|
|
|
|
চুরি গেল ৬টি অষ্টধাতুর মূর্তি, তদন্তের দাবি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • খয়রাশোল |
প্রায় সাড়ে চারশো বছরের প্রাচীন বলরাম মন্দির থেকে চুরি হয়ে গেল ৬টি অষ্টধাতুর মূর্তি। মঙ্গলবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটে খয়রাশোল গ্রামে। শুধু মূর্তি নয়, মন্দির থেকে বাসন-সহ বহু জিনিস নিয়ে পালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। থানা থেকে হাফ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই প্রাচীন মন্দিরে চুরি হওয়ায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে বাসিন্দাদের মধ্যে। মন্দিরের সেবাইত এবং বাসিন্দাদের দাবি, পুলিশ অবিলম্বে এই চুরির কিনারা করুক। তাঁরা জানান, ছ’টি অষ্টধাতুর মূর্তি নিয়ে গেলেও দুষ্কৃতীরা মূল বিগ্রহ বলরাম ও রেবতীর মূর্তি, গয়না নিয়ে যায়নি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত বলরাম ও রেবতীর দু’টি পাথরের মূর্তি ছাড়াও অনেকগুলি শালগ্রাম শিলা ও অষ্টধাতুর তৈরি চারটি গোপাল মূর্তি, একটি রাধারানির মূর্তি ও একটি কৃষ্ণ মূর্তি ছিল। পালা করে এই মন্দিরে নিত্য পুজোর দায়িত্ব সামলান খয়রাশোলে বসবাসকারী ৪৫টি সেবাইত পরিবার। যে পরিবারের উপরে দায়িত্বে থাকে, সেই পরিবারের সদস্যরা ভোরে মন্দির পরিষ্কার করেন। দিনে এবং রাতে ভোগ রান্নাও করেন। তবে মন্দিরের জন্য এক জন পূর্ণ সময়ের পুরোহিত রয়েছেন। তিনি মন্দিরের ভোগ ঘর সংলগ্ন বাড়িতে থাকেন। বর্তমানে ওই মন্দিরের দায়িত্বে ছিলেন দুলাল ঠাকুর। ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ দুলাল ঠাকুরের স্ত্রী রাজলক্ষ্মী ঠাকুর মন্দির পরিষ্কার করতে গিয়ে বিষয়টি দেখেন। পরে সবাইকে চুরির কথা জানান। |
|
চুরির পরে। ছবিটি তুলেছেন দয়াল সেনগুপ্ত। |
রাজলক্ষ্মীদেবী বলেন, “সকালে মন্দিরের ভোগ ঘরের উঠোনে গিয়ে দেখি বলরাম জিউয়ের ছাতা, কাপড়, দেওয়াল ঘড়ি-সহ বেশ কয়েকটি জিনিসপত্র পড়ে রয়েছে। তখনই সন্দেহ হয়। আর একটু এগিয়ে গিয়ে দেখি পড়ে রয়েছে ভাঙা দু’টি তালা। বুঝে যাই চুরি হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে আমি পুরোহিতকে জানাই।” বুধবার সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ খয়রাশোলের ওই মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, মন্দিরের মূল ফটকের সামনে প্রচুর চপ্পল থাকলেও সেখানে কেউ নেই। মন্দিরের মূল দরজা টানা রয়েছে। মন্দিরের ঠিক পাশের রাস্তা দিয়ে মন্দিরের ডান দিকে ভোগ ঘর এবং সংলগ্ন উঠোনে প্রচুর লোক জড়ো হয়েছে। রয়েছে পুলিশও। মন্দিরের পুরোহিত রামকানাই হাজরা এবং অন্য সেবাইতরা ঘটনার বিবরণ শোনাচ্ছেন পুলিশকে। এমন একটি ঐতিহ্যপূর্ণ মন্দিরে চুরি হওয়ায় ভিড়ের মধ্যে থেকে পুলিশের উদ্দেশ্যে উড়ে আসছে কটুক্তি। রামকানাইবাবু বলেন, “গত ৩৬ বছর ধরে এই মন্দিরে পুজো করে আসছি। এমন ঘটনা এই প্রথম। প্রত্যেকদিন রাতে আরতি ও ভোগের পরে বলরাম ও রেবতীকে শয়ন করানো হয়। মঙ্গলবার রাত ৭টা নাগাদ সব কাজ সেরে আমি বাড়ি চলে যাই। বুধবার সকালে খবর পেয়ে ছুটে এসে দেখি এই কাণ্ড।” বলরাম মন্দিরের সেবাইত কমিটির সম্পাদক রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন, “এই মন্দিরকে ঘিরে গোটা খয়রাশোল ব্লকের মানুষের ভাবাবেগ জড়িয়ে আছে। সারা বছর নিত্য পুজোর পাশাপাশি বিখ্যাত গোষ্ট মেলা আয়োজিত হয়। সেই মন্দির থেকে এভাবে চুরি হয়ে যাবে ভাবতে পারছি না। যত শীঘ্র সম্ভব চুরি যাওয়া মূর্তি ও জিনিসগুলি যাতে ফেরত পাই তার ব্যবস্থা করুক পুলিশ। না হলে আমরা অনশনে নামব।” পুলিশ জানায়, সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। |
|
|
|
|
|