বেশ কিছু দিন ধরেই দল ও সরকারে তাঁর গুরুত্ব বাড়ছিল। অবশেষে মুখ্যমন্ত্রীর কাছাকাছি থাকতে ‘ক্ষমতার অলিন্দে’ ঢুকে পড়লেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁর জন্য মহাকরণে এ বার একটি ঘর বরাদ্দ হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল-কংগ্রেস জোট সরকারের মন্ত্রীদের মধ্যে এক সুব্রতবাবুই আগে রাজ্যের মন্ত্রিত্ব সামলেছেন। প্রয়াত সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মন্ত্রিসভায় তথ্য-সংস্কৃতি ও স্বরাষ্ট্র দফতরের প্রতিমন্ত্রী সুব্রতবাবু মহাকরণে বসতেন। সেই হিসেবে প্রায় ৩৫ বছর পরে ফের মন্ত্রী হয়েই মহাকরণে পদার্পণ ঘটল এই প্রবীণ রাজনীতিকের।
মমতার সরকারের সূচনা-পর্বে অবশ্য এমনটা কেউ ভাবেনি। ২০ মে নতুন সরকারের মন্ত্রীরা শপথ নেওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী যখন দফতর বণ্টন করলেন, দেখা গেল, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মন্ত্রী করা হয়েছে সুব্রতবাবুকে। তাঁর অফিস মহাকরণ থেকে ঢিল-ছোঁড়া দূরত্বে, নিউ সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিংয়ে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, সুব্রতবাবুর মতো পোড় খাওয়া রাজনীতিককে কেন আরও গুরুত্বপূর্ণ দফতরের দায়িত্ব দিয়ে মহাকরণে জায়গা করে দেওয়া হল না? |
সরকারের কয়েক মাস বয়স হতেই পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। ক্রমে মমতার ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেন সুব্রতবাবু। দলের একাংশের মতে, সরকার চালাতে গেলে যে তাঁর মতো অভিজ্ঞ লোককে সামনের সারিতে আনা প্রয়োজন, মুখ্যমন্ত্রী তা বুঝেছেন। তাই সম্প্রতি সুব্রতবাবুকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে পঞ্চায়েত দফতরের মন্ত্রী করা হয়েছে। বছরখানেক বাদে পঞ্চায়েত ভোট ধরে নিয়ে পঞ্চায়েতের ভার সুব্রতবাবুর উপরে ন্যস্ত করাটা তাঁর প্রতি মমতার আস্থার প্রকাশ বলে এই মহল মনে করছে।
তবে পঞ্চায়েতমন্ত্রীর কোনও ঘর এত দিন মহাকরণে ছিল না। মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছায় এ বার সে খামতিও দূর হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে মহাকরণের তিন তলায় প্রাক্তন এক মন্ত্রীর ঘরে বসতে শুরু করেছেন সুব্রতবাবু। সোমবার তিনি ঘরটি দেখে গিয়েছিলেন। এ দিন মহাকরণে এসে একটি বৈঠকেও যোগ দেন সুব্রতবাবু। পরে অবশ্য চলে যান।
কিন্তু যেখানে জনস্বাস্থ্য কারিগরিমন্ত্রীর ঘর নব মহাকরণে, পঞ্চায়েতমন্ত্রীর ঘর জেশপ বিল্ডিংয়ে, সেখানে মহাকরণের ঘরে সুব্রতবাবুর কী কাজ থাকবে? এ দিন তিনি বলেন, “পঞ্চায়েত ভবনে মিটিং করার সমস্যা। তা ছাড়া অনেক সময় দু’টো দফতরের পর পর বৈঠক থাকলে অসুবিধায় পড়তে হয়। মহাকরণে সাধারণ ভাবে দফতরের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ও মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া কিছু কাজকর্ম করব।” পরে বলেন সার কথাটা “মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছায় মহাকরণে বসছি।”
প্রশাসনিক-সূত্রের খবর: পঞ্চায়েত অফিসকে সল্টলেকের সেক্টর-৫-এ নিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে মহাকরণ ও জনস্বাস্থ্য কারিগরির দায়িত্ব সেরে সল্টলেকের পঞ্চায়েত ভবনে যাওয়া মন্ত্রীর পক্ষে কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। |