ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে মুর্শিদাবাদের রানিনগরে এক ‘পাচারকারী’কে বেধড়ক মারধর করেছে কয়েকজন সীমান্তরক্ষী। তাঁকে নগ্ন করে বাঁশের লাঠির সঙ্গে বেঁধে লাথি মারা হয়। বেশ কিছু ক্ষণ ধরে তাঁর উপরে অত্যাচার চলে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনার কথা জেনে অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হন। বুধবার তিনি রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়কে বলেছেন বিএসএফের আইজি-কে রাজ্য সরকারের এই মনোভাবের কথা জানিয়ে দিতে। ডিজি এই দিনই সে কথা বিএসএফের আইজি (দক্ষিণবঙ্গ) রবি কুমারকে জানিয়েও দিয়েছেন। বিএসএফের এক পদস্থ কর্তা জানান, রানিনগরে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ওই ১০৫ নম্বর ব্যাটেলিয়নের ৮ জওয়ানকে সাসপেন্ডও করা হয়েছে।
|
তবে বিএসএফ সূত্রে দাবি করা হয়েছে, জওয়ানদের হাতে প্রহৃত ওই ব্যক্তি পাচারকারী। গত শনিবার বেলা দশটা নাগাদ তাকে বেআইনি ভাবে সীমান্ত পার হতে দেখে সীমান্তরক্ষীরা প্রথমে থামতে বলেন। কিন্তু তিনি সে কথা না শুনে ছুটে বাংলাদেশ চলে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তখন কাতলামারি সীমান্তের পদ্মার একটি শাখা নদীর ধারে মোহনগঞ্জ ‘কারগিল’ এলাকায় বিএসএফের ওই জওয়ানেরা তাঁকে ধরে ফেলেন। তারপরেই শুরু হয় প্রচণ্ড মারধর। কিন্তু পাচারকারী হলেও কেন তাকে এমন ভাবে মারধর করা হল, তার কোনও ব্যাখ্যা বিএসএফের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মারধরের পরে ওই ব্যক্তির চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। তাঁকে গ্রেফতারও করা হয়নি। তাঁকে বাংলাদেশ সীমান্তেই ফেলে রেখে চলে গিয়েছিলেন বিএসএফের জওয়ানেরা। তারপর থেকে ওই ব্যক্তির কোনও খোঁজ মেলেনি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বিএসএফ জওয়ানেরা প্রায়ই এমন নির্দয় ব্যবহার করেন। স্থানীয় এক গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের কথায়, “বিএসএফ চায়, প্রকাশ্যে এই ভাবে মারধর করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে, যাতে আর কেউ পাচার করতে সাহস না পায়।” তিনি বলেন, “আগে বিএসএফ অনেক সময় সোজা গুলি পর্যন্ত করে দিত। এখন প্রকাশ্যে প্রচণ্ড মারধর করে ফেলে রেখে চলে যায়।”
এই ঘটনাটিতে পুলিশের কাছে অবশ্য কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। ডোমকলের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক দেবর্ষি দত্ত বলেন, “ওই ঘটনায় কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। যে ব্যক্তিকে মারধর করা হয়েছে, তাঁর নাম ঠিকানা পরিচয়ও আমরা জানি না।” তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তির নাম হাবু শেখ। বছর পঁচিশের ওই যুবকের বাড়ি বাংলাদেশের চাপাই-নবাবগঞ্জ জেলার আটরোশিয়া গ্রামে। সম্প্রতি সীমান্ত পেরিয়ে মোহনগঞ্জ এলাকায় এসেছিলেন। ওই দিন বাংলাদেশে ফেরার সময়েই ধরা পড়ে যান। |