সীমান্তবর্তী গ্রাম থেকে বহু কষ্টে রোগীকে নিয়ে যিনি আসছেন করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে, প্রতি পদে তাঁকে হোঁচট খেতে হচ্ছে চিকিৎসা পেতে। আর ঠিক সেখান থেকেই হাসপাতালের প্রতি ক্ষোভ বাড়ছে বলে ধারণা স্বাস্থ পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের। তাঁদের মতে, জেলার অন্য হাসপাতালগুলিতে এত প্রত্যাশার চাপ নেই, যা করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালকে বয়ে চলতে হয়। কিন্তু সেই তুলনায়, পরিকাঠামো নেই। তাই মাত্রাতিরিক্ত প্রত্যাশার চাপেই নুয়ে পড়ছে এই হাসপাতাল। মাত্রাতিরিক্ত প্রত্যাশার চাপে নুয়ে পড়ছে করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতাল।
দিন কয়েক আগে প্রসব বেদনা উঠলে করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে আসেন দাঁড়েরমাঠ গ্রামের বাসন্তি সর্দার। স্বামী কেরলে কাজ করেন। বোন আদুরি সর্দারের সঙ্গে হাসপাতালে এসে ভর্তি হওয়ার কিছু ক্ষণ পরেই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। চিকিৎসকেরা বাসন্তিদেবীকে জেলা হাসপাতালে ‘রেফার’ করলে চরম সমস্যায় পড়েন তাঁরা। জেলা হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা তো দূরের কথা, কৃষ্ণনগর পর্যন্ত যাওয়ার আর্থিক সামর্থ্যটুকুও তাঁদের নেই। শেষপর্যন্ত মুশকিল আসান করেন করিমপুরের স্থানীয় কয়েকজন যুবক। তাঁরা চাঁদা তুলে একটা গাড়ির ব্যবস্থা করে ওই প্রসূতিকে পাঠিয়ে দেন জেলা হাসপাতালে। সেখানে ওষুধপত্র কিনে দেওয়ারও ব্যবস্থা করে দেন ওই যুবকরাই। সেই রাতেই বাসন্তিদেবী এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু তেমন তো সকলের ক্ষেত্রে ঘটে না। তাই সীমান্তবর্তী এই এলাকার মানুষের কাছে এই গ্রামীণ হাসপাতালই প্রধান গন্তব্য।
ওই যুবকদের একজন মিঠু অধিকারী বলেন, ‘‘বাসন্তিদেবীর না হয় একটা ব্যবস্থা করা গিয়েছিল। কিন্তু অন্যরা? দাঁড়েরমাঠ থেকে প্রায় ১৩ কিমি দুরে করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে আসাটাই ওদের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ।” মিঠুবাবু বলেন, ‘‘বাসন্তিদেবী যখনই শুনলেন যে তাঁকে রেফার করা হচ্ছে, সেই মুহূর্তেই এই হাসপাতাল সম্পর্কে তাঁর বিশ্বাসটা ভেঙে গেল। এই কারণেই বাসন্তিদেবীর মতো অনেকেরই এই হাসপাতালের উপর প্রতিনিয়ত ক্ষোভ জমছে। বাড়ছে সাধারণ মানুষের অভিযোগও।’’
কিন্তু পরিকাঠামোগত সমস্যা তো জেলার প্রায় সব হাসপাতালেই আছে তাহলে শুধু করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের বিরুদ্ধেই এত অভিযোগ উঠছে কেন? করিমপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ শঙ্কর মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় অন্যতম কারণ, করিমপুর থেকে জেলা হাসপাতালের দূরত্ব।’’ প্রত্যন্ত এই গ্রামগুলো থেকে করিমপুরে যাওয়ারই বাস সবসময় থাকে না। করিমপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান কংগ্রেসের তারক সরখেল বলেন, ‘‘তেহট্ট, চাপড়া, বেথুয়াডহরি, কৃষ্ণগঞ্জ, নবদ্বীপ, হাঁসখালি, ধুবুলিয়া থেকে জেলা হাসপাতালের যা দূরত্ব, করিমপুর থেকে জেলা হাসপাতালের দূরত্ব তার থেকে অনেক বেশি। অন্য দিকে কল্যাণী ও রানাঘাটের চিকিৎসা পরিকাঠামো আমাদের এলাকার থেকে অনেক ভাল। তাই অবিলম্বে করিমপুর হাসপাতালকে স্টেট জেনারেল হাসপাতালে উন্নীত করা দরকার।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অমিত হালদার বলেন, ‘‘এটা ঠিক যে করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালকে ঘিরে মানুষের অনেক প্রত্যাশা আছে। সেটা যখন পূরণ হয় না, তখন একটা সমস্যা তৈরি হয়। এ ছাড়া করিমপুর থেকে জেলা হাসপাতালের দূরত্বটাও একটা বিষয়। তবে আমরাও চেষ্টা করছি অবিলম্বে করিমপুর হাসপাতালের ব্লাড স্টোরেজ চালু করে ওখানে একজন অ্যানাসথেটিস্ট নিয়োগ করে অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা চালু করতে। একজন শিশু বিশেষজ্ঞকেও ওই হাসপাতালে পাঠানো হবে।” তিনি বলেন, “তা ছাড়া করিমপুরে নিউ বর্ন কেয়ার কর্নার চালু হয়ে গিয়েছে। এ ছাড়াও করিমপুরে সিক নিউবর্ন স্টেবিলাইজেশন ইউনিট ও তেহট্টে সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট খুব শীঘ্র চালু হবে। তখন জেলা হাসপাতালে রেফারের পরিমাণ অনেক কমে যাবে। করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে আরও বেশি পরিষেবা পাবেন সাধারণ মানুষ।’’ |