে মনে করছেন। তাঁদের মতে, জেলা প্রশাসন শুধু উপভোক্তাদের সংখ্যা নিয়ে মাথা ঘামায়। প্রকল্পের ব্যবহার নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হয় না। প্রকল্পের শুরুর সময়ে যে সব ‘মোটিভেটর’ (যাঁরা সচেতনতা বাড়ানো এবং প্রচারের কাজ করতেন) নিয়োগ করা হয়েছিল, তাঁরা শৌচাগার বসানোর পরেই চলে গিয়েছেন। নিয়মিত সংসদ ধরে সচেতনতা প্রসার নিয়ে পঞ্চায়েতগুলির যে বৈঠক করার কথা, তা নাম-কা-ওয়াস্তে হয়েছে। ২০০৫-০৬ আর্থিক বছরের পরে ওই প্রকল্প নিয়ে কোনও তদারকিই হয়নি। জেলা স্তর থেকে কার্যকরী কোনও ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি।
প্রকল্পটি মূলত পঞ্চায়েতগুলিরই দেখভাল করার কথা। কী বলছেন পঞ্চায়েত প্রধানেরা?
আরামবাগের বাতানল পঞ্চায়েতের প্রধান বনলতা পাত্র, গৌরহাটি-১ পঞ্চায়েতের পদ্মাবতী পাল, গোঘাট-২ ব্লকের কুমারগঞ্জ পঞ্চায়েতের প্রধান শ্যামাপদ মুদি প্রমুখের বক্তব্য, লোকসংখ্যা বাড়ছে। ফলে, আগের মতো দেখভাল সম্ভব হচ্ছে না। তা ছাড়া, সচেতনতা বা প্রচারের কাজে তহবিলও নেই। শুরুতে যে সব শৌচালয় হয়েছে, তার মধ্যে অনেকগুলিই এখন আর কোনও মতেই ব্যবহারযোগ্য নেই। সেগুলি মেরামত বা সংস্কারের জন্য কী করতে হবে, সে ব্যাপারেও কোনও স্পষ্ট নির্দেশিকা নেই।
সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন হুগলির অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) সৃষ্টিধর সাঁতরা। তিনি বলেন, “২০০৯ সালের পরে কাজের গতি শ্লথ হয়েছে। এখন সার্বিক স্বাস্থ্য বিধান অভিযানে গতি ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিডিওদের বলা হয়েছে কোনও পঞ্চায়েত এলাকাকে ‘নির্মল’ হিসাবে ঘোষণার পরে আরও বেশি করে কাজ করতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে হবে। আর এই কাজের জন্য পঞ্চায়েতকেই উদ্যোগী হতে হবে।”
জেলার ১৮টি ব্লকের মধ্যে এই প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি কাজ আরামবাগ মহকুমাতেই হয়েছে বলে দাবি সৃষ্টিধরবাবুর। |