শিশুদের ভিটামিন-এ তেল বাড়ন্ত হাসপাতালে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আরামবাগ ও শ্রীরামপুর |
ভিটামিন-এ তেল বাড়ন্ত হুগলি জেলার হাসপাতালগুলিতে। তার ফলে শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় এই তেল দীর্ঘদিন ধরে শিশুদের সরবরাহ করতে পারছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বিক্ষিপ্ত ভাবে জেলার কোনও কোনও হাসপাতালে অশান্তিও শুরু হয়েছে। আরামবাগ মহকুমায় গত এক বছর ধরে ভিটামিন-এ তেল খাওয়ানো যাচ্ছে না শিশুদের। হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির কর্তারা জানাতে পারছেন না, কবে তা সরবরাহ হবে। শিশুর অভিভাবকেরা প্রতি সপ্তাহে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে ফিরে আসছেন। ক্ষোভ-বিক্ষোভে জেরবার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং হাসপাতাল সুপারেরা।
আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালের সুপার নির্মাল্য রায় বলেন, “এক দিকে বিভিন্ন টীকাকরণ নিয়ে সরকারি প্রচার গ্রাম থেকে শহর অবধি ধারাবাহিক ভাবে চলছে। অন্য দিকে, গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষেধকের সরবরাহ নেই। ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে আমরা রয়েছি।” নির্মাল্যবাবুর বক্তব্য, “ওই সব প্রতিষেধক সরবরাহ করে কেন্দ্রীয় সরকার। মানুষ সে সব বুঝতে চাইছেন না। তাঁরা তোপ দাগছেন আমাদের উপর।” একই বক্তব্য আরামবাগ, গোঘাট, খানাকুলের ২টি ব্লক এবং ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকদের।
এ ব্যাপারে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (ডেপুটি ৩) প্রবীর ঘোষদস্তিদার বলেন, “আমরা বারবার কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়েছি। খুব শীঘ্রই ওই তেল পাঠানো হবে বলে আশ্বাস মিলছে। কিন্তু আশ্বাস পাওয়া গেলেও তেল পাঠানো হচ্ছে না। ফলে পরিস্থিতিও বদলাচ্ছে না।” স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ভিটামিন-এ তেল চামড়ার অসুখ এবং রাত কানা রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। শিশুর ৯ মাস বয়সে প্রথম এই তেল খাওয়াতে হয়। এর পর থেকে ৬ মাস অন্তর আরও ৮ বার এই তেল খাওয়ানো হয়।
শ্রীরামপুর মহকুমার জাঙ্গিপাড়া, চণ্ডীতলা, উত্তরপাড়া, চন্দননগর মহকুমার সিঙ্গুর, হরিপাল, তারকেশ্বর অথবা সদর মহকুমার পাণ্ডুয়া, বলাগড়, পোলবা-দাদপুর কোনও জায়গাতেই হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভিটামিন-এ তেল নেই।
শ্রীরামপুর মহকুমা হাসপাতাল ওয়ালশে ভিটামিন-এ তেল নেই গত জুন মাস থেকে। হাসপাতাল সুপার জয়ন্ত সান্যাল বলেন, “এই তেল যে নেই তা সংশ্লিষ্ট দফতরে আমরা জানিয়েছি। কিন্তু কবে আসবে, তা আমাদের অজানা।”
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞেরা জানালেন, অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভোগা শিশুদের জন্য এই তেল উপকারী। এই চিকিৎসকদের অভিমত, বেশ কিছু প্রত্যন্ত এলাকার শিশুদের এই তেল খাওয়ানো খুব জরুরি। কেননা, যে সব ক্ষেত্রে প্রসূতি নিজেই পর্যাপ্ত আহার পান না, এবং শিশু অপুষ্টিতে ভোগে, সেই সব ক্ষেত্রে ভিটামিন-এ তেল শিশুকে কিছুটা রক্ষা করতে সক্ষম।
পাণ্ডুয়া ব্লকে গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে ওই তেলের জোগান নেই। এই পরিস্থিতিতে এই ব্লকের অন্তর্গত হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি থেকে ভিটামিন-এ তেলের বিকল্প হিসেবে ফল এবং সব্জি খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাণ্ডুয়ার ব্লক মেডিক্যাল অফিসার কেয়া চট্টোপাধ্যায় বলেন, “তেলের যোগান না থাকায় আমরা বিকল্প হিসেবে শিশুকে পাকা পেঁপে বা যে কোনও হলুদ ফল এবং সবুজ শাক-সব্জি খাওয়ানোর পরিমর্শ দিচ্ছি। গাজরও এর বিকল্প হিসেবে কাজ করে।” |