পরিবারে চরম অনটন সামলাতে মহাজনদের থেকে মোটা অংকের সুদের বিনিময়ে অনেক বাসিন্দা ঋণ নিয়েছিলেন। এক সপ্তাহ আগে সরকারি অনুদানের টাকা হাতে পাওয়ার পরে সুদ ও আসল মেটাতে টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায় নতুন করে অভাবের মুখে পড়েছেন ঢেকলাপাড়া বাগানের শ্রমিক পরিবারগুলি। বাগানের মানুষের অনটনকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির মহাজন দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে ঢেকলাপাড়ার শ্রমিকদের একাংশের অভিযোগ। অন্যত্র সুদের হার যাই হোক, বন্ধ বাগানের শ্রমিকদের কাছ থেকে প্রায় ৫০ শতাংশ হারে সুদ নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। বিষয়টি জানার পর প্রশাসনের কাছ থেকে বিস্তারিত খোঁজখবর নিচ্ছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, “বাগানের বাসিন্দারা বিষয়টি নিয়ে আমার কাছে অভিযোগ জানাননি। তবে আমি প্রশাসনের কর্তাদের বিষয়টি দেখার জন্য বলব।” বিষয়টি জানা নেই বলে দাবি করেছেন আলিপুরদুয়ারের মহকুমা শাসক অমলকান্তি রায়ও। তিনি বলেন, “বিষয়টি আমাদের জানা নেই। যারা সুদে টাকা নিচ্ছেন তারা বিষয়টি আমাদের জানাননি।” বাগান সূত্রে জানা গিয়েছে, টানা ছয় মাস ধরে শ্রমিকেরা দেড় হাজার টাকা করে মাসিক সরকারি অনুদান পাচ্ছিলেন না। তার জেরে শ্রমিকদের ঘরে ঘরে চরম অভাব অনটন দেখা দেয়। শীতকালে গাছ থেকে পাতা তোলাও বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে ঢেকলাপাড়া বাগানে খাদ্যাভাব দেখা দেয়। সংসার চালাতে শ্রমিকরা বাগানের মধ্যে থাকা সুদখোর মহাজনদের দ্বারস্থ হন। চুক্তি অনুযায়ী মাসিক ৫০ শতাংশ হারে সুদ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিছু শ্রমিক বাগানে অপুষ্টিজনিত কারণে মানুষ মারা যাচ্ছে বলে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে রাজ্য সরকার। ছয় মাসের অনুদান-সহ পুজোর বোনাস মিলিয়ে প্রতি শ্রমিককে সাড়ে ১০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়। জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে তবে টাকা হাতে পাওয়ার পরে সেই টাকার বেশির ভাগ চলে গেছে মহাজনদের হাতে। এক মাস যেতে না যেতে এখন অনেক শ্রমিক পরিবারে নতুন করে অভাব দেখা দিয়েছে। বাগানের শ্রমিক মদন লোহার বলেন, “পরিবারে ৪ সদস্য। সকলের খাবার জোগান হবে কী ভাবে তা ভেবে মহাজনের থেকে মাসিক পঞ্চাশ শতাংশ সুদে আড়াই হাজার টাকা নিয়েছিলাম। অনুদানের টাকার বেশির ভাগ তাদের দিতে হয়েছে। নতুন করে অভাব দেখা দিচ্ছে।” বাগানের এক শ্রমিকের কথায়, “বাগানের দু’তিন জন সুদে টাকা দিয়ে থাকে। মুখ খুললে টাকা দেওয়া হবে না বলে তারা হুমকি দিয়ে যায়। ওদের হাত অনেক লম্বা।” |