আলুর খেতে ধসা রোগের সংক্রমণ এ বার দক্ষিণবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গেও ছড়াতে শুরু করেছে। মেঘলা আকাশ আর ঘন কুয়াশায় সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছেন আলুচাষিরা। বর্ধমান, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুরের কিছু কিছু জায়গার আলুখেত ইতিমধ্যেই ধসা রোগের কবলে পড়েছে। এ বার কোচবিহারেও ওই রোগ ছড়িয়েছে।
রাজ্যের কৃষি অধিকর্তা সার্থক বর্মন বলেছেন, “কিছু কিছু জায়গায় ধসা রোগ হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। তবে তা ব্যাপক নয়। রোগের প্রকোপ যাতে না-বাড়ে তার জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।” কমিটির সদস্যরা ইতিমধ্যেই বর্ধমান ও হুগলির কয়েকটি এলাকা ঘুরে এসে কিছু সুপারিশ করেছেন। সেই সুপারিশের কথা গণমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে বলে সার্থকবাবু জানান। |
কোচবিহার জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কোচবিহারে এ বছর প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। তার মধ্যে কোচবিহার সদরের খোল্টা, বাণেশ্বর, বাবুরহাট, নীলকুঠি, মাথাভাঙার ফুলবাড়ি, শোলমারি, তুফানগঞ্জের হরিপুর, বারোকোদালি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার ধসার সংক্রমণ ছড়িয়েছে। দিনহাটা ও মেখলিগঞ্জ মহকুমার বেশ কিছু এলাকাতেও ধসার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। এই রোগের লক্ষণ হল, সবুজ পাতা কুঁকড়ে পচতে শুরু করে। ধীরে ধীরে গোটা গাছটি হলদে হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। গত বছর ওই রোগের জেরে প্রায় ৭ হাজার হেক্টর এলাকার আলু খেতের ফলন মার খায়। চাষিদের ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রায় ১২ কোটি টাকা এখনও মেটানো যায়নি। কোচবিহারের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য কৃষি আধিকারিক বিপ্লব ঘোষ অবশ্য বলেছেন, “বেশ কিছুদিন ধরে টানা কুয়াশার জন্য জেলার বিভিন্ন এলাকায় বড়জোর ৫০ হেক্টর আলু খেতে ধসার সংক্রমণ ছড়িয়েছে বলে রিপোর্ট পেয়েছি। এটা আলু চাষের মোট এলাকার তুলনায় খুব সামান্য। তবে আবহাওয়ার দ্রুত উন্নতি না-হলে ক্ষতির সম্ভাবনা বাড়বে।”
বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, উত্তরবঙ্গে আলু ও টমাটো জাতীয় সব্জিতে ধসা রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে আকস্মিক আবহাওয়ার পরিবর্তনে। হঠাৎ বৃষ্টির পরে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ধসা রোগের প্রকোপ বেড়েছে। এর পাশাপাশি আলুতে শোষক পোকার আক্রমণে পাতা কুঁকড়ে জীবাণুঘটিত রোগ ছড়াচ্ছে। কৃষি আবহাওয়াবিদ সইফুদ্দিন আহমেদ খান বলেন, “এই সময় বৃষ্টির পরে কুয়াশা ও শিশিরের অনুপাত বেশি হওয়ায় আলু ও টমাটো গাছের পাতা ভিজে থাকছে। গোড়াতেও জল জমে থাকছে। যার ফলে ধসা রোগ ছড়াচ্ছে।”
পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা ১ ব্লক, চন্দ্রকোনা রোড, ঘাটাল ও দাসপুরের বিভিন্ন এলাকায় আলু চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে রাজ্য কৃষি দফতরে রিপোর্ট পাঠিয়েছে জেলা কৃষি দফতর। পশ্চিম মেদিনীপুরে এ বার ৬৮ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ জমিতে আলু চাষ আংশিক অথবা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে কৃষি দফতর জানিয়েছে। |