|
|
|
|
রাজ্যের অধিকার নিয়ে সরব বিজেপি |
লোকায়ুক্ত নিয়ে মোদীর হার হাইকোর্টে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
রাজ্যপালের নিয়োগ করা লোকায়ুক্তকেই বহাল রেখে নরেন্দ্র মোদীকে ধাক্কা দিল গুজরাত হাইকোর্ট। কংগ্রেস এতে উৎসাহিত হলেও বিজেপি নেতৃত্ব যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত বলে পাল্টা প্রচারে নামল। হাইকোর্টের রায়কে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ জানানোর পাশাপাশি বিজেপি এখন বাকি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের পাশে নিয়ে কেন্দ্র তথা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আক্রমণ জোরদার করতে চাইছে। সংসদে লোকপাল বিল বিতর্কে লোকায়ুক্ত গঠন প্রসঙ্গেই কেন্দ্রের ‘দাদাগিরি’র অভিযোগ এনে ইউপিএ-র
শরিক তৃণমূল-সহ গোটা বিরোধী পক্ষ একজোট হয়েছিল। গুজরাতের লোকায়ুক্তের বিষয়েও এখন সেই একই ভাবে লড়াই চালাতে
চাইছে বিজেপি।
মুখ্যমন্ত্রী মোদীর আপত্তি সত্ত্বেও গুজরাতের রাজ্যপাল কমলা বেনিওয়াল অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আর এ মেটাকে লোকায়ুক্ত নিয়োগ করেছিলেন। তখন থেকেই রাজ্যপালের সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক বলে সরব হয়েছে মোদী সরকার। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো রক্ষার আর্জি জানিয়ে হাইকোর্টে রাজ্যপালের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেছিল তারা। গুজরাত হাইকোর্টের দুই বিচারপতি এর আগে দু’ধরনের মত জানানোর পরে আজ তৃতীয় বিচারপতি ভি এম সহায় রায় দিয়েছেন, মেটাই লোকায়ুক্ত হিসেবে বহাল থাকবেন। শুধু তা-ই নয়, বিচারপতি সহায় বলেছেন, মেটার নিয়োগ আটকাতে চেয়ে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী যে পদক্ষেপ করেছেন, তা আইনের শাসনকেই আঘাত করা এবং তা গণতন্ত্র ধ্বংস হওয়ার লক্ষণ। তাঁর কার্যকলাপই রাজ্যপালকে সংবিধানের ১৬৩ নম্বর ধারায় নিজের বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে বাধ্য করেছিল।
চলতি বছরের শেষে গুজরাত বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা। কংগ্রেস আগেও অভিযোগ করেছে, ভোটের আগে দুর্নীতি ঢাকতে লোকায়ুক্ত গঠনে বাধা দিচ্ছেন মোদী। আজ রায়ের পরে সেই আক্রমণ শানানোর সুযোগ পেল কংগ্রেস। দলের নেতা দিগ্বিজয় সিংহ আজ বলেছেন, “খুশির খবর যে দীর্ঘ এগারো বছর পরে গুজরাতে এক জন লোকায়ুক্ত নিয়োগ করা হচ্ছে।”
এই প্রচারের মোড় ঘোরাতে বিজেপি এখন দ্বিমুখী কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে। একদিকে সুপ্রিম কোর্টে এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আইনি লড়াই চালাবে বিজেপি। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাতের প্রশ্ন তুলে মনমোহন সিংহ সরকারকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চাইছে তারা। বিজেপির শীর্ষ নেতা অরুণ জেটলি বলেন, “রাজ্যপাল সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের মনোনীত। লোকায়ুক্ত নিয়োগের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকার যদি রাজ্যের উপর ছড়ি ঘোরায়, তা হলে লোকায়ুক্ত প্রতিষ্ঠানের উপর তা যেমন আঘাত, তেমনই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোও লঙ্ঘিত হয়। আজ যা গুজরাতের ক্ষেত্রে হচ্ছে, কাল বাকি রাজ্যের সঙ্গেও তা হতে পারে।”
রাজ্যপালকে দিয়ে এ ভাবে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ধর্ম ‘অবজ্ঞা করলে’ কেন্দ্রের আর্থিক সংস্কারেও যে বিজেপি সহযোগিতা করবে না, আজ ঠারেঠোরে সেটিও বুঝিয়ে দেন জেটলি। দিল্লিতে আজ বণিকসভার অনুষ্ঠানে শিল্পমহল যখন আর্থিক সংস্কার থমকে যাওয়ার অভিযোগ আনে, অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় বিরোধীদের তরফে বাধার উল্লেখ করেন। কিছুক্ষণ পরে সেই একই মঞ্চে জেটলি বলেন, “যে সরকার কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ধর্ম মানে না, বিরোধীদের থেকে তারা কী সহযোগিতা প্রত্যাশা করে?”
তাঁর বক্তব্য, পেনশন থেকে ব্যাঙ্কিং সংস্কারসব বিলে বিরোধীরা সমর্থন দিয়েছে। আর পণ্য ও পরিষেবা করের মতো বিষয়ে দল হিসাবে বিজেপি বিরোধিতা করছে না। বিজেপি শাসিত কিছু রাজ্য এর সমর্থনও করছে। আবার কিছু বিজেপি এবং অ-বিজেপি রাজ্য নিজেদের আর্থিক স্বার্থের কথা মাথায় রেখে এর বিরোধিতা করছে। তাদের ভয়, আর্থিক সংস্কারের অছিলায় কেন্দ্র রাজ্যের অধিকার খর্ব করতে চায়।
জেটলির অভিযোগ, বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির কয়েক ডজন বিল রাজ্যপাল আটকে রেখেছেন। মায়াবতী সরকার বা নবীন পট্টনায়ক সরকারের প্রতিও মনমোহন সরকার বৈমাতৃসুলভ আচরণ করছে। কেন্দ্র রাজ্যগুলির আস্থা অর্জন করতে না পারলে পণ্য-পরিষেবা কর নিয়ে রাজ্যের ভয়ও দূর হবে না। |
|
|
|
|
|