কলেজে কলেজে সাম্প্রতিক গণ্ডগোলের দায় কার্যত ‘বাম-অনুগত’ অধ্যক্ষদের উপরেই চাপাচ্ছে রাজ্য সরকার। রাজ্যপালকে চিঠি লিখে সরকারের এই মনোভাব জানিয়ে দেবে উচ্চশিক্ষা দফতর।
উচ্চশিক্ষা দফতর মনে করে, রাজ্যে পালাবদল হলেও বহু কলেজেই এখনও রয়েছেন ‘বাম-অনুগত’ অধ্যক্ষেরা। তাঁরাই নিরপেক্ষ ছাত্র নির্বাচনের পথে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছেন বলে দফতরের পক্ষ থেকে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনকে লিখিত ভাবে জানানো হচ্ছে। রাজ্যপালকে এ-ও জানানো হবে, সরকারি কলেজগুলিতে গণ্ডগোল নেই। কিন্তু অনেক বেসরকারি কলেজেই দীর্ঘদিন ছাত্র নির্বাচন হয়নি। সিপিএমের ছাত্র সংগঠন সেখানে জবরদস্তি ছাত্র সংসদ দখল করে রেখেছে। তাদেরই ‘মনপসন্দ’ অধ্যক্ষেরা অন্য ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিদের মনোনয়নপত্র পর্যন্ত তুলতে দিচ্ছেন না।
সম্প্রতি পরপর অধ্যক্ষ নিগ্রহের ঘটনা ঘটে রাজ্যের বেশ কয়েকটি কলেজে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিযোগের তির শাসক তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের দিকে। স্বভাবতই বিরোধীরা তীব্র আক্রমণ করেন রাজ্য প্রশাসনকে। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এক প্রতিনিধিদল নিয়ে রাজ্যপালের কাছে উদ্বেগও জানিয়ে আসেন। এই পরিস্থিতিতেই সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে চিঠি পাঠান রাজ্যপাল। তিনি জানতে চান, কলেজে গোলমাল ঠেকাতে শিক্ষামন্ত্রী কী ভূমিকা নিয়েছেন। সরকারি সূত্রের খবর, এই নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর প্রাথমিক কথা হয়েছে। রাজ্যপালের এই ‘অতি সক্রিয়’ ভূমিকায় সরকার খুশি নয়। সিদ্ধান্ত হয়েছে, শীঘ্রই রাজ্যপালের চিঠির জবাবে তাঁকে সরকারের বক্তব্য স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হবে।
কী থাকবে ওই চিঠিতে? উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যপালকে জানানো হবে, ৪৫টি সরকারি কলেজের কোনওটিতেই গোলমাল হয়নি। ছ’শোরও বেশি সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজের মধ্যে হাতে গোনা চার-পাঁচটিতেই গোলমাল হয়েছে এবং সেগুলিই বড় করে প্রচারের আলোয় আসছে। কিন্তু গোলমাল হচ্ছে মূলত এক শ্রেণির অধ্যক্ষের ‘বাম-আনুগত্যের’ কারণে। রাজ্যে পালাবদলের পরে তাঁরা সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক উপায়ে ছাত্র ইউনিয়নগুলির নির্বাচন হতে দিচ্ছেন না। তাতেই তৈরি হচ্ছে সংঘাতের বাতাবরণ। রাজ্যপালকে জানানো হবে, এই ধরনের ঘটনা ঠেকাতে সরকারের তরফে সর্বস্তরে কথাবার্তা চলছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য একটি বিধিও তৈরি হচ্ছে। সব ছাত্র সংগঠনের সঙ্গেও কথা বলা হবে। এর বাইরে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। তিনি উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন এবং প্রয়োজনে রাজ্যপালকেও অবহিত করবেন।
এক কথায়, ছাত্র নির্বাচন হিংসামুক্ত করার লক্ষ্যে রাজ্য সরকার যে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে, সরকারের তরফে তা-ই জানিয়ে দেওয়া হবে রাজ্যপালকে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিধি তৈরির জন্য ইতিমধ্যেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের পরামর্শ নিয়েছে উচ্চশিক্ষা সংসদ। তবে খসড়া বিধি এখনও উচ্চশিক্ষা দফতরের কাছে পৌঁছয়নি। আগামী কাল, বৃহস্পতিবার সংসদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে এই নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বৈঠকে বসছেন বলে উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর। |