শিক্ষার অঙ্গনে শান্তি ছিল, এখন অশান্তি নেমেছে। শান্তি ভাল, অশান্তি খারাপ? রায় দিয়ে দেব?
যে শান্তি ছিল, সে কেমন শান্তি? প্রশ্নটা তোলা দরকার। এত দিন এই প্রশ্নটাও তোলা যেত না। বলছেন
নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী |
এখন প্রত্যেকেই খুব রেগে। রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা অন্ধকারে চলে গেছে বলে মন্তব্য শুনছি। চার দিকে চাপান-উতোর-চাপান। বিরোধীরা স্মিতহাস্যে আপন কালের শান্তি-চৌতিশি পাঠ করছেন। আছেন বাহিরিক জনেরাও তাঁরা এত দিন শ্মশানঘাটে কালো কাপড়ের তলায় দাঁড়িয়ে উত্তানপাদ মৃতের পাশে বাষ্পাচ্ছন্ন পরিজনের খচাক্-ছবি তুলেও কোনও শান্তিই পেতেন না। অথচ এখন ঘটনা ঘটছে তাঁরা এখন অনন্ত ঘূর্ণনে হতাহতের হাত থেকে পড়ে যাওয়া নস্যির কৌটো নিয়েও যে আধ ঘণ্টা কথা চালিয়ে যেতে পারেন এটা জেনেও সংযম আসছে না কারও। ফলে কথা বাড়ছে, শুধু কথা, অনন্ত ব্রহ্মশব্দ ব্যয়িত হচ্ছে এমন একটা বিষয়ে, যা অধ্যাপক-অধ্যাপিকা এবং স্থানীয় শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের হস্তক্ষেপেই মিটে যেতে পারত। কিন্তু মিটিয়ে দিলে রাজনীতি চরিতার্থ হয় না, রাজনীতির স্বার্থ রক্ষিত হয় না, দলের প্রচার হয় না সব চেয়ে বড় কথা, নানান মজাও হয় না। এ অবস্থায় কথা বলতে সংকোচ হচ্ছে, কেননা প্রত্যেকের গায়ে ফোসকা পড়ছে। এই বৃদ্ধ-লেখনীতে ‘সর্ব চিত্ত নারি আরাধিতে’।
প্রথমত জানাই, শিক্ষা এত সহজে অন্ধকারে ডুবে যায় না। শিক্ষকরা এর আগেও অনেক মার খেয়েছেন, দিনের পর দিন ক্লাস না-হওয়া জীবন আমার ছাত্রাবস্থাতেই ঘটেছে। ছাত্র-আন্দোলনের জেরে নির্ধারিত পরীক্ষা দু’বছর পরে দিয়েছি, কর্মজীবন থেকে এক-এক জনের বাদ চলে গেছে দুই-তিন-চার বছর। কিন্তু তার পরেও শিক্ষাব্যবস্থায় তথাকথিত সুস্থিতি এসেছে, এসেছে তথাকথিত শান্তিও। কাজেই আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা নিত্য এবং বিভু বস্তু কাল-দোষে, দ্রোহস্পর্শে মাঝে মাঝে দুষ্ট হয় বটে, কিন্তু আবারও সালোকসংশ্লেষে পুষ্টিলাভ করে। বিশেষত, এই পশ্চিমবঙ্গে ছাত্র-রাজনীতি রীতিমত গবেষণার বিষয়। উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করলে এর গণতান্ত্রিক উৎসের সঙ্গে অগণতান্ত্রিক দলীয় প্রবণতার একটা প্যাটার্ন এক লহমায় বার করে ফেলতে পারবেন গবেষকরা। আর আমরা যারা কলেজ-ইউনিভার্সিটির শিক্ষক হয়ে সাক্ষী-চৈতন্যের মতো ছাত্র-রাজনীতি এবং প্রতিবাৎসরিক ছাত্র-নির্বাচন দেখে গেলাম, তাদের অভিজ্ঞতাটা উপরিস্তরে যান্ত্রিক মনে হলেও অযান্ত্রিক মনে এখনও তার গভীর প্রভাব। |
ভাঙচুরের পর। বেহালা কলেজ। ১৯ ডিসেম্বর, ২০০৯। ছবি: প্রদীপ স্যান্যাল |
মেনে নেওয়াই ভাল, রাজ্যে যে-দল সরকারে আসে, সেই দলের একটা সার্বিক প্রভাব পড়ে কলেজগুলির ছাত্র-সংসদীয় নির্বাচনে। এ ব্যাপারে ছাত্রদের যত না উৎসাহ, তার চেয়ে অনেক বেশি উৎসাহ প্রত্যেক বেসরকারি কলেজের চার পাশের পরিমণ্ডলে। একটি কলেজের ছাত্রছাত্রীদের নির্বাচনে জিতিয়ে এনে সংসদে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে অঞ্চলের সম্পূর্ণ যুবশক্তি যেমন একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর হাতে চলে আসে, তেমনই সংসদের মাধ্যমে কলেজের পরিচালন ব্যবস্থা তথা তার নৈতিক এবং অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তের মধ্যেও দলকে প্রতিষ্ঠা করা যায়। এত দিন তা-ই চলেছে। অতএব, যে মূল ভাববস্তুর তাড়না থেকে কলেজের ছাত্র-সংসদীয় নির্বাচন হওয়া উচিত ছিল অর্থাৎ, কলেজের পঠনপাঠন, ছাত্রছাত্রীদের সুবিধা-অসুবিধা, প্রাতিষ্ঠানিক সমস্যায় সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের উত্তরণ করে নিয়ে যাওয়া এই সব কবেই অতলান্তে গেছে কলেজে ছাত্রছাত্রীদের পঠনপাঠনের মূল্যে আত্মলাভ এবং দলীয় লাভ করেছেন রাজনৈতিক নেতারা।
যখন কলেজে পড়তে ঢুকি, তখন নকশাল আন্দোলন চলছে, অতএব কলেজে কলেজে ছাত্র-সংসদীয় নির্বাচনের কোনও তাৎপর্য ছিল না। বাহাত্তর সালে অজয় মুখোপাধ্যায় সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক শাসন কঠিন হয়ে উঠেছিল নকশাল দমনের ভাবনায়। কিন্তু সে সময় বিভিন্ন কলেজে কংগ্রেস প্রভাবিত ছাত্র পরিষদ যে ভাবে টপাটপ ছাত্র সংসদে নির্বাচিত হতে থাকল, তা অল্প বয়সেও আমার বিস্ময় উৎপাদন করত। এমনও হয়েছে, ‘ছাত্র-সংসদ’ বলতে গিয়ে অনেকে ছাত্র পরিষদ বলে ফেলত। সাতাত্তরে বামেরা যখন বিপুল উল্লাসে জয়ী হয়ে এলেন, তখনই প্রতিদ্বন্দ্বিতার শুরু। স্মরণীয়, তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু নকশাল নেতাদের রাজনৈতিক ‘রিহ্যাব’ তৈরি করে দেওয়ায় নকশাল-অবশেষ ছাত্ররা যারা রাজনীতিতে আসত, তারা অনেকেই কমিউনিস্ট আন্দোলনের হাল-হকিকত-জানা পড়াশুনো করা ছেলে। কলেজ-সংসদের নির্বাচনেও তারা টপাটপ চলে আসেনি। সমাসীন ছাত্র-সংসদীয় দলের সঙ্গে তাদের লড়াই হত, সংঘর্ষ হত এবং অধ্যক্ষ-অধ্যাপক নিগ্রহের ঘটনাও মোটে বিরল ছিল না। মনে আছে, কর্মারম্ভে যখন নবদ্বীপ বিদ্যাসাগর কলেজে পড়াতাম, সেখানে কলেজে নির্বাচনের আগে প্রায় প্রতি বছর একটা-না-একটা ছাত্র খুন হতে দেখেছি। কলকাতার কলেজগুলির সঙ্গে মফস্সল শহরের ছাত্র-রাজনীতির গতিপ্রকৃতি কিন্তু আলাদা, তাদের সংঘর্ষের প্রকৃতিও আলাদা।
আমার সম্পূর্ণ কর্মজীবন কেটেছে বাম সরকারের শাসনে এবং তাঁদের দলীয় মানুষদের উপশাসনে। একাশি সালে যখন কলকাতার একটি কলেজে পড়াতে আসি, তখন বামপন্থী ছাত্র সংগঠন অনেকটাই তাদের জমি পেয়ে গেছে। ছাত্র-সংসদের নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা, সংঘর্ষ তখনও যথেষ্ট ছিল এবং সেটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল বলেই ছিল। নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই, রাত আটটা পর্যন্ত ব্যালট গোনা চলছে আমাদের তত্ত্বাবধানে, একটি-দু’টি ব্যালট নিয়ে বিতর্কও চলেছে, কিন্তু বেশির ভাগ আসনে যেহেতু বামেরাই জিতে যাচ্ছিল, তাই সংঘর্ষের মাত্রা কমে আসছিল। বামেদের ‘সিচুয়েশন হ্যান্ডল’ করার সুচতুর কৌশল, বিরোধী প্রত্যেকটি ব্যক্তি-ছাত্রকে তার পরিবার-সহ একেবারে পাড়া থেকে বাবার অফিস, বোনের টিউশন-মাস্টার থেকে ভাইয়ের স্কুল-পথের সাথীকে পর্যন্ত জরিপ করার ক্ষমতা এবং তদনুযায়ী সামাজিক এবং রাজনৈতিক ভাবে দেখে নেওয়ার ক্ষমতা এই সব কিছু এমন অন্তঃস্রোতা প্রক্রিয়ায় সিদ্ধ হত, যে বিরোধীদের জায়গা শিথিল হয়ে উঠছিল ক্রমাগত। এখানে ক্যামেরার চোখ পড়া সম্ভব ছিল না।
আরও একটি বড় ঘটনা শিক্ষাক্ষেত্রের সার্বিক রাজনীতিকরণ। প্রায় প্রত্যেকটি কলেজের অধ্যক্ষ বামফ্রন্টের, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অধিকাংশ স্বপ্রয়োজনে সুস্থ থাকার কারণে বাম সমর্থক, ‘গভর্নিং বডি’র অধিকাংশের বামা গতি, শিক্ষাকর্মী-ইউনিয়ন বাম, ছাত্র-ইউনিয়ন বাম এই ‘তোমায় আমায় একত্তর’ ভয়ংকরী যাত্রার মধ্যে শিক্ষক-ছাত্র এবং শিক্ষাকর্মীদের যে ক’টি মানুষ বাম সমর্থক নন বলে মনে করা হত, তাদের ওপর ব্যক্তি-নজরদারি ছিল এমন পর্যায়ের, যাকে নিস্তব্ধতার কবি জীবনানন্দ সযত্নে বলেছেন ‘সকলেই আড় চোখে সকলকে দেখে’। শিক্ষার এই নিস্তব্ধ নৈরাজ্যের মধ্যে বেসরকারি কলেজে ছাত্রভর্তির প্রধান কারিগর ছিল বাম ছাত্র-সংসদ। নাম কা ওয়াস্তে মেধা-তালিকা বেরত বটে, কিন্তু কাজের কাজ আগেই হয়ে যেত এবং হত পরেও। কলেজে-কলেজে লম্বা লাইন, অথচ ভর্তির সময় আসন খালি। তখন ভর্তি হওয়ার জন্য ছাত্র-অভিভাবকেরা ইউনিয়নকেই ধরত। তারাই ছাত্র ভর্তি করাত অধ্যক্ষদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে। ভোট-ব্যাংক হয়ে যেত এখানেই। অধ্যাপকেরা প্রতিবাদ করলে শুনেছি শিক্ষার সম্প্রসারণে বাধা দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ, আপনি চিহ্নিত হলেন।
এই রকম শান্ত-স্নিগ্ধ শিক্ষার পরিবেশে সেটা ’৯১-’৯২ সাল হবে আমার কলেজের ছাত্র-সংসদের নির্বাচনে এস এফ আই জিতল। বাইরে আবির গুলালে হোলি। একটি ছাত্র সোচ্ছ্বাসে ঊর্ধ্ববাহু হয়ে বলল স্যর! সব ‘নিল’ হয়ে গেছে। অর্থাৎ এক জনও বিরোধী নেই। ঘটনাটা শিক্ষক-সহকর্মীদের কাছে জানিয়ে বলছিলাম এটা কি কোনও গণতান্ত্রিক পদ্ধতি হল? বামপন্থী সহকর্মীরা ততোধিক ভদ্র স্বরে বললেন কী আর করবে, দাদা! যা ঘটছে, তা-ই তো মেনে নিতে হবে। এক বাম শিক্ষক সবে গড়গড়া খাচ্ছেন এবং তখনও উচ্চস্তরের নেতাদের মতো নির্বাকসিদ্ধি ঘটেনি, তিনি একটু গলা চড়িয়ে বললেন নির্বাচন তো গণতন্ত্র মেনেই হচ্ছে। কেউ মনোনয়নপত্র জমা না দিলে সেটা কি ছাত্র-ইউনিয়নের দোষ? ‘অধিকারী মনে করিলেন সকলই বুঝাইলেন। কপালকুণ্ডলা মনে করিলেন, সকলই বুঝিলেন।’
ছাত্র-সংসদের নির্বাচনের সময় একটা শব্দ খুব চলতি হয়ে ওঠে, সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হলে এই শব্দ পুনরাবৃত্ত হতে থাকে এই শব্দের সংজ্ঞা-নির্ণয় খুব কঠিন ‘বহিরাগত’। আমরা জানি, প্রত্যেকটি কলেজের ইউনিয়ন বহিরাগতরাই চালায়। কলেজের প্রত্যেকটি প্রাতিষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত এবং আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে কলেজের নাম-লেখানো সংসদীয় ছাত্ররাই যদি মতামত দিত, তবে প্রত্যেকটি কলেজের চেহারা অন্য রকম হত। কলেজের প্রতিবাৎসরিক নির্বাচনে বহিরাগতরাই নেপথ্য-সূত্রধার। পূর্বতন সম্পাদক-সভাপতিরা বৃহত্তর রাজনৈতিক দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে-আসা কলেজের নতুন সভাপতি-সম্পাদকদের যে ভাবে ‘স্ট্রিম’ করে তুলতেন, তাতে সমান্তরাল শাসনে সেই বহিরাগতকেই প্রকৃত অধ্যক্ষ বলে মনে হত। তবে কলেজে বহিরাগতদের এই মহা-সমাগমের আর একটি বড় কারণ অবশ্যই ছাত্র-ইউনিয়নের খাতে বরাদ্দ অর্থ। তিন-চার লাখো অংকের এই অর্থ ছাত্রছাত্রীদের কোন কাজে লাগত বলা মুশকিল। তবে কিছু খাত আছে, গালভরা নামও আছে, সেখানেও দল ভারী করার রাজনীতি আছে এবং বহিরাগতদের প্রয়োজনীয় মধু। কলেজের ইউনিয়ন খাতে নির্ধারিত অর্থ যদি কমানো যায়, তবে বহিরাগতের আনাগোনা এক-চতুর্থাংশে নেমে যাবে। সংঘর্ষও কমে যাবে অনেক।
গত কুড়ি বছরে শিক্ষাক্ষেত্রে যে তথাকথিত শান্তি দেখা গেছে এবং একটি সাংবাদিকের ক্যামেরাও যে সেখানে ‘প্যান’ করার সুযোগ পায়নি, তার কারণ অবশ্যই ‘ফাংশনস অব ডিসিপ্লিন’-কে কী ভাবে ‘অ্যাপারেটাস অব পাওয়ার’ হিসেবে ব্যবহার করা যায়, তার উদাহরণ। মিশেল ফুকোর দুর্ভাগ্য, অধ্যক্ষ-শিক্ষক-ছাত্রদের ‘একত্তর’ রাজনীতিতে তাঁর ‘প্যান-অপটিসিজিম’-এর তত্ত্ব যে কত মধুর ভাবে ব্যবহার করা যায়, তা তিনি দেখেননি। এখানে ছাত্রভর্তি বা সংসদ নির্বাচনের সময় অধ্যক্ষের টেবিলের কাচ ভাঙা পড়লে, অধ্যক্ষ তাঁদের টেবিলের অসমান ‘সারফেস’ নিয়ে বেশি চিন্তা করতেন, ছাত্রদের মুষ্টিযোগ সেখানে তান্ত্রিক উপাদান মাত্র সাংবাদিকের ক্যামেরা এই প্যান-অপটিসিজম-এর ধারে-কাছেও আসার সুযোগ পাবে না। পেত না।
এই রকম একটা তুষার-শান্ত ‘একত্তর’ রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে অন্যতর রাজনৈতিক পরিবর্তন এসেছে এবং শিক্ষার গণতন্ত্রীকরণের চেষ্টা চলছে সদর্থক প্রেরণায়। ম্যানেজমেন্ট-এর পরিভাষায়, এই রকম জগদ্দল পরিস্থিতিতে প্রথমেই একটা ‘স্টর্মিং’-এর প্রবৃত্তি আসে, তার পরেই ফর্মিং হয়। তাতে ইউনিভার্সিটি এবং কলেজগুলির ক্ষেত্রে যে ‘এমবার্গো’ তৈরি হয়েছিল, কলেজ ইউনিয়নের নির্বাচনী ক্ষেত্রেও সেই ‘এমবার্গো’ আসা উচিত ছিল। তাতে সুবিধা হত এই যে, কুড়ি বছর ধরে যারা কথাই বলতে পারেনি, তারা কথা বলার সুযোগ পেত এবং রাজনৈতিক ভাবে প্রত্যেক ছাত্রই নিজেদের পছন্দের কথা বলতে পারত, রাজনৈতিক তথা সাংগঠনিক প্রক্রিয়াও চলতে পারত সেই পথে, সময় নিয়ে।
মনে রাখতেই হবে, প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই এত দিনের রাজনীতিতে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পরিণত । এখানে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সামান্য কিছু অন্য রকম ঘটলেই জটিলা-কুটিলা বামে / কুলে-শীলে ধরি টানে। মনে রাখতেই হবে, এতগুলি কলেজে অধ্যক্ষের চেয়ারে যে-সব মনোনীত মানুষেরা বসে আছেন, বিরাট সংখ্যায় যে-সব অধ্যাপক কলেজে কলেজে বিরাজমান, তাঁরা আযৌবন অভ্যস্ত এক বিশেষ রাজনৈতিক ঐতিহ্যের মিশ্র ক্রিয়া বহন করছেন অন্তরে অন্তরে। এত কালের কৃতজ্ঞতায় তাঁদের লালিত ধারণা এক ধাক্কায় পরিবর্তন করে দেওয়া সম্ভব নয়। শিক্ষা ব্যবস্থার নিম্ন স্তরে, বিশেষত যুব স্তরের মানসিকতায় পরিবর্তন না এনে থাকলে এত বড় রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটত না। কিন্তু তার প্রতিফলন যখন কলেজে কলেজে পড়তে যাচ্ছে, সেখানে সংঘর্ষ তৈরি হচ্ছে কারণটা সহজেই অনুমেয়। তা ছাড়া, যে বুদ্ধিতে পূর্বে একটির পর একটি কলেজে বিরোধীদের ‘নিল’ করে দেওয়া গেছে, সেই বুদ্ধিতেই যদি নিউটনের তৃতীয়
গতিসূত্র মেনে সমান প্রতিক্রিয় হয়ে ওঠে পরিবর্তিত ছাত্ররা, তা হলে সংঘর্ষ অবশ্যম্ভাবী। তা করারও দরকার নেই। পূর্বের রাজনৈতিক পরম্পরা তোমাকে সংঘর্ষের পথে নিয়ে যাবেই এবং এই সংঘর্ষে অধ্যক্ষ-শিক্ষকরা যেহেতু ‘টার্গেট’ হয়ে পড়ছেন, অতএব সেখানে রাজনৈতিক বোধ, ধৈর্য এবং সংযম আরও বেশি প্রয়োজন হয়ে ওঠে। আরও সংযম প্রয়োজন মৌখিকতায়।
বৈষ্ণব পদাবলিতে জ্যোৎস্নাভিসারের গতি-ভঙ্গি, বেশ-বাস যে রকম, বর্ষাভিসারে তেমন নয়। বর্ষাভিসারে চলার জন্য রাইকিশোরীকেও ঘরে জল ঢেলে পা-পিছলে দাঁড়িয়ে ওঠা অভ্যাস করতে হয়। রাজনীতিতেও সেটা আছে এবং রাজনৈতিক ভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতেই হবে আর অভিসারে কথা বলতে নেই বেশি অভ্যাসটাই সেখানে বড় প্রয়োজন
কেবলই সময়ান্তর এসে পড়ে সভ্য পৃথিবীতে;
বারবার অপরাহ্ণের মৃত্যু হয়।
জানে না কী বস্তু নিয়ে তৃপ্ত হতে হবে
পুরাতন খসড়ায় অথবা বিপ্লবে।
হায় জীবনানন্দ! কবি ক্রান্তদর্শী! |