ঘর তৈরি। যন্ত্রপাতি আছে। অর্থাভাবে বিদ্যুৎ দফতর সংযোগ নিতে না-পারায় আলিপুরদুয়ার মহকুমা হাসপাতালে চালু হচ্ছে না নিওনেটাল ওয়ার্ড। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সমস্ত জেলা ও মহকুমা হাসপাতালে ওই সদ্যোজাতদের চিকিৎসার সমস্ত ধরনের ব্যবস্থা নিতে বলেছে। ওই নির্দেশ মেনে বিভিন্ন হাসপাতালে সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিট, স্টেবিলাইজেশন ইউনিট চালু করা হচ্ছে। সরকারি ওই প্রক্রিয়া চালু না-হওয়ায় আলিপুরদুয়ার মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিওনেটাল ওয়ার্ড তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করেন। আনা হয়েছে ওয়ার্মার, ফোটো থেরাপি যন্ত্র-সহ নানা অত্যাধুনিক সরঞ্জাম। বিদ্যুৎ সংযোগ না-হওয়ায় শিশু বিভাগেই কয়েকটি শয্যা সরিয়ে পর্দার আড়াল তৈরি করা হয়েছে। সেখানেই সদ্যোজাতদের চিকিৎসা চলছে। এর ফলে ওই সমস্ত শিশুদের সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েই গিয়েছে। জলপাইগুড়ির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন সরকার বলেছেন, “বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া না-গেলে ওয়ার্মার, ফোটো থেরাপির মতো যন্ত্র চালানো সম্ভব নয়। বাধ্য হয়েই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশু বিভাগেই সদ্যোজাতদের পরিষেবা দিচ্ছেন।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বীকার করেন, সদ্যোজাতদের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক ও নার্সদের সেই ঘরে বিশেষ পোশাক পরে ঢোকার কথা। কিন্তু শিশু বিভাগে বাইরের লোক যাতায়াত করছেন। ঘটনাটি জানার পরে আলিপুরদুয়ারের কংগ্রেস বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “দ্রুত বিদ্যুৎ পর্ষদ-সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিউনেটাল ওয়ার্ড তৈরিতে উদ্যোগী হলেও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বরাদ্দে আলিপুরদুয়ার মহকুমা হাসপাতাল-সহ জেলার দশটি হাসপাতালে প্রসূতি বিভাগের পাশেই চার শয্যার নিউবর্ন স্টেবিলাইজেশন ইউনিট চালু হবে। আলিপুরদুয়ার মহকুমা হাসপাতালে ১-৩০ দিন পর্যন্ত সদ্যোজাতদের ২৪ শয্যার সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিট চালুর জন্য পরিকল্পনা হয়েছে। পূর্ত দফতর হাসপাতাল চত্বরে জায়গা দেখেছেন। প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সদ্যোজাতদের জন্য ওই ইউনিট খোলা হবে। সেখানে সদ্যোজাতদের বিশেষ চিকিসা পরিষেবা দেওয়া হবে। পূর্ত দফতর কাজ শুরু করলে ওই ইউনিটের জন্য চিকিসক ও নার্স নেওয়ার কাজ শুরু হবে। আলিপুরদুয়ার মহকুমা হাসপাতালের সুপার সুজয় বিষ্ণু বলেন, “প্রায় ৫-৬ মাস আগে শিশু বিভাগের পাশে সদ্যোজাতদের জন্য ১০-১২ শয্যার নিউনেটাল ওয়ার্ড তৈরি করা হয়। ওই ঘরটিতে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি চালানোর জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ দরকার। অর্থের অভাবে তা করা সম্ভব হয়নি।” সদ্যোজাতদের শরীর ঠান্ডা হয়ে গেলে প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসার জন্য তাদের গরম রাখতে ওয়ার্মার যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। জন্ডিস হলে ফোটোথেরাপি যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এখানে বছরে প্রায় ৩ হাজার ৬০০-র বেশি শিশুর জন্ম হয়। তার মধ্যে বেশ কিছু শ্বাসকষ্ট, স্বল্প ওজন, জন্ডিস-সহ নানা ধরনের সমস্যা নিয়ে জন্ম নেয়। হাসপাতালে তাদের নিওনেটাল ইউনিটে রেখে চিকিৎসা করে সুস্থ করা হয়। হাসপাতালের সুপার বলেন, “শীঘ্র প্রায় আট লক্ষ টাকা খরচ করে পূর্ত ও বিদ্যুৎ দফতর নিউনেটাল ওয়ার্ড ও শিশু বিভাগের পরিকাঠামো উন্নয়ন ও বিদ্যুতের ওয়্যারিংয়ের কাজ করবে। তখন আলাদা ভাবে নিউ নেটাল ওয়ার্ডটি চালু সম্ভব।” সদ্যোজাতদের ২৪ শয্যার সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিট চালু হলে ভেন্টিলেশন-সহ সমস্ত আধুনিক ব্যবস্থা থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি। |