চিকিৎসার পরিকাঠামো না থাকায় ব্রঙ্কো-নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত সাত মাসের এক শিশুকে কলকাতায় রেফার করে দিল হাওড়া জেলা হাসপাতাল। মেডিক্যাল কলেজে আসার পথে অ্যাম্বুল্যান্সে সঠিক পরিষেবা না পেয়ে মৃত্যু হল তার।
শিশুদের সচরাচর যে সব রোগ হয়, তার মধ্যে ব্রঙ্কো-নিউমোনিয়া অন্যতম। কিন্তু বুধবার দেখা গেল প্রত্যন্ত কোনও এলাকা নয়, কলকাতার একেবারে লাগোয়া হাওড়া জেলা হাসপাতালেও ওই রোগের চিকিৎসার পরিকাঠামো নেই। স্বাস্থ্য দফতরের প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই হাসপাতালে কোনও পেডিয়াট্রিক ভেন্টিলেটর নেই। তাই সেখানকার চিকিৎসকেরা ঝুঁকি না-নিয়ে নেহা মালিক নামে ওই শিশুকে রেফার করে দিয়েছিলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। |
কিন্তু মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছেই মারা যায় শিশুটি। নেহার ঠাকুরমা সোনাই মালিকের অভিযোগ, “মেডিক্যালে পৌঁছনোর পরেই অ্যাম্বুল্যান্সের ড্রাইভার জয় সিংহ নেহার মুখে লাগানো অক্সিজেনের নল খুলে দেন।” চালকের অবশ্য দাবি, তিনি অক্সিজেনের নল খোলেননি। অন্য সব ক্ষেত্রে যে ভাবে হাসপাতালে রোগীকে অ্যাম্বুল্যান্স থেকে নামানো হয়, এ ক্ষেত্রেও তা-ই করেছিলেন।
মৃত শিশুর বাবা শানু মালিক বলেন, “নল খোলার পরেই বাচ্চা নেতিয়ে যায়। ইমার্জেন্সিতে নাম লিখিয়ে দোতলায় ওঠার পর দেহে সাড় ছিল না। ডাক্তার বললেন, মারা গিয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “ওই ড্রাইভারের শাস্তি চাই আমরা। শাস্তি চাই হাওড়া হাসপাতালেরও, যারা বাচ্চার চিকিৎসা না-করে মরার জন্য পাঠিয়ে দিল।” তবে কারও বিরুদ্ধেই পুলিশ বা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি মৃত শিশুটির পরিবার।
তবে অ্যাম্বুল্যান্স চালকের ‘গাফিলতির অভিযোগের’ পাশাপাশি যে প্রশ্নটি বড় হয়ে উঠেছে, তা হল পরিকাঠামোর অভাব। কয়েক মাস আগে বি সি রায় শিশু হাসপাতালে পর পর বেশ কয়েকটি শিশুর মৃত্যুর পরে জেলা হাসপাতাল থেকে কলকাতায় রেফার বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। |
জেলা হাসপাতালগুলিতে যথাযথ পরিকাঠামো গড়ে তোলার উপরেও জোর দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এ দিনের ঘটনা প্রমাণ করল, মুখ্যমন্ত্রীর সেই নির্দেশ পালন করার মতো পরিকাঠামো এখনও তৈরি হয়নি জেলা হাসপাতালগুলিতে।
হাওড়া জেলা হাসপাতালের সুপার শুভ্রাংশু চক্রবর্তী এ দিন বলেন, পেডিয়াট্রিক ভেন্টিলেটর ছাড়া ওই শিশুর চিকিৎসা সম্ভব ছিল না। শিশুটিকে সকাল পৌনে বারোটা নাগাদ হাসপাতালে ভর্তি করে অ্যান্টিবায়োটিক ও নেবুলাইজার দেওয়া হয়। তার পর শারীরিক অবস্থা খারাপ হচ্ছে দেখে তাকে আর রাখার ঝুঁকি নেওয়া হয়নি। কাছাকাছির মধ্যে যে হেতু মেডিক্যাল কলেজে পেডিয়াট্রিক ভেন্টিলেটর আছে, তাই সেখানেই রেফার করা হয়।
স্বাস্থ্য কর্তারা জানিয়েছেন, শুধু হাওড়া জেলা হাসপাতাল নয়, রাজ্যের কোনও জেলা হাসপাতালেই শিশুদের উপযোগী ভেন্টিলেটর নেই। তাই সুন্দরবনের কোনও শিশু যদি ব্রঙ্কো-নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়, তা হলে তাকেও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে নিয়ে আসতে হবে কলকাতায়।
এ ভাবে আর কত দিন জেলা হাসপাতাল থেকে রোগী অন্যত্র রেফার করা বন্ধ হবে? রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র বলেন, “আমরা একটু একটু করে পরিষেবা তৈরি করার চেষ্টা করছি। এক একটা স্তর পেরোচ্ছি। সব ব্যবস্থা করে উঠতে একটু সময় লাগবে।” |