রবিবার পৌষ মাস শেষ হয়েছিল তীব্র উত্তুরে হাওয়ার সঙ্গে। কিন্তু তার পর ৪৮ ঘণ্টাও কাটল না!
মঙ্গলবার, মাঘের দ্বিতীয় দিনে পুরোপুরি বদলে গেল হাওয়ার গতিমুখ। উত্তুরে হাওয়ার বদলে বইতে শুরু করেছে দখিনা বাতাস। যদিও বঙ্গোপসাগর থেকে উঠে আসা ওই বাতাসে জলীয় বাষ্প তুলনায় কম থাকায় সকালে ঘন কুয়াশা বা মেঘে ঢাকা আকাশের সম্ভাবনা এখনই দেখছেন না আবহবিদেরা। তাঁদের পূর্বাভাস, আজ বুধবার কলকাতা-সহ তামাম দক্ষিণবঙ্গেই সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বাড়বে। আগামী কাল, বৃহস্পতিবারও তা আরও কিছুটা বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর।
আচমকা এ হেন হাওয়াবদলের জেরে দক্ষিণবঙ্গে যখন দুপুরে গায়ে গরম জামা রাখা দায়, তখন উত্তরবঙ্গে আবার ভিন্ন চিত্র। ঘন কুয়াশায় সেখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা গত দু’দিন বাড়লেও আজ, মঙ্গলবার হিমালয় সংলগ্ন এলাকায় হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছেন আবহবিদেরা। ফলে গোটা উত্তরবঙ্গেই কিছুটা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সৃষ্টি হতে পারে। মেঘ-বৃষ্টির জেরে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দুই তাপমাত্রাই নামতে পারে উত্তরবঙ্গে। ফের মালুম হতে পারে কনকনে ঠান্ডা।
উত্তর-দক্ষিণে এমন উল্টো আবহাওয়ার কারণ অবশ্য একটাই উত্তর ভারতের উপরে থাকা পশ্চিমী ঝঞ্ঝা। এবং ওই ঝঞ্ঝার ভবিষ্যৎ গতি-প্রকৃতিই স্থির করে দেবে দুই বঙ্গের শীত-ভাগ্য। আবহবিদদের বক্তব্য: পশ্চিমী ঝঞ্ঝা কতটা শক্তি নিয়ে পূর্ব ভারতের উপর দিয়ে বয়ে যাবে, তার উপরে নির্ভর করছে মাঘে আর তেমন শীত আসবে কি না। যদিও আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথের কথায়, “এখনই শীত বিদায় নিচ্ছে, এমন কখনওই নয়। আবহাওয়ার যে পরিবর্তনটা হয়েছে, তা সাময়িক। এটা কেটে গেলেই ফের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমবে। শীত ফিরবে।” |
কিন্তু তাপমাত্রার এই খামখেয়ালিপনার সঙ্গে মানুষের শরীর তাল মেলাতে পারছে না। গত শুক্রবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ঝপ করে ৫ ডিগ্রি নেমে গিয়েছিল। ১৭ থেকে একেবারে ১২! কমতে কমতে তা রবিবার নেমে যায় ১০ ডিগ্রিতে। সোমবার থেকে ফের তা ঊধ্বর্র্মুখী। দু’দিনে কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বেড়েছে ৪ ডিগ্রি। যে শ্রীনিকেতন, কৃষ্ণনগর, বা উলুবেড়িয়ায় রবিবারেও শৈত্যপ্রবাহ বইছিল, মঙ্গলবার সেখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা গড়ে তিন থেকে চার ডিগ্রি বেড়েছে। রবিবার যে কলকাতায় আপাদমস্তক মুড়ে রাস্তায় বেরোতে হচ্ছিল, এ দিন দুপুরে সেখানে গরম জামা গায়েই রাখা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রোগ-জীবাণু ও তাদের বাহকদের সক্রিয়তা বাড়ে। তাই এই সময়টায় শিশু ও বয়স্কদের সাবধানে রাখতে বলছেন চিকিৎসকেরা।
কত দিন চলবে এই অবস্থা?
উপগ্রহ-চিত্র বিশ্লেষণ করে আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, অন্তত আগামী তিন-চার দিন। পশ্চিমী ঝঞ্ঝা দক্ষিণবঙ্গের কাছাকাছি চলে এলে বঙ্গোপসাগর থেকে বেশি করে মেঘ ঢুকবে। সপ্তাহের শেষের দিকে তাই দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির সম্ভাবনার কথাও জানিয়ে রেখেছে আলিপুর। |