১৭৩-এর ধাক্কায় কয়েক দিনের বিরতি। তার পরে আবার যে কে সেই!
পশ্চিম মঙ্গলকোটের জালপাড়া বাসস্টপ থেকে কিছুটা এগোলেই বানপুর গ্রাম। সেখান থেকে কয়েক পা হাঁটলে পালপাড়ায় রমরম করে ফিরে এসেছে চোলাইয়ের রমরমা কারবার। কিছু দূরে কুনুর নদীর তীরে বসতপুর ও গাঁগড়ো গ্রামে নতুন করে চোলাই ব্যবসা শুরু হয়েছে বলেও অভিযোগ এলাকার বাসিন্দাদের।
সম্প্রতি দক্ষিণ ২৪ পরগনায় মগরাহাটের সংগ্রামপুরে চোলাই খেয়ে ১৭৩ জন মারা যাওয়ার পরে কয়েক দিন নড়ে বসেছিল পুলিশ। প্রশাসন ও আবগারি দফতর যৌথ ভাবে চোলাইয়ের ভাটি ও ঠেক বন্ধ করতে উদ্যোগী হয়। সেই উদ্যোগ যে নেহাতই ‘সাময়িক’, চোলাই ঠেকের আশপাশের বাসিন্দারা তা টের পেতে শুরু করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পালপাড়ার বাসিন্দারা জানান, বিষ-মদ কাণ্ডের পরেও লুকিয়ে চুরিয়ে ব্যবসা চলছিল। এখন ফের তা প্রকাশ্যে এসেছে। পালপাড়ার ৮টি বাড়িতে চোলাই ভাটি চলছে। বড় বড় ব্লাডারে করে চোলাই পাচার হচ্ছে কাটোয়া শহর পর্যন্ত। বিকেলের পরেই গ্রামে ঠেক বসে যায়। জালপাড়া, উনিয়া, গাংপুর, জয়পুর থেকে সব ধরনের লোকের যাতায়াত রয়েছে ওই ঠেকে। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, “কয়েক দিন লুকিয়ে আসছিল। এখন আবার সব আগের মতোই। কারও বাড়িতে বা খেতজমির উপরে আসর বসছে প্রকাশ্যে।”
কুনুর নদীকে ঘিরে রয়েছে আউশগ্রাম, মঙ্গলকোট এবং ভাতার থানার এলাকা। নদীর তীরে চোলাই মদের ‘কারখানা’। বেশ কয়েকটি বড় ভাটি রয়েছে ভাতারের বসতপুরে। সেখানে তৈরি চোলাই আশপাশের গ্রামে নিয়ে যায় কারবারিরা। গুসকরা নাগরিক সুরক্ষা সমিতির সহকারী সম্পাদক তপনকুমার মাজি চোলাই কারবারিদের নাম দিয়ে জেলাশাসকের কাছে বিস্তারিত অভিযোগ করেছেন।
তপনবাবুর আক্ষেপ, স্থানীয় আবগারি দফতরে কর্মী মাত্র তিন জন। তাঁদের পক্ষে এই সব দুষ্কর্ম বন্ধ করা কার্যত অসম্ভব। তিনি বলেন, “একটি ঘটনার পরে পুলিশি তৎপরতা শুরু হয়। দু’দিন পরে সব চুপ। আবার নতুন করে দুষ্কর্ম শুরু হয়। চোলাইয়ের ক্ষেত্রেও সেই ঘটনা হচ্ছে।” তাঁর অভিযোগ, পুলিশ সব জেনেও চুপ করে আছে।
পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ পালপাড়া গ্রামের মহিলারাও। গ্রামের ঝর্না কোঁড়া, অনু কোঁড়া, মালতি কিস্কুু মঙ্গলকোট থানায় লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, তাঁদের পাড়ার বংশ মাঝি ও ‘বহিরাগত’ দিলীপ রায়-সহ ৮ জন চোলাই তৈরির কারবার চালান। তাঁদের বক্তব্য, “তিন মাসে এক বার অভিযান চালিয়ে চোলাই ব্যবসা বন্ধ করা যাবে না। নিয়মিত সন্ধ্যায় অভিযান চালাতে হবে। প্রকাশ্যে চোলাই ঠেক চলায় মহিলাদের কটূক্তি শুনতে হচ্ছে, ছেলেমেয়েদের পড়ারও ক্ষতি হচ্ছে।” পুলিশকে লিখিত ভাবে সব জানানো সত্ত্বেও তারা উদ্যোগী হচ্ছে না বলেই তাঁদের অভিযোগ। ওই এলাকায় চোলাই যে সহজলভ্য, তা স্বীকার করে নিয়ে জেলা আবগারি দফতরের অন্যতম আধিকারিক নওসদ খান বলেন, “ওই এলাকায় চোলাই ব্যবসার খবর আমাদের কাছে আছে। অভিযানে গেলে দূর থেকে আমাদের গাড়ি দেখে চোলাই কারবারির দল পালিয়ে যায়। কারবারিদের নামে নির্দিষ্ট অভিযোগও করা হয়েছে।” পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বর্ধমানের পুলিশ সুপার হুমায়ুন দাবি করেন, “চোলাই ধরতে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাই। বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” |