হাবরা ও অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভা, বসেনি পাইপ লাইন, নেই প্রয়োজনীয় রিজার্ভার
বাড়ি বাড়ি পানীয় জল দিতে
পুরসভার উদাসীনতার অভিযোগ
কটি পুরসভার বয়স ৫০ ছুঁতে চলেছে। আর একটির বয়স ৩৩। কিন্তু দুই পুরসভা এলাকায় প্রতিটি বাড়িতে পানীয় জলের কল এখনও স্বপ্নই। বনগাঁ, গোবরডাঙা, হাবরা এবং অশোকনগর-কল্যাণগড়---উত্তর ২৪ পরগনায় গা ঘেঁষাঘেষি করে থাকা এই চার পুরসভাই পুরএলাকার সর্বত্র পানীয় জলের সরবরাহ পৌঁছে দিতে ব্যর্থ। এদের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন ১৪২ বছরের গোবরডাঙা পুরসভা। কিন্তু পুরসভার বয়স আর তাদের দেওয়া পরিষেবার মান নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন থেকে গিয়েছে। বাম আমলে যা হয়নি, ক্ষমতার পরিবর্তন হলে তার সুরাহা অবশ্যম্ভাবী বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই চার পুরসভায় ক্ষমা দখল করেছিল তৃণমূল এবং তৃণমূল-কংগ্রেস জোট (বনগাঁয়)। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিশেষত পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে ব্যর্থ চারটি পুরসভাই।
১৯৭৯ সালে পুরসভার মর্যাদা পায় হাবরা। তার পর থেকে কখনও ডান, কখনও বামেরা পুরসভায় ক্ষমতায় এসেছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বামেদের হারিয়ে পুরবোর্ড দখল করে তৃণমূল। তারপর ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে ক্ষমতার পরিবর্তনে এই কেন্দ্রের বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক খাদ্যমন্ত্রী হন। স্বাভাবিক ভাবেই দীর্ঘদিনের পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে নতুন পুরসভা ও সরকার উদ্যোগী হবেন বলে আশা করেছিলেন পুরবাসীরা। কিন্তু এখনও কোনও তরফে তেমন উদ্যোগ না থাকায় স্পষ্টতই হতাশ তাঁরা।
হাবরা পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, পুর এলাকায় মোট পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। এখনও পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া গিয়েছেমাত্র ২৭৩৩টি পরিবারে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়, পুর এলাকার সর্বত্র এখনও পাইপ লাইন বসানোর কাজই শেষ করতে পারেনি পুরসভা। পুর এলাকায় রিজার্ভারের সংখ্যা ৪টি। তার মধ্যে একটি সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়েছে। বাকিগুলির অবস্থাও ভাল নয়। পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের তপতী দত্ত বলেন, “নতুন একটি রিজার্ভার তৈরির জন্য জনস্বাস্থ্য-কারিগরি (পিএইচই) দফতরকে ১২ লক্ষ টাকার চেক পাঠানো হয়েছে। পাইপ লাইন সম্প্রসারণ করে প্রতিটি বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য পিএইচই-কে বলা হয়েছে। কিন্তু ওই দফতর থেকে জানানো হয়েছে তারা এখন গ্রামীণ এলাকায় জল প্রকল্পের কাজ করছে। এই অবস্থায় মানুষের কাছে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া দায়িত্ব কার তা বুঝতে পারছি না। জলের জন্য কোনও টাকা সরাসরি আমাদের কাছে আসে না।”
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বহু এলাকায় যেমন পাইপ লাইন বসানো যায়নি। তেমনই পাইপ লাইন বসানো হয়েছে এমন বহু জায়গা জবরদখল করে নির্মাণকাজ হয়েছে। যে ২৭৩৩টি পরিবার জলের সংযোগ পেয়েছে সেখানেও জলের সরবরাহ খুবই কম। পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের ঋজিনন্দন বিশ্বাস বলেন, “সর্বত্র পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য বর্তমান পুরসভা উপযুক্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করেনি।” তাঁর দাবি, “২০০৭ সালে জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়াল মিশন প্রকল্পো ১৫ কোটি টাকা এসেছে। ওই টাকায় গরিব মানুষের বাড়ি এবং এলাকার পরিকাঠামোর উন্নয়ন করার কথা। ওই প্রকল্পে কিছু পাইন লাইন বসানো হয়েছিল। তার পরে আর নতুন করে পাইপ লাইন বসানো হয়নি।” তপতীদেবী বলেন, “কোথায় কোথায় পাইপ লাইন রয়েছে, কোথায় নতুন পাইপ লাইন হবে তার পরিসংখ্যান চেয়ে পিএইচই-কে চিঠি দেওয়া হয়েছে।” জ্যোতিপ্রিয়াবু বলেন, “পুর এলাকার সমস্ত বাসিন্দা যাতে পানীয় জল পান সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”
অন্যদিকে, বাকি তিন পুরসভার চেয়ে বয়সে নবীন হলেও অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভাতেও পানীয় জলের সমস্যা প্রকট। ১৯৬৮ সালে তৈরি হয় এই পুরসভা। তার পর থেকে বেশিরভাগ সময়েই এখানে ক্ষমতায় ছিল বামেরা। সেই সময় পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে বাম পুরবোর্ডের উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বাসিন্দারা। ২০১০ সালে পুর নির্বাচনে বামেদের হারিয়ে ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল। কিন্তু পানীয় জল নিয়ে পুরবাসীদের প্রশ্ন আজও রয়েছে। এখনও বাড়িতে বাড়িতে পানীয় জলের লাইন দূরঅস্ত। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, পুর এলাকায় মোট পরিবারের সংখ্যা ৩০ হাজার। জলের লাইন পেয়েছেন মাত্র ১০ হাজার পরিবার। পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য ৫টি রিজাভা৪র ও ১৪টি পাম্প হাউস রয়েছে। পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের সমীর দত্ত বলেন, “আমরা পুরসভায় ক্ষমতায় আসার পরে সর্বত্র পানীয় পৌঁছে দিতে উদ্যোগী হয়েছি। পিএইচইকে আরও কয়েকটি রিজার্ভার তৈরি ও পাইন লাইন সম্প্রসারণের জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু তারা কোনও উত্তর দেয়নি।” এই পুর এলাকায় পানীয় জলে আর্সেনিকের সমস্যা দীর্ঘদিনের। বহু মানুষ এখনও আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল পান না বলে অভিযোগ। প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক সত্যসেবী কর বলেন, “আমরা যখন পুরসভায় ক্ষমতায় ছিলাম তখন যে টুকু অংশে পাইন লাইন সংম্প্রসারণের কাজ হয়েছিল তার পরে এতটুকু কাজ এগোয়নি। তা ছাড়া পুরসভা জল সরবরাহের সময় ১৫ মিনিট কমিয়ে দিয়েছে।” পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, আর্সেনিক সমস্যার কথা ভেবে ১০টি ওয়ার্ডে ২০টি গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। এ ছাড়া গরমে পানীয় জলের সমস্যার কথা ভেবে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সারফেস ওয়াটারের একটি প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে।
আর পিএইচই দফতরের বারাসত ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকার চন্দ্রশেখর ভৌমিক বলেন, “পুর এলাকায় পাইপ লাইন মেরামতি বা নতুন করে বসানো বা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ আমাদের কাছে নেই। তা ছাড়া, পুরসভার চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে জল সরবরাহের বিষয়টি নিজেদের অধীনে নেওয়ার জন্য। কিন্তু পুর কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে কোনও সাড়াশব্দই করছেন না।”
এ বিষয়ে তপতীদেবী বলেন, “পানীয় জলের দায়িত্ব নিজেদের হাতে নেব এটা ঠিক। কিন্তু তার আগে পিএইচই-কে তো আমাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে। তা ছাড়া তারা কতটা কাজ করেছে তার হিসাবও দিতে হবে। কিন্তু বার বার বলা সত্ত্বেও তারা দায়িত্ব বুঝিয়ে দিচ্ছে না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.