জোনাল কমিটিতে ঠাঁই হল না সুহৃদ, অরূপ-সহ ১৭ নেতার
বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের পরে হুগলিতে সিপিএমের জোনাল কমিটিগুলি থেকে বাদ গেলেন অন্তত ১৭ জন তাবড় নেতা।
বছর চারেক আগেও যে সুহৃদ দত্ত ছিলেন ‘দলের সম্পদ’, সিপিএমের সেই সিঙ্গুর জোনাল কমিটির সম্পাদককে এ বার পদ থেকে সরতে হল। এমনকী, জোনাল কমিটিতেও জায়গা হল না তাপসী মালিক হত্যাকাণ্ডে এই অভিযুক্তের।
দীর্ঘদিন ধরে ধনেখালিতে সিপিএমের ‘শেষ কথা’ বলতেন বিমল মাঝি। ধনেখালি জোনাল কমিটির এই প্রাক্তন সম্পাদকেরও এ বার ঠাঁই হয়নি কমিটিতে। জাঙ্গিপাড়ায় সিপিএমের এক সময়ের ‘একচ্ছত্র অধিপতি’ অরূপ বসুমল্লিককে আগেই দলের জেলা কমিটি থেকে ছেঁটে ফেলা হয়েছিল। জাঙ্গিপাড়া জোনাল কমিটির শেষ দু’দফার এই সম্পাদকও জোনাল কমিটিতে ঠাঁই পাননি।
তালিকা এখানেই শেষ নয়। যে আরামবাগ কেন্দ্র লোকসভা ভোটে সিপিএমের মুখরক্ষা করেছিল, সেই আরামবাগ জোনাল কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন ৫ নেতা। পাশাপাশি, বলাগড়, বাঁশবেড়িয়া, উত্তরপাড়ার দাপুটে সিপিএম নেতাদেরও এ বার জায়গা হয়নি জোনাল কমিটিতে। এর পিছনে দলীয় গঠনতন্ত্র মেনে কর্মী-সদস্যদের ইচ্ছাকেই ‘মর্যাদা’ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি জেলা সিপিএমের শীর্ষ নেতাদের। দলের একাংশও মনে করছে, লোকসভা থেকে বিধানসভা ভোট পর পর জেলায় যে ভাবে দল পর্যুদস্ত হয়েছে, তাতে ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ করতে এ ছাড়া আর উপায় ছিল না। কেননা, মানুষের কাছে ওই সব নেতার গ্রহণযোগ্যতা তলানিতে ঠেকেছিল।
এর পরেও জেলায় সিপিএম চাঙ্গা হতে পারবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। যে সমস্ত বিষয় বড় অংশের কর্মীদের ভাবাচ্ছে, তা হল-
বড় নেতারা বাদ যাওয়ায় দলের হাল ধরার তেমন কেউ থাকছেন না।
জোনাল কমিটিগুলিতে নতুন যাঁরা সদস্য হয়েছেন, তাঁদের মধ্যেও কারও কারও ভাবমূর্তি ‘স্বচ্ছ’ নয়।
পশ্চিম মেদিনীপুরে তপন ঘোষ, সুকুর আলি থেকে শুরু করে এন্তাজ আলি, অনুজ পাণ্ডেরা সকলেই স্বপদে রয়ে গিয়েছেন। সুচপুর গণহত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত নিত্যনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ও নানুর জোনাল কমিটির সদস্য হিসাবে পুনর্বহাল হয়েছেন। তা হলে হুগলিতে কেন এই ছবি?
এই সব প্রশ্ন আসন্ন জেলা সম্মেলনেও উঠতে পারে বলে মনে করছেন জেলা সিপিএমেরই একাংশ। যা ‘অমূলক’ বলে জানিয়েছেন জেলা সিপিএমের শীর্ষ নেতারা।
লোকসভা ভোটে হুগলিতে সিপিএম ধরে রাখতে পেরেছিল শুধু আরামবাগ। পুরভোটেও জেলার ১৩টি পুরসভার মধ্যে কেবল আরামবাগ ধরে রাখতে পারে তারা। বিধানসভায় ১৯টি কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র দু’টিতে জেতে (গোঘাট ও পাণ্ডুয়া) বামেরা। এত জন দাপুটে নেতা বাদ পড়ার পিছনে এই সব কারণই কাজ করেছে বলে সিপিএম সূত্রের খবর।
২০০৬ সালে সিঙ্গুরে তাপসী মালিক হত্যাকাণ্ডে সুহৃদ দত্তের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছিল সিপিএম। সিবিআই গ্রেফতার করে সুহৃদবাবুকে। তবু ২০০৮ সালে তিনিই জোনাল কমিটির সম্পাদক হন। বিমান বসু সেই সময়ে তাঁকে ‘দলের সম্পদ’ বলে চিহ্নিত করেছিলেন। সুহৃদবাবু বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। দলীয় নেতৃত্বের দাবি, ‘শারীরিক অসুস্থতা’র কারণেই সুহৃদবাবুকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁকে জোনাল কমিটির সদস্য হিসাবে কেন রাখা হল না, তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা মেলেনি। সিপিএমের একটি সূত্রের খবর, সিঙ্গুরে দলের ‘কোণঠাসা’ হয়ে পড়ার পিছনে সুহৃদবাবুর ‘ভাবমূর্তি’ একটি বড় কারণ।
জাঙ্গিপাড়ায় দলের ‘একচ্ছত্র অধিপতি’ ছিলেন জোনাল সম্পাদক অরূপ বসুমল্লিক। দল সূত্রে খবর, বিধানসভা ভোটে জাঙ্গিপাড়ায় দলীয় প্রার্থীর হয়ে সে ভাবে প্রচারে দেখা যায়নি অরূপবাবুকে। তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাও চলছে। পেশায় স্কুলশিক্ষক অরূপবাবুর বিরুদ্ধে পেশাগত ক্ষেত্রেও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় তদন্ত চলছে। এই সব কিছুই এ বার কমিটিতে তাঁর থাকার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়েছে।
আরামবাগ জোনাল কমিটি থেকে বাদ গিয়েছেন সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন, পুরপ্রধান গোপাল কচ, প্রাক্তন গ্রন্থাগার মন্ত্রী নিমাই মাল, সমীর চক্রবর্তী এবং অমিয় মোহন্ত। মোজাম্মেল হোসেন ও গোপালবাবু বাদ পড়ার পিছনে তাঁদের ‘দলের চেয়ে বড়’ ভাবমূর্তি কাজ করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বড় নেতাদের বাদ পড়ার পিছনে দলের ‘গোষ্ঠী-রাজনীতি’কেও দুষেছেন অনেকে। বহু বছর ধরেই জেলায় দুই প্রাক্তন সাংসদ রূপচাঁদ পাল এবং অনিল বসু গোষ্ঠীর লড়াই বিদ্যমান। তার মধ্যে পড়েই এ বার ধনেখালি জোনাল কমিটির সদস্য তথা প্রাক্তন সম্পাদক বিমল মাঝি, বলাগড়ের জীবন মণ্ডল, ভুবন মণ্ডল (প্রাক্তন বিধায়ক)-সহ জেলার অন্তত ৭ নেতা বাদ পড়েছেন বলে অভিমত সিপিএমের একাংশের। অনিলবাবুর দাবি, “দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নতুন জোনাল কমিটি গড়া হয়েছে। কর্মী-সদস্যদের ইচ্ছাকেই মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এর পিছনে অন্য কারণ নেই।” একই বক্তব্য রূপচাঁদবাবুরও।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.