বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা ঢেকলাপাড়া চা বাগানে অনাহারে মৃত্যর অভিযোগ প্রসঙ্গে সরাসরি কিছু বললেন না শ্রমনত্রী পূর্ণেন্দু বসু। তিনি এই দিন মহাকরণে বলেন, ওই চা বাগানে ৯ জনের অনাহারে মৃত্যুর কথা প্রচার করা হয়েছে। জেলাশাসকের রিপোর্ট অনুসারে তিন জনের মৃত্যুর খবর এখনও তাঁদের কাছে নেই। এ পর্যন্ত ৬ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন জেলাশাসক। তাদের মধ্যে দু’ জনের মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। বাকিরা নানা অসুখে ভুগে মারা গিয়েছেন। যার মধ্যে লিভার সিরোসিসও আছে। পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে ওই অনাহারে মৃত্যুর কথা প্রচার করা হচ্ছে। মঙ্গলবার এক প্রশ্নের উত্তরে অবশ্য তিনি মহাকরণে বলেন, “কেউ অনাহারে মারা যায়নি এটা আমি বলছি না। এঁদের মৃত্যুর প্রধান কারণ দীর্ঘ অবহেলা।” তিনি বলেন, আগের সরকারের অবহেলায় দীর্ঘ দিন ওই চা বাগান বন্ধ। তার ফলে যা হয়, শরীরে বাসা বেধেছে অপুষ্টি, নানা ব্যাধি। তিনি জানান, এখন থেকে বন্ধ ঢেকলাপাড়া চা বাগানের সমস্ত শ্রমিকদের জন্য অন্ত্যোদয় অন্নযোজনা প্রকল্প চালু করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে বন্ধ কারখানার শ্রমিকরা মাসিক যে ১৫০০ টাকা করে ভাতা পান তা প্রতি মাসেই পাবেন তাঁরা ইতিমধ্যে মার্চ মাস পর্যন্ত টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাধারণত শ্রমিকরা ওই টাকা পেয়ে থাকেন তিন চার মাস পরে। তিনি জানান, গত মে মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ওই টাকা অবশ্য বাগান শ্রমিকরা পাননি। কারণ, রাজ্য সরকারের টাকার অভাব। তবে গত ২ ডিসেম্বর ওই চা বাগানের চার শ্রমিকের মৃত্যুর খবর আসে রাজ্য সরকারের কাছে। তার পরেই দ্রুত জলপাইগুড়ির ডেপুটি শ্রমকমিশনারকে ডেকে ৮ মাসের প্রাপ্য টাকা এক সঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৪ ডিসেম্বর ওই চা বাগানের ৪৮৪ জন শ্রমিক ১৫ হাজার টাকা করে পেয়েছেন। ওই পরিমাণ টাকা পাওয়ার পর এক মাসের মধ্যে বাগানের কেউ অনাহারে মারা যেতে পারেন না। তিনি এই দিন আরও বলেন, অভিযোগ করা হচ্ছে ওই চা বাগানের শ্রমিকরা ১০০ দিনের কাজ পাচ্ছেন না। সেখানে এই প্রকল্পে কিছু কাজ হবে। তিনি জানিয়েছেন, ওই বন্ধ চা বাগানে প্রতি সপ্তাহে একটি করে মেডিক্যাল ক্যাম্প হয়। চেষ্টা করা হচ্ছে সেখানে স্থায়ী এক জন ডাক্তার রাখার। পূর্ণেন্দুবাবু জানিয়েছেন, ঢেকলাপাড়া চা বাগান ২০০২ সাল থেকে বন্ধ পড়ে আছে। মালিকরা তাই ঢেকলাপাড়া চা বাগানকে লিকুইডেশনে পাঠাতে চায়। এরই মধ্যে মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে বৈঠক করে কী ভাবে বন্ধ চা বাগানটি খোলা যায় তার চেষ্টা চালাচ্ছে রাজ্য সরকার। তিনি এই দিন বলেন, “যে কোনও জায়গায়, যে কোনও মৃত্যুই খুব কষ্টের। এই নিয়ে রাজনীতি করাটা ঠিক নয়। মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করার বিরোধিতা করছি।” পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, “যাঁরা অভিযোগ করছেন তাঁদের কি কিছুই সম্পদ ছিল না। চাল-ডাল নিয়ে তাঁরা তো সেখানে যেতে পারতেন। তাঁদেরও দায়িত্ব ছিল। শুধু সরকারের সমালোচনা করলে হবে না।” |