|
|
|
|
একশো দিনের কাজ |
৫০ দিন শ্রমদিবস তৈরিতে উদ্যোগ পূর্বে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
হাতে সময় আড়াই মাসেরও কম। তারই মধ্যে কমপক্ষে ২৯ দিন কাজ করাতে হবে। কারণ একশো দিনের কাজ প্রকল্পে পূর্ব মেদিনীপুরে গত ন’মাসে মাত্র ২১ দিন কাজ পেয়েছেন শ্রমিকেরা। ফলে একশো দিনের প্রকল্পে ৫০ দিনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণও কষ্টকর হয়ে পড়ছে।
সম্প্রতি (গত ১৩ জানুয়ারি) দিঘায় পূর্ব মেদিনীপুরের প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে উন্নয়ন পর্যালোচনা বৈঠকে জেলায় একশো দিন কাজের প্রকল্পে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চলতি আর্থিক বছরে এই প্রকল্পে জেলার শ্রমিকেরা মাত্র ২১ দিন কাজ পেয়েছে জেনে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। চলতি আর্থিক বছরের (আগামী ৩১ মার্চে শেষ) মধ্যে শ্রমিকদের গড়ে অন্তত ৫০ দিন কাজ দেওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের ভার নিয়ে মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও সম্প্রতি জেলাশাসকদের ৫০ দিনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের নির্দেশ দিয়েছেন।
পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) মলয় হালদারের বক্তব্য, “চলতি বছরে বিধানসভা নির্বাচনের জন্য কাজের ক্ষেত্রে কিছুটা অসুবিধা হলেও এখন কাজের গতি বেড়েছে। আগামী আড়াই মাস কাজের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়ে কাজের গতি বাড়াতে পঞ্চায়েত ও ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করা হচ্ছে। কাজের ক্ষেত্রে টাকার কোনও সমস্যা হবে না।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত আর্থিক বছরে এই জেলায় শ্রমিকেরা গড়ে ৩২ দিন কাজ পেয়েছিলেন। এ বছর পরিস্থিতি তার চেয়েও খারাপ। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো আগামী আড়াই মাসে ৫০ দিনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে জেলার সমস্ত ব্লক ও পঞ্চায়েতগুলিকে উদ্যোগী হতে বলা হয়েছে। সোমবার ছিল জেলা পরিকল্পনা কমিটির বৈঠক। সেখানে জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদ সদস্যরা এই প্রকল্পে কাজের গতি বাড়ানো-সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এর পরেও জেলা প্রশাসনের কর্তারা বিভিন্ন ব্লকে গিয়ে পঞ্চায়েত প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। মঙ্গলবার শহিদ মাতঙ্গিনী ও তমলুকে ব্লকে বৈঠক করতে যান জেলাশাসক ও মহকুমাশাসক। মলয়বাবু জানান, একশো দিনের কাজে বেশি শ্রমদিবস তৈরি করতে সেচ দফতরও পরিকল্পনা করেছে।
এ দিকে, এই প্রকল্পে বরাদ্দ টাকার ৪০ শতাংশ সামগ্রী কেনা ও ৬০ শতাংশ মজুরি বাবদ খরচের নির্দেশ রয়েছে। জেলার বেশ কিছু পঞ্চায়েত এই নির্দেশ না মেনে প্রকল্পের কাজ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জেলা প্রশাসন ওই সব পঞ্চায়েতকে শো-কজও করেছে। অন্য দিকে, পঞ্চায়েত প্রধানদের একাংশের অভিযোগ, প্রকল্পে বিভিন্ন কাজের পরিকল্পনা জমা দেওয়ার পর তার অনুমোদন পেতে দেরি হয়। প্রশাসনের ঢিলেমির জন্য টাকা পেতে সময় লাগে। আর এই প্রকল্প রূপায়ণে পঞ্চায়েতের নির্মাণ-সহায়কের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু জেলার ২২৩টি পঞ্চায়েতের মধ্যে বেশ কিছু পঞ্চায়েতে নির্মাণ-সহায়কের পদ শূন্য পড়ে রয়েছে। ফলে, প্রকল্পের রূপরেখা তৈরিতে সমস্যা হচ্ছে বলে মত প্রধানদের।
জেলা পরিষদের সভাধিপতি গান্ধী হাজরা বলেন, “চলতি আর্থিক বছরে এই প্রকল্পে ৫০ দিন কাজের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য জেলার পঞ্চায়েতগুলিকে উদ্যোগী হতে বলা হয়েছে। এই সময়ে জেলার সমস্ত পঞ্চায়েত ও ব্লক যাতে দ্রুত গতিতে কাজ করতে পারে সে জন্য প্রশাসন-পঞ্চায়েত সমন্বয় বাড়ানোর উপর বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। পঞ্চায়েতগুলিতে নির্মাণ-সহায়কের শূন্য-পদ পূরণের জন্য সরকারের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।” তিনি জানান, পঞ্চায়েতগুলি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে যে কাজের পরিকল্পনা নিয়েছে, প্রয়োজনে তার কিছুটা রদবদল করে বাস্তব পরিস্থিতি অনুযায়ী দ্রুত কাজের ব্যবস্থা করা হবে। গ্রামের রাস্তা তৈরি, রাস্তা মেরামতি, নিকাশি খাল-খননের মতো কাজ দ্রুত গতিতে করার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যের দু’টি মাত্র জেলা পরিষদে ক্ষমতাসীন অধুনা শাসকদল তৃণমূল। একটি দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা এবং অন্যটি পূর্ব মেদিনীপুর। নন্দীগ্রামের এই জেলা থেকেই ‘পরিবর্তনের হাওয়া’রও সূচনা। যদিও গত সাড়ে তিন বছরে জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি, গ্রাম পঞ্চায়েত পরিচালনার ক্ষেত্রে তৃণমূলের ভূমিকা নিয়ে ইতিমধ্যে বহু প্রশ্ন উঠেছে। সমালোচনা মূলত উন্নয়ন-কাজ থমকে থাকা নিয়েই। ১০০ দিনের প্রকল্পে আরও বেশি মানুষকে কাজ দেওয়া এবং বেশি সংখ্যক শ্রমদিবস তৈরির মাধ্যমে উন্নয়ন-কাজে গতি আনা শাসকদলের কাছেও বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষত, যেখানে আগামী বছরেই ফের ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে নির্বাচন। |
|
|
|
|
|