অনেকেই বলে থাকেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই ‘আসল বামপন্থী’। এ বার প্রকারান্তরে সে কথা বললেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট। তবে ‘প্রকারান্তরে’। এবং মাত্রই একটি ঘটনার সাপেক্ষে।
কলকাতায় এসে খুচরো ব্যবসায়ে বিদেশি বিনিয়োগের প্রশ্নে মমতার ‘ভূমিকা’র প্রশংসা করেছেন কারাট। প্রকাশ্যে দলের সাধারণ সম্পাদকের ওই ‘ভূমিকা’য় সিপিএমের নেতারা অবশ্যই অস্বস্তিতে। কিন্তু কারাট নির্বিকার। তিনি মনে করেন, মমতার ভূমিকার ফলেই এ বারও খুচরো ব্যবসায়ে বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আটকে গেল। পাশাপাশিই কারাট জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ চাইলেও বামেদের আপত্তিতেই ইউপিএ-১ এর সময় খুচরো ব্যবসায়ে এফডিআই আটকে গিয়েছিল।
কারাট কলকাতায় এসেছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে যোগ দিতে। সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্মেলন উপলক্ষে জেলা নেতৃত্ব এক আলোচনার সভার আয়োজন করেছিলেন বিধাননগরের উন্নয়ন ভবনে। সেখানেই দলের আর্থিক নীতির প্রসঙ্গ উত্থাপন করে কারাট বলেন, “আমেরিকাকে সন্তুষ্ট করতে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ অনেক দিন ধরেই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য খুচরো ব্যবসার দরজা খুলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন নীতির ক্ষেত্রে অনেক সময়েই তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘুমিয়ে থাকেন। কিন্তু এ বার হঠাৎ জেগে উঠে মমতা খুচরো ব্যবসায় এফডিআই-এ আপত্তি তুলেছেন। ভাল কথা। আবার খুচরো ব্যবসায়ে এফডিআই আটকে গেল।” এর পরেই মৃদু হেসে কারাটের সংযোজন, “উনি আপত্তি করেছেন ভাল কথা। কত দিন করবেন জানি না। কিন্তু আপত্তি করছেন। এটা ভাল।”
খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ প্রশ্নে সিপিএম, বিজেপি, তৃণমূল তিন দলই আপাতত একই নীতি নিয়ে চলেছে। কারাট ওই কথা বলার সময় মঞ্চে ছিলেন দলের রাজ্য কমিটির সদস্য অমিতাভ নন্দী, জেলা কমিটির সদস্য পল্টু দাশগুপ্ত, রমলা চক্রবর্তী, সুব্রত সেন, সোমনাথ ভট্টাচার্য প্রমুখ। কারাটের ‘মমতা-প্রশংসা’ নিয়ে প্রকাশ্যে নেতা-কর্মীরা কোনও মন্তব্য করেননি। কিন্তু তাঁরা ‘অস্বস্তি’ও গোপন করেননি। অনেকেরই বক্তব্য, এই সময়ে কারাট এমন কথা না-বললেই ভাল করতেন। পক্ষান্তরে, কেউ আবার কারাটের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁদের মতে, কারাট স্পষ্টবাদী। খুচরো ব্যবসায় এফডিআই প্রসঙ্গে আগে দিল্লিতেও তিনি মমতার ভূমিকার প্রশংসা করেছিলেন। কলকাতায় তারই পুনরাবৃত্তি করলেন। যাঁরা কারাটের এ দিনের ভূমিকায় অস্বস্তিতে, তাঁদের বক্তব্য, কলকাতায় দাঁড়িয়ে ওই কথা বলার ‘রাজনৈতিক তাৎপর্য’ আলাদা। এবং তা সিপিএমের পক্ষে যায় না। বিশেষত, যখন তারা রাজ্যে বিপর্যয়ের পর ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে।
তাঁরা বরাবরই খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনোয়োগের বিরোধী বলে জানিয়ে কারাট বলেন, “মনমোহন সিংহ প্রথম বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যাই। তিনি বলেন, ওয়ালমার্টের বড় কর্তা আসছেন। আমি তাঁকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের (তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী) সঙ্গে কথা বলতে বলেছি। উনি কলকাতা যাবেন।” কারাট জানান, তিনি তখনই মনমোহনকে বলেছিলেন, ওয়ালমার্ট কর্তা কলকাতায় যেতে পারেন। কিন্তু বুদ্ধবাবুকে রাজি করানো সম্ভব নয়। ওয়ালমার্ট কর্তা কলকাতায় বুদ্ধবাবুর সঙ্গে দেখা করার পর কারাটের সঙ্গে বুদ্ধবাবুর কথা হয়। বুদ্ধবাবু তাঁকে তখনই বলেন, ওয়ালমার্ট এলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা মার খাবেন। তাই তিনি ওই প্রস্তাবে রাজি হননি। |