ইচ্ছে করলেই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন থেকে রাজনীতির রং সরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তাঁর মতে, পশ্চিমবঙ্গে ডান-বাম, সব দলেরই অনেক নেতা-নেত্রীর ‘উত্থান’ হয়েছে ছাত্র-রাজনীতির হাত ধরে। অর্থাৎ, রাজ্য রাজনীতির সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে ছাত্র রাজনীতির যথেষ্ট অবদান রয়েছে। মন্ত্রীর কথায়, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দলীয় ছাত্র রাজনীতি দূরে রাখার বিষয়টি যথেষ্ট স্পর্শকাতর।”
দীর্ঘ কাল ধরেই পশ্চিমবঙ্গের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের ভোট কার্যত সাধারণ নির্বাচনের চেহারা নেয়। সাম্প্রতিক কালে এই প্রবণতা বেড়েছে। শুধু তা-ই নয়, ছাত্র সংগঠনের বিবাদের মধ্যে পড়ে একের পর এক কলেজে অধ্যক্ষ নিগৃহীত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষানুরাগীদের একাংশের দাবি: ছাত্র সংসদের নির্বাচন থেকে দলীয় রাজনীতিকে দূরে রাখার ব্যবস্থা করুক সরকার।
এ রাজ্যে এমন নজির কিন্তু বিরল নয়। রামকৃষ্ণ মিশনের কলেজ বা সেন্ট জেভিয়ার্সে তো বরাবরই ছাত্র সংসদ দলীয় রাজনীতি-মুক্ত। সাম্প্রতিক কালে এ ব্যাপারে শিবপুরের বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি (বেসু)-র পদক্ষেপও শিক্ষণীয় বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ শিক্ষকেরা। কিছু কাল আগেও বেসু-তে ছাত্র সংসদ নির্বাচন মানেই ছিল মারদাঙ্গা। অনেক সময়ে ক্যাম্পাসের অশান্তি বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। এই প্রবণতা রুখতে এখন সেখানে ছাত্র প্রতিনিধিত্বের জন্য ছাত্র সেনেট তৈরি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। রাজনৈতিক আনুগত্যের ভিত্তিতে নয়, সেনেটে ছাত্র প্রতিনিধি রাখা হবে গান, আঁকা, ছবি তোলা, বিজ্ঞানের মডেল উদ্ভাবন ইত্যাদি কাজে দক্ষতার ভিত্তিতে। বেসু’র উপাচার্য অজয় রায় জানিয়েছেন, রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরে গিয়ে সেনেটে যোগ দিতে ছাত্রছাত্রীরা রাজিও হয়েছেন।
তবে এই সব অগ্রণী প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টান্ত সামনে রেখে সর্বত্র ছাত্র সংসদ নির্বাচন থেকে রাজনীতির রং মুছে ফেলতে রাজ্য সরকার যে বিশেষ উৎসাহী নয়, সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী তেমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “ব্যক্তিগত ভাবে এই পদ্ধতিকে আমি সমর্থন করি কি না, সেটা বড় কথা নয়। এই রকম অরাজনৈতিক ছাত্র সংসদ তৈরির বিষয়টি সার্বিক ভাবে ভাবতে হচ্ছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিটা রাজ্যের নিরিখে একটা স্পর্শকাতর ব্যাপার।” কারণ হিসাবে তাঁর সংযোজন: ডান, বাম সব দলেরই বহু নেতা-নেত্রী উঠে এসেছেন ছাত্র রাজনীতির হাত ধরে।
ব্রাত্যবাবু অবশ্য জানিয়েছেন, সরকার চায় ক্যাম্পাসে সংঘর্ষ রুখতে। একই সঙ্গে ছাত্র-রাজনীতিকে সম্পূর্ণ ভাবে সন্ত্রাসমুক্ত করাও সরকারের লক্ষ্য। সুষ্ঠু ভাবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে পরামর্শ নিতে ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন রাজ্য উচ্চশিক্ষা সংসদের প্রতিনিধিরা। সংসদ সব দিক বিচার করে ছাত্র সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত বিধি তৈরি করছে।
কিন্তু বিধি বানালেই যে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হিংসামুক্ত হবে, তার নিশ্চয়তা কোথায়? অনেকেই মনে করছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সরাসরি মদত বন্ধ না-হলে শুধু ‘বিধি’ দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিংসা প্রতিরোধ সম্ভব নয়। এরই প্রেক্ষিতে সরাসরি দলাদলিমুক্ত ছাত্র সংসদ গড়ার পরামর্শ দিচ্ছেন অভিজ্ঞ শিক্ষকদের একাংশ। যদিও শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য, অরাজনৈতিক ছাত্র সংসদ সম্পর্কে মত দেওয়া সহজ। তা কার্যকর করা সহজ নয়। |