এ নিয়ে দ্বিতীয় বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সঙ্গ’ ছাড়লেন তিনি।
এখনও ছাড়েননি। তবে মঙ্গলবার তোপ দেগে অন্তত এমনই জানিয়েছেন তিনি যে, মন্ত্রী হয়ে অন্তত মহাকরণে আর ফিরতে চাননা। তিনি বহরমপুরের কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী।
এর আগেও তাঁর সঙ্গে মমতা তথা তৃণমূলের সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছিল, বছর আটেক আগে। ২০০৩ সালে বহরমপুর পুরসভার নির্বাচনী ফল ঘোষণার পরে। সে বার তৃণমূল প্রার্থী মনোজবাবু জামানত খুইয়ে ছিলেন। আর কালক্ষেপ করে না করে তিনি তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে অধীর চৌধুরীর নিয়ন্ত্রণে থাকা মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন। তার পর, গত মঙ্গলবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও জোট শরিক তৃণমূলের সঙ্গে দ্বিতীয় বারের মতো সর্ম্পকে ছেদ পড়তে চলল। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মন্ত্রক থেকে সরিয়ে দিয়ে তাঁকে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে। মনোজের দাবি, “আমার সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা না করে মাত্র চার মাস আগে দায়িত্ব পাওয়া দফতর এ ভাবে কেড়ে নেওয়া স্বেচ্ছাচার ও স্বৈরাচার ছাড়া আর কিছুই নয়। এ কারণেই মন্ত্রীত্বে আর ফিরছি না।” এ দিনও বহরমপুর ফিরে তিনি বলেন, “মহাকরণে মন্ত্রী হয়ে আর ফিরছি না।”
জেদি স্বভাবের মনোজবাবু ছাত্র জীবন থেকেই কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত। মুর্শিদাবাদ জেলা ছাত্রপরিষদ এক সময় দুই শিবিরে ভাগ হয়ে গিয়েছিল। এক শিবিরের নেতা ছিলেন বতর্মান মন্ত্রী ও তৃণমূল জেলাসভাপতি সুব্রত সাহা। অন্য শিবিরের রাশ ছিল মনোজ চক্রবর্তীর হাতে। সুব্রতবাবু বরাবর গনিখান চৌধুরীর অনুগামী।
|

বিভাস চক্রবর্তী
ফরওয়ার্ড ব্লক
জেলা সম্পাদক |
এটা জোট সরকারের অন্তর্কলহ। বিষয়টি জোট সরকারের। তবে সরকার ও মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি ভরসা না থাকলে সেই সরকার থেকে কংগ্রেসের বেরিয়ে এসে আন্দোলন
করা উচিত। |

সুব্রত সাহা
জেলা তৃণমূল
সভাপতি প্রতিমন্ত্রী |
মন্ত্রিত্বে থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে এ ভাবে আক্রমণ কোনও সভ্য মানুষ করতে পারে না। হাইকম্যান্ডের অনুমতির কথা
তুলে কালক্ষেপ না করে অবিলম্বে
তাঁর উচিত মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেওয়া। |
|
মনোজ চক্রবর্তীর পদত্যাগের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করছি না। এ ব্যাপারে কিছু বলা সমীচীন নয়। যার ব্যাপার তিনিই এ ব্যাপারে যা বলার বলবেন। |

আবু হেনা
কংগ্রেস বিধায়ক, মৎস্যমন্ত্রী |
মুখ্যমন্ত্রীকে স্বৈরাচারী বলে জোট সরকারের এক জন মন্ত্রীর পদত্যাগ করতে চাওয়ার ঘটনা থেকে সাত মাসের এই সরকারের স্বরূপ সর্বসমক্ষে প্রকাশ হয়ে পড়ল। |

বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
আরএসপি জেলা সম্পাদক |
|

মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য
সিপিএম জেলা সম্পাদক |
এটা একেবারেই জোট সরকারের দুই শরিকের মধ্যে ঝগড়া। ফলে তা নিয়ে সিপিএম কোনও মন্তব্য করছে না। তবে গোটা বিষয়টির উপরে নজর রাখা হচ্ছে। |

অধীর চৌধুরী
বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ |
মনোজ জনপ্রতিনিধি। না জানিয়ে দফতর বদল করে তাঁর প্রতি বাস্তবিকই অসম্মান করা হয়েছে। মনোজ তার প্রতিবাদ করেছেন। তাঁর প্রতিবাদকে
আমি সম্মান করি। |
|
অন্য দিকে, মনোজবাবু ছিলেন সাত্তার সাহেবের অতি ঘনিষ্ঠ। তৃণমূল কংগ্রেসের জন্ম লগ্নে তাঁর রাজনৈতিক সতীর্থদের অনেকে কংগ্রেস ত্যাগ করেন। মনোজ কিন্তু থেকেই গিয়েছিলেন কংগ্রেসে। তার পর ২০০৩ সালের বহরমপুর পুর নির্বাচন। ওই সময় বহরমপুর বিধানসভার বিধায়ক ছিলেন মায়ারানি পাল। মনোজ বলেন, “আমি পর পর দু’ বারের নির্বাচিত কাউন্সিলর। পুরভোটে প্রার্থী হতে চেয়ে আমার আবেদনপত্র স্থানীয় বিধায়ক মায়ারানি পালের কাছে জমা দিয়ে রাজ্যের বাইরে গিয়েছিলাম। কিন্তু মায়ারানি আমার আবেদনপত্র সাংসদ অধীর চৌধুরীর কাছে জমা না দেওয়ায় কংগ্রেসের প্রার্থী হতে পারিনি। প্রতিবাদে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলাম।”
ওই হারের বদলা তিনি নিলেন ৩ বছর পর ২০০৬ সালের বিধানসভা ভোটে। ওই ভোটে এ আই সি সি মনোনীত প্রার্থী তৎকালীন বিধায়ক মায়ারানি পালের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর সর্মথন পুষ্ট ‘কুঠার’ প্রতীকের নির্দল প্রার্থী মনোজবাবু। মায়ারানিকে তৃতীয় স্থানে ঠেলে দিয়ে ২৫৭২৬ ভোটের ব্যবধানে জেতেন মনোজ। সেই নির্দল বিধায়ক ২০১১ সালের ভোটে কংগ্রেসের ‘হাত’ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৪৩৩১৩ ভোটের ব্যবধানে জিতে মন্ত্রী হন। মনোজবাবু বলেন, “মাত্র চার মাস আগে আমাকে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের প্রতিমন্ত্রী করা হয়। তার পরই মেদিনীপুর শিলিগুড়ি-সহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বেদখল হওয়া শিল্পতালুকের জমি উদ্ধারের কাজ শুরু করি। তার পর হঠাৎ দুম করে বলা নেই, কওয়া নেই, কোনও আলোচনা নেই, এমনকি দফতরের কাজ নিয়ে কোনও সমালোচনাও নেই আমার কাছ থেকে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতর নিয়ে নেওয়া হয়েছে।”
চেম্বার অফ কমার্সের মুর্শিদাবাদ শাখার যুগ্ম সম্পাদক তথা লালবাগ পর্যটক উন্নয়ন সংস্থার সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, “মুর্শিদাবাদ জেলার পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সম্প্রতি যে প্রত্যাশা জেগেছিল তাতে বড়সড় ধাক্কা খেল ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতর মনোজবাবুর কাছে থেকে নিয়ে নেওয়ায়।” বহরমপুরে বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব ও কলেজ শিক্ষক শক্তিনাথ ভট্টাটার্য বলেন, “মনোজ চক্রবর্তীর ক্ষমতা খর্ব করায় জেলার স্থানীয় আবেগে আঘাত লেগেছে।” তবে কিছুটা ভিন্ন সুর চেম্বার অফ কমার্সের মুর্শিদাবাদ জেলা শাখার সভাপতি অজয় সিংহের কণ্ঠে। তিনি বলেন, “এ জেলায় রাজ্যের তিন মন্ত্রী রয়েছেন। নয়া সরকারের বয়স ৮ মাস হতে চলল। কিন্তু উন্নয়নের কোনও নতুন দিশা এখনও চোখে পড়োনি। ফলে জেলার মন্ত্রীদের ক্ষমতা খর্ব হওয়ায় জেলার উন্নয়নে কতটা ধাক্কা খাবে তা সময়ই বলবে।”
|