অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল বন্ধ করে দেওয়া হলেও মাঝেমধ্যেই আচমকা পরীক্ষা (সারপ্রাইজ টেস্ট) নিয়ে পড়ুয়াদের প্রস্তুতি যাচাই করতে চায় রাজ্য সরকার।
রাজ্য সরকারের পাঠ্যক্রম কমিটির মতে, এই ধরনের পরীক্ষায় এক দিকে পড়ুয়াদের উপরে চাপ থাকে না। অন্য দিকে, সহজেই তাদের প্রস্তুতি যাচাই করা যায়। স্কুলশিক্ষা সচিব বিক্রম সেন জানিয়েছেন, বর্তমান মূল্যায়ন পদ্ধতি পুরোটাই পরীক্ষা-নির্ভর। পাঠ্যক্রম কমিটি এই মূল্যায়নের বদল চায়। তিনি বলেন, “এ বছর আগের নিয়ম মেনেই ইউনিট টেস্ট হবে। তবে আগামী বছর থেকে বদল হবে। শুরু হবে ধারাবাহিক নিরবচ্ছিন্ন মূল্যায়ন। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সঙ্গে এই নিয়ে শীঘ্রই বৈঠকে বসবেন পাঠ্যক্রম কমিটির সদস্যেরা।” পাঠ্যক্রম কমিটির সুপারিশ মতো আচমকা পরীক্ষাও চালু হতে পারে বলে সচিব জানান।
কিন্তু আচমকা পরীক্ষা কেন? পাঠ্যক্রম কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার বলেন, “আগাম জানিয়ে পরীক্ষা নিলে ছাত্রছাত্রীদের উপরে চাপ তৈরি হয়। বাড়ির লোক ছেলেমেয়েদের পড়তে বসার জন্য চাপ দেন। আমরা সেই চাপটা থেকে মুক্তি দিতে চাই ছাত্রছাত্রীদের।” তিনি জানান, বছরভর এই রকম পরীক্ষা নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে। বছরের শেষে বার্ষিক পরীক্ষা দেবে ছাত্রছাত্রীরা। এই দুই পরীক্ষার নম্বরেরই প্রতিফলন ঘটবে পড়ুয়ার সার্বিক ফলে।
প্রশ্ন উঠেছে, পরীক্ষার জন্য পড়তে হবে না বলে ছাত্রছাত্রীদের উপরে চাপ তৈরি হবে না ঠিকই। কিন্তু আচমকা পরীক্ষায় যদি কোনও পড়ুয়া ভাল করতে না পারে, অথবা অনুপস্থিত থাকে, তা হলে তো তার ফলাফল খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। তা হলেও তো অনেক ছাত্রছাত্রীর উপরে চাপ তৈরি হবে। এ ব্যাপারে পাঠ্যক্রম কমিটির ব্যাখ্যা, মুখস্থ করে নয়, পড়ুয়া কোনও বিষয় কতটা বুঝেছে এবং মাথায় রাখতে পেরেছে, মূল্যায়নে সেটাই দেখা হবে। পাঠ্যক্রম কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুনন্দ সান্যাল কিন্তু মনে করেন, এই ধরনের আচমকা পরীক্ষার জেরেই বহু পড়ুয়ার কাছে স্কুল ভয়ের জায়গা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তিনি বলেন, “নতুন নিয়মে বলা হয়েছে, চার মাস ক্লাস করলেই পরের ক্লাসে তুলে দিতে হবে। তা হলে এ সব করারই বা অর্থ কী?” রাজ্য সরকারের পাশ-ফেল ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সুনন্দবাবু আগেই পাঠ্যক্রম কমিটির চেয়ারম্যানের পদে ইস্তফা দিয়েছেন। |