তিন মাস বন্ধ থাকার পর খুলতে চলেছে সোনাই-এর ভুবনভ্যালি চা-বাগান। খুশি শ্রমিকরা, খুশি জেলা প্রশাসনও। সোমবার এক ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে ঠিক হয়েছে, আগামী ৩০ জানুয়ারির মধ্যেই বাগান খোলা হবে।
কাছাড় জেলার এই বাগানে ৫০০ শ্রমিক এবং প্রায় ৫০ জন অফিসকর্মী রয়েছেন। এখানে সমস্যার শুরু বেশ ক’বছর আগেই। শ্রমিক অসন্তোষে ম্যানেজার জিকেএস আওধানি বাগান ছাড়তে বাধ্য হন। পরবর্তী ম্যানেজারও এখানে বেশি দিন কাজ করতে পারেননি। শেষে বাগানেরই স্টোরকিপার, ফুলন বড়ভুইয়াকে দেখভালের দায়িত্ব দেয় মালিকরা। কিন্তু অবস্থার কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না বলে গত অক্টোবরে মালিকপক্ষ বাগান বন্ধ করে দেয়।
এতে শ্রমিকরা চরম সঙ্কটে পড়েন। বরাক চা শ্রমিক ইউনিয়ন জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করে। জেলা প্রশাসনের তরফে সোমবার দুই পক্ষকেই বৈঠকে ডাকা হয়। সেখানে উপস্থিত হয়ে মালিক-প্রতিনিধি সুব্রহ্মনিয়ম কৃষ্ণন নতুন করে কাজকর্ম শুরু করার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। সিদ্ধান্ত হয়, ৩০ জানুয়ারির মধ্যে বাগান খোলা হবে। তার আগে শ্রমিকদের হাজিরা বাবদ বকেয়া, সাত লক্ষ টাকার মধ্যে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা মালিকরা মিটিয়ে দেবেন। গ্র্যাচুয়িটির ৪০ লক্ষ টাকারও ৫০ শতাংশ দ্রুত মেটানো হবে। ধীরে ধীরে দেবেন প্রভিডেন্ট ফান্ডের ১ কোটি ৮ লক্ষ টাকা। |
ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে মালিকদের উপর চাপ তৈরি করতে, বাগান পঞ্চায়েতের সভাপতি ইন্দ্রজিৎ দোষাদ ও সম্পাদক দুলাল রুহিদাস অভিযোগ করেন, ভুবনভ্যালি বাগানে তিন মাসে অন্তত ন’জনের অনাহারে মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা মৃতদের তালিকাও পেশ করেন। তালিকায় রামেশ্বরী কুর্মী (৪৫), সুভাষিণী পাল (৮০), শচীন্দ্র রী (৩২), শ্যামাচরণ বাউরি (৫৫), নগেন্দ্র বাউরি (৫৫), সোনামণি পাণ্ডে (৪০), ভারতী কল (৪৫), সুষম তাঁতি (৩৫) এবং রত্না গোয়ালার (৫০) নাম রয়েছে। ফুলন বড়ভুইয়া বৈঠকেই অনাহার মৃত্যুর কথা অস্বীকার করেন। জেলা প্রশাসনও ওই দাবি খারিজ করে দেয়। অতিরিক্ত জেলাশাসক দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মালিকপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টির জন্যই এখন এই অভিযোগ করা হচ্ছে। এত দিন তাঁরা কিছু বলেননি। এই বৈঠকে ওই তথ্য দেওয়ার জন্য চুপ করে বসেছিলেন নাকি?” দেবাশিসবাবু বলেন, এ বার পুজো বোনাসও শ্রমিকদের দেওয়া হয়েছে। তাঁর আশা, ৩০ জানুয়ারির মধ্যে বাগানে কাজ শুরু হবে। বাগান খুললেই আস্তে আস্তে সব সমস্যার সমাধান হবে।
বাগান শ্রমিক নেতা ইন্দ্রজিৎ দোষাদ পরে জানান, এই বাগানে সমস্যা দীর্ঘদিনের। হাজিরার টাকা, রেশনসামগ্রী, সবই অনিয়মিত। জমা পড়ে না প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুয়িটির টাকাও। তবু শ্রমিকরা কাজ করছিলেন। কিন্তু গত বছরের অক্টোবরে তা তীব্র চেহারা নেয়। বাগান পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। সবাই পরিবার নিয়ে সঙ্কটে পড়েন। অনেকে জঙ্গল থেকে কাঠ-কুটো সংগ্রহ করে বিক্রি শুরু করেন। কেউ আবার পানজুমে দিনমজুরের কাজে লেগে যান।
কিন্তু ক’জনের আর ওই সব কাজ মেলে! ফলে জঙ্গলের আলু-কচু কুড়িয়ে এনে পেট ভরানোর চেষ্টা করেন শ্রমিকদের একাংশ। এই অবস্থা থেকে রেহাইয়ের জন্য শ্রমিকরা সকলেই বাগান খোলার জন্য মুখিয়ে আছেন। |