পরশুরাম কুণ্ডে মকর স্নান লাখ ছাড়াল
ত বার সংখ্যাটা ছিল ৮০ হাজার। এ বার ঠান্ডার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পুণ্যার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। পরিবেশ বিতর্কে জেরবার পরশুরাম কুণ্ডে মকর সংক্রান্তির পবিত্র স্নান করলেন লক্ষাধিক মানুষ। মেলা শেষ হতে হতে সংখ্যাটি ১ লক্ষ ২০ হাজার হতে পারে বলে মনে করছে অরুণাচলের লোহিত জেলা প্রশাসন।
১৩ জানুয়ারি থেকে অরুণাচলের লোহিত জেলায়, লোহিত নদীর অংশ, পরশুরাম কুণ্ডে তীর্থযাত্রী ও পর্যটকদের ঢল শুরু। নেপাল, মণিপুর, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, বিহার, উত্তর প্রদেশ, অসম ও অরুণাচলের নানা অংশ থেকে এখনও নাগাড়ে যাত্রীর প্রবাহ কুণ্ডমুখী। জেলাশাসক আর কে শর্মা জানান: পুলিশ, আধাসেনা ও সেনা জওয়ানরা মেলাস্থল ঘিরে রেখেছেন। চত্বর জুড়ে বিনামূল্যে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর, ইন্দো-টিবেটিয়ান বর্ডার পুলিশ (আইটিবিপি) চালাচ্ছে স্বাস্থ্য শিবির। বিবেকানন্দ কেন্দ্র, অরুণজ্যোতি, পরশুরাম সেবা সমিতি, পালি বিদ্যাপীঠের স্বেচ্ছাসেবীরা যাত্রীদের সাধ্যমতো সাহায্য করছেন। এখনও অবধি তেমন বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি। বিদ্যুৎ পরিষেবা অক্ষুন্ন রেখেছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগ। তবে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে সরু, পাহাড়ি পথে অগুন্তি গাড়ির সংখ্যা। পুণ্যার্থীদের ছোট গাড়ি থেকে বড় বাসের সারি পথ জুড়ে দাঁড়িয়ে।
অরুণাচলের লোহিত নদীর পরশুরাম কুণ্ড। ছবি: উজ্জ্বল দেব
কথিত আছে, পিতার আদেশে মা রেণুকার শিরশ্ছেদের পর, মাতৃহত্যার পাপে পরশুরামের হাতের কুঠার হাতেই আটকে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত অরুণাচলের ব্রহ্মকুণ্ডে স্নান করার পরেই পরশুরামের হাত থেকে কুঠার পড়ে যায়। সেই থেকে, পরশুরামের নামে কুণ্ডের নাম। মাতৃহত্যার মতো পাপও যে জলে ধুয়ে যায় সেখানে একটিবার মাথা ডোবাতে আকুলতা তো পূণ্যার্থীদের থাকবেই। তার উপর এই কুণ্ডের আশপাশেই রয়েছে রুদ্রাক্ষের অরণ্য। শন্শনে হাওয়া আর কনকনে বরফজলেও পূণ্যলোভকে দমাতে পারেনি। কালিকাপূরাণে বলে, এই কুণ্ডে স্নান করলে সমস্ত জাগতিক মোহ-মায়া থেকে মুক্তি মেলে। তবে পরশুরাম কুণ্ডের রমরমার শুরু অষ্টাদশ শতকে। এক সাধুর নানা অলৌকিক কাণ্ড এই কুণ্ডকে পুনরায় আলোয় ফেরায়। তবে পুরনো কুণ্ড বা কুণ্ড সংলগ্ন ধ্যানগুহা ১৯৫০ সালের ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। তার জায়গায় মাথা তুলেছে গোল পাথর ঘেরা নতুন কুণ্ড। সেখানে, জলের স্রোত ভীষণ। তাতেই শিকল আর দড়ি ধরে স্নান সারলেন ভক্তরা।
বড় বাঁধ নিয়ে বিতর্কের জেরে সুবনসিরি, লোহিত ও সিয়াং উপত্যকা এখন বিতর্কের শীর্ষে। লোহিতের নিম্নাংশে, ১৭৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ডিমৌ-নামনি প্রকল্প গড়তে চলেছে অরুণাচল সরকার। বাঁধ গড়লে পরশুরামকুণ্ডের ভূপ্রকৃতিগত বদল ঘটবে বলে পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলি ব্যাপক আপত্তি তুলেছে।
প্রস্তাবিত ১২৪.৮ মিটার উঁচু বাঁধটি কুণ্ডের ৮০০ মিটার দূরেই গড়ে ওঠার কথা। এইজন্য প্রচুর বিস্ফোরণ ঘটাতে হবে। একাধিক সুড়ঙ্গও তৈরি হবে। ধ্বংস হবে কামলাং সংরক্ষিত অরণ্যের অনেকটা অংশ। ভূকম্পপ্রবণ এই এলাকায় বড় বাঁধের ভবিষ্যৎ নিয়েও বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত নন। বাঁধ গড়ার সার্বিক ফলশ্রুতির বিষয়ে সমীক্ষা চালাবে কেন্দ্রীয় জল পরিষদ। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, ভূকম্পন বিশেষজ্ঞদের দল উপত্যাকা খতিয়ে দেখে বড় বাঁধের ভবিষ্যত নির্ধারণ করবেন। ভবিষ্যত নির্ধারিত হবে পরশুরাম কুণ্ডেরও।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.