আমরি-কাণ্ডে অভিযুক্ত, ওই হাসপাতালের ‘ফেরার’ তিন ডিরেক্টরের বিরুদ্ধে জারি হুলিয়া বুধবার স্থগিত করল আলিপুরের দায়রা আদালত।
এ দিন জেলা ও দায়রা আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক অসিত দে’র এজলাসে হুলিয়া জারির নির্দেশের বৈধতা চ্যলেঞ্জ করে অভিযুক্তদের তরফে আবেদন করা হয়। কোর্ট-সূত্রের খবর: মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত থেকে আমরি-কাণ্ডের মামলার নথিপত্র চেয়ে পাঠিয়েছে দায়রা আদালত। ২০ ফেব্রুয়ারি ফের ওই আবেদনের শুনানি হবে। আর তত দিন পর্যন্ত স্থগিত থাকবে হুলিয়া জারির নির্দেশ।
কলকাতা পুলিশের আবেদনের ভিত্তিতে ফেরার তিন অভিযুক্ত আদিত্যবর্ধন অগ্রবাল, প্রীতি সুরেখা ও রাহুল তোদি’র বিরুদ্ধে হুলিয়া জারির নির্দেশ দিয়েছিলেন আলিপুরের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট। ১৯ জানুয়ারির মধ্যে তাঁদের আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছিল। এ দিন আমরি-কর্তাদের আইনজীবী অমিতাভ গঙ্গোপাধ্যায় ও সেলিম রহমান অভিযোগ করেন, নিম্ন আদালতের হুলিয়া জারি আইনমাফিক হয়নি। ওঁদের যুক্তি: অভিযুক্তদের আদালতে হাজির হওয়ার জন্য মাত্র ১৩ দিন (৬-১৯ জানুয়ারি) সময় দেওয়া হয়েছে। অথচ আইনে বলা আছে, এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম এক মাস সময় দিতে হবে। তাই নিম্ন আদালতের নির্দেশটি অবৈধ বলে ওঁদের দাবি।
এ দিনের শুনানিতে সরকারপক্ষের বিশেষ কোনও আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। ফলে কার্যত একতরফাই শুনানি হয়। এবং হুলিয়ায় স্থগিতাদেশের খবর পেয়ে তদন্তকারী পুলিশের দল ও বিশেষ আইনজীবী সন্ধের মুখে আদালতে ছুটে আসেন। ওঁদেরও অনেকের বক্তব্য, হুলিয়া জারির নির্দেশ সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল ৮ জানুয়ারি। আইন অনুযায়ী, হুলিয়া প্রকাশের দিন থেকে এক মাস সময় দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে তা ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হওয়া উচিত ছিল।
এ দিকে জেল হেফাজতে থাকা আমরি-র ছয় ডিরেক্টরের জন্য প্রথম শ্রেণির বিচারাধীন বন্দির মর্যাদা চেয়ে এ দিনই আলিপুরের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট চৌধুরী হেফাজত করিমের এজলাসে আবেদন দাখিল করা হয়েছে। আদালত জানিয়েছে, ২১ জানুয়ারি এ ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হবে। অভিযুক্তদের আইনজীবী সেলিম রহমানের দাবি: কারা-বিধি মোতাবেক, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও সামাজিক মর্যাদাসম্পন্ন যে সব অভিযুক্ত উন্নতমানের জীবনযাপনে অভ্যস্ত, তাঁরা এই সুবিধা পেতে পারেন, যদি না তাঁরা দাগি আসামি বা অন্য মামলায় অভিযুক্ত হন। সেলিমের কথায়, “জেল হেফাজতে থাকা আমার মক্কেলরা একাধিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান |বা ডিরেক্টর। তাঁদের জীবনযাপন প্রণালীও অত্যন্ত উন্নত মানের। জেলে তাঁদের জন্য শুধুমাত্র লোহার খাট, মাদুর, চেয়ার-টেবিলই চাওয়া হচ্ছে।”
আবেদনের বিরোধিতা করে সরকারপক্ষের আইনজীবী শক্তি ভট্টাচার্য বলেন, আমরি-কাণ্ডের অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এখনও চার্জশিট পেশ হয়নি। তাঁদের বিরুদ্ধে আগে কোনও মামলা রয়েছে কি না, তা চার্জশিটেই উল্লেখ করবে পুলিশ। শক্তিবাবুর দাবি, অন্যান্য বন্দিদের যে সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়, তাঁরা সবই পাচ্ছেন। বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষ যে প্রথম শ্রেণির বিচারাধীন বন্দির মর্যাদা পাচ্ছেন, আমরি-কর্তাদের আইনজীবী সেই তথ্যের উল্লেখ করলে সরকারি আইনজীবী বলেন, জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী সুশান্তবাবু ওই সুবিধা পেতেই পারেন। কারণ, নির্বাচনের আগে দাখিল হলফনামায় তিনি নিজের সম্পত্তি, শিক্ষাগত যোগ্যতা, জীবনযাপন প্রণালী এবং আর্থিক বিষয়ক তথ্য জমা দিয়েছিলেন। |