পড়াতে হবে দাঁড়িয়ে, স্কুলের ফরমানে বিতর্ক
স্কুলে শিক্ষিকারা কী পোশাক পরবেন, সেই পোশাকের রং কী হবে এ সব নিয়ে বিভিন্ন স্কুল-কর্তৃপক্ষের ফতোয়া নতুন কিছু নয়। এ বার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পড়ানোর ধরন নিয়ে ফতোয়া জারি করে নতুন বিতর্ক তৈরি করলেন ভবানীপুরের খালসা হাইস্কুল-কর্তৃপক্ষ। তাঁদের ‘নির্দেশ’, শিক্ষক-শিক্ষিকারা ক্লাসে পড়ানোর সময়ে বসতে পারবেন না। পড়াতে হবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। এই নির্দেশের প্রতিবাদে বুধবার থেকে কর্মবিরতি শুরু করেছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। যার জেরে পড়াশোনা শিকেয় উঠেছে ওই স্কুলে। শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, কর্তৃপক্ষ নির্দেশ প্রত্যাহার না-করলে তাঁদের আন্দোলন চলবে।
রাজ্যের সরকারি, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলি মধ্যশিক্ষা পর্ষদের নিয়মে পরিচালিত হয়। সেই নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষিকাদের পোশাক বা পড়ানোর ধরন নিয়ে ফতোয়া জারি করার কোনও এক্তিয়ার নেই স্কুল-কর্তৃপক্ষের। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সচিব শান্তিপ্রসাদ সিংহ বুধবার এ প্রসঙ্গে বলেন, “স্কুল-কর্তৃপক্ষ যদি এমন নির্দেশ দিয়ে থাকেন, তা হলে তা অত্যন্ত অনৈতিক কাজ। কে কী ভাবে পড়াবেন, তা ওই শিক্ষক বা শিক্ষিকাদের নিজস্ব ব্যাপার। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষ কিছু চাপাতে পারেন না।”
ভবানীপুরের খালসা হাইস্কুলের ক্লাসঘর। নেই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের
বসার কোনও জায়গা। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
খালসা স্কুল সূত্রের খবর, বেতন ও অন্যান্য আর্থিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে গত কয়েক মাস ধরেই স্কুল-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মতবিরোধ চলছিল। গত ৯ জানুয়ারি স্কুল-কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দিয়েছিলেন, ক্লাসঘরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পড়াতে হবে। তার পরেই বিবাদ চরমে ওঠে।
এক শিক্ষিকা বলেন, “উপযুক্ত বেতন এবং অন্যান্য আর্থিক সুবিধা পাওয়ার দাবি জানানো হলে স্কুল-কর্তৃপক্ষ শো-কজ করেন এবং চাকরি থেকে ছাঁটাইয়ের হুমকি দেন। এখন আবার ওঁরা দাঁড়িয়ে পড়ানোর ফতোয়া জারি করেছেন। এমনকী, ৯ জানুয়ারি থেকে সব ক্লাসে শিক্ষকদের বসার চেয়ারও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।” শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দাবি, তার পরেও এক সপ্তাহ তাঁরা নিয়মিত ক্লাস নিয়েছেন। কারণ, স্কুল-কর্তৃপক্ষ এই নির্দেশ প্রত্যাহার করে নেবেন বলে আশা করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু তা না-হওয়ায় বুধবার সকাল থেকে ৮০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্মবিরতি শুরু করেছেন। সমস্যা না-মিটলে অনির্দিষ্ট কালের জন্য এই আন্দোলন চলবে বলেও জানান তাঁরা।
এ দিন ওই স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের ভিতরে একসঙ্গে বসে আছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। বাইরে পড়ুয়াদের জটলা। কর্মবিরতির জেরে বুধবার মাঝপথে ওই স্কুলে ছুটি ঘোষণা করা হয়। পড়ুয়ারা জানায়, বুধবার নয়, স্কুলে ক্লাসের ব্যাঘাত ঘটছে মঙ্গলবার থেকেই। কিন্তু, কর্তৃপক্ষ হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ানোর নির্দেশ জারি করলেন কেন?
কর্তৃপক্ষের দাবি, শিক্ষক-শিক্ষিকারা ক্লাসে ফাঁকি দেন। অনেকেই ক্লাসে না পড়িয়ে ঘুমিয়ে কাটান। ক্লাসে বসে ঘুমোনোর ভিডিও ফুটেজ সিসিটিভি-তে ধরা পড়েছে বলেও তাঁদের দাবি। সেই কারণেই চেয়ারে বসার ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য। তবে, বেতন সংক্রান্ত সমস্যা এবং চাকরি ছাড়ানোর হুমকি নিয়ে তাঁরা কোনও মন্তব্য করতে চাননি। পরিচালন সমিতির এক সদস্য বলেন, “এ বিষয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে কথা বলব। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে নয়।”
ক্লাসে ঘুমোনোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। পড়ুয়ারাও জানিয়েছে, ক্লাসে শিক্ষক-শিক্ষিকারা দায়িত্ব নিয়েই পড়ান, ফাঁকি দেন না। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বক্তব্য প্রত্যেক ক্লাসেই সিসিটিভি আছে। কোনও শিক্ষক বা শিক্ষিকা ঘুমিয়ে কাটালে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। তার জন্য দাঁড়িয়ে পড়ানোর ফতোয়া জারি করার কোনও মানেই হয় না। ঠায় চার-পাঁচ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব নয়। এক ভাবে দাঁড়িয়ে পড়াতে হচ্ছে বলে অনেক বয়স্ক শিক্ষিকা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলেও জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

এ তো হাস্যকর। ছাত্রছাত্রীরা দোষ করলে তাদের ক্লাসে দাঁড় করিয়ে রেখে শাস্তি দেওয়া হয় কখনও কখনও। কিন্তু সেই ছাত্রছাত্রীরাই যদি বুঝতে পারে যে, শিক্ষককে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, তা হলে পড়ুয়াদের কাছে শিক্ষকের মান কমে যায়। শিক্ষা ব্যবস্থাটা যে ভাবে চলছে, তাকে সে ভাবেই চলতে দেওয়া উচিত। সব ঐতিহ্য পাল্টে ফেলার কোনও দরকার নেই।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

শিক্ষকের ক্লাসে বসার প্রয়োজন হয়ই। ৪০-৪৫ জন ছেলেকে সামলানো মুখের কথা নয়। আমি শিক্ষকতা করেছি। দাঁড়িয়ে ক্লাস নিলে কাজটা করতে পারতাম কি না সন্দেহ। শিক্ষকের কাজকে এত লঘু করে দেখার দরকারও নেই। তাঁকে প্রশ্ন তৈরি করতে হয়, খাতা দেখতে হয়। ঠায় দাঁড়িয়ে ক্লাস নিয়ে তিনি কী করে সব করবেন, বুঝতে পারছি না।
রূপম ইসলাম

শুনেই হাসি পাচ্ছে। ক্লাসঘরে সিসিটিভি আছে মানে তো সেই স্কুল প্রযুক্তিগত ভাবে বেশ এগিয়ে। যে শিক্ষকেরা ক্লাসে ঘুমোন, স্কুল কর্তৃপক্ষ সিসিটিভি-র ছবি দেখেই তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন। এ ভাবে সকলকে শাস্তি দেওয়াটা খুব অযৌক্তিক এবং বাড়াবাড়ি। শিক্ষকদের পরপর অনেক ক্লাস নিতে হয়। এতটা সময় ঠায় দাঁড়িয়ে কী ভাবে ক্লাস নেবেন তাঁরা?
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.