শিক্ষিকা না থাকায় বন্ধ শিশুশিক্ষা কেন্দ্র, সমস্যা
দু’জন শিক্ষিকার এক জন অবসর নিয়েছেন। অন্য জন চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। এই অবস্থায় শিক্ষিকার অভাবে পঠন-পাঠন বন্ধ একটি শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে। বিপাকে পড়েছে প্রায় ৮০ জন ছাত্র-ছাত্রী।
ঘটনাটি উলুবেড়িয়া ১ ব্লকের ধুলাসিমলা মালপাড়ার। ২০০০ সালের গোড়ায় রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর সিদ্ধান্ত নেয়, যে সব প্রাথমিক স্কুলের এক কিলোমিটারের মধ্যে অন্য কোনও প্রাথমিক স্কুল নেই সেখানে একটি করে শিশুশিক্ষা কেন্দ্র গড়া হবে। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক মালপাড়াতে কেন্দ্রটি তৈরি হয় ২০০৪ সালে। এটি রয়েছে উলুবেড়িয়া ১ পঞ্চায়েত সমিতির অধীনে। কাছাকাছি কোনও প্রাথমিক স্কুল না-থাকায় প্রথম থেকেই এখানে ছাত্র-ছাত্রীর অভাব হয়নি।
পঞ্চায়েত সমিতি কেন্দ্রটির জন্য পাকা ভবন তৈরি করে দিয়েছে। তৈরি হয়েছে মিড-ডে মিলের রান্নাঘর। ভবনটি একবার ভেঙে গেলে তা সংস্কারও করে তারা। ২০০৪ সালেই এই শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে দু’জন শিক্ষিকা নিয়োগ করা হয়। কিন্তু গত বছরের গোড়ায় বয়স হয়ে যাওয়ায় একজন শিক্ষিকা অবসর নেন। একজন শিক্ষিকাই কোনওমতে কেন্দ্রটি চালাচ্ছিলেন। কিন্তু তিনিও ‘পারিবারিক কারণে’ চাকরি ছেড়ে দেন মাস তিনেক আগে। সেই থেকে বন্ধ হয়ে যায় স্কুলের পঠন-পাঠন। ছাত্র-ছাত্রীদের দেওয়া হয়নি মিড ডে মিল।
পঠন-পাঠন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখানকার ছাত্র-ছাত্রীদের ২০১১ সালের বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। এই কেন্দ্রের তফসিলিভুক্ত ছাত্র এবং সব সম্প্রদায়ের ছাত্রীদের পোশাক কেনার জন্য টাকা দেওয়ার কথা। টাকা এসে পড়ে রয়েছে পঞ্চায়েত সমিতিতে। কিন্তু স্কুলে কোনও শিক্ষিকা না-থাকায় টাকা ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে তুলে দেওয়া যায়নি।
পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মহম্মদ নাসিরুদ্দিন বলেন, “সমস্যার কথা আমরা জানি। এ বিষয়ে আমরা জেলা পরিষদে কথা বলেছি। আমাদের প্রস্তাব হল, এই শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের পাশে যে সব প্রাথমিক স্কুল রয়েছে, সেগুলিতে যেন এখানকার ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি করিয়ে নেওয়া হয়। আমরা স্কুল শিক্ষা দফতরকেও সেই অনুরোধ জানিয়েছি।” জেলা স্কুল শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক জানান, এটা করতে কোনও অসুবিধা হবে না। প্রতিটি প্রাথমিক স্কুল এই শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি করিয়ে নিতে বাধ্য।
কিন্তু এতে সমস্যা মেটেনি। অভিভাবকদের তরফে সুশান্ত বাগ বলেন, “আমার ছেলে এই শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে প্রথম শ্রেণিতে পড়ত। কিন্তু এ বছর তার বাৎসরিক পরীক্ষা হয়নি। ফলে পাশের গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে ফের ছেলেকে ফের প্রথম শ্রেণিতেই ভর্তি করিয়েছি।” চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত ২২ জন ছাত্র-ছাত্রী। তাদেরও বাৎসরিক পরীক্ষা হয়নি। ফলে স্কুল ছাড়ার শংসাপত্র পায়নি তারা। হাইস্কুলগুলিতে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে তারাও সমস্যায় পড়েছে।
অভিভাবকদের দাবি, শিশুশিক্ষা কেন্দ্রটিকে অবিলম্বে চালু করে প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীকে অন্তত শংসাপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে সুশান্তবাবু বলেন, “আমাদের পাশের গ্রাম গুমুখবেড়িয়ায় যে প্রাথমিক স্কুল রয়েছে সেটি প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে। অত দূরে যেতে হলে গ্রামের অনেক ছেলেমেয়ে পড়া ছাড়বে। আমাদের গ্রামের শিশুশিক্ষা কেন্দ্রটিকেই ফের চালু করতে হবে।”
নাসিরুদ্দিন বলেন, “বর্তমানে পঞ্চায়েত সমিতির অধীন শিশুশিক্ষা কেন্দ্রগুলির জন্য যে কমিটি রয়েছে তার সভাপতি হলেন উলুবেড়িয়ার মহকুমাশাসক। তাঁর কাছে আবেদন জানিয়েছি, পাশের কোনও শিশুশিক্ষা কেন্দ্র থেকে এক জন শিক্ষিকা এনে যেন বন্ধ শিশুশিক্ষা কেন্দ্রটিকে ফের চালু করা হয়।” নাসিরুদ্দিন এ কথা বললেও মহকুমাশাসক দেবকুমার নন্দনের দাবি, বিষয়টি তিনি জানেনই না। দেবকুমারবাবু বলেন, “সমস্যাটি গুরুতর। দু’এক দিনের মধ্যে শিশুশিক্ষা কেন্দ্রটিকে কেন্দ্র করে যে সমস্যা হয়েছে, তার সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.