অকাল-বিয়ে রুখে বাংলার আরও বাইশ মেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে
পুরুলিয়ার পঞ্চকন্যায় ইতিমধ্যেই মুগ্ধ ছিলেন তিনি। রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিলের কাছে এ বার বাংলার আরও বাইশ প্রতিবাদী কিশোরী।
পথ দেখিয়েছিল পুরুলিয়া জেলার ব্যতিক্রমীরা। সেই সাহসে ভর করে ধীরে ধীরে প্রতিবাদের কণ্ঠ জেগে উঠছে মুর্শিদাবাদ, মালদহ, বাঁকুড়াতেও। গত কয়েক বছরে আরও ২২টি প্রতিবাদী কণ্ঠকে চিহ্নিত করেছে রাজ্য সরকার। যারা বাড়ি-পরিবার, এমনকী সমাজের বিরুদ্ধে গিয়েও রুখে দিয়েছে নিজের অকাল-বিয়ে। রাজ্যে বাল্যবিবাহের সংখ্যার নিরিখে এটা সিন্ধুতে বিন্দু, মানছে রাজ্য সরকার। তবু প্রতিবাদের এই ক্ষীণ ধারা এক দিন বিশাল স্রোত হবে, এমনটাই আশা রাজ্যের কর্তাদের। এবং খোদ রাষ্ট্রপতিরও।
গত কয়েক বছর ধরেই বাংলার এই মেয়েদের প্রতিরোধের কাহিনি প্রতিভার সামনে নিয়মিত তুলে ধরেছেন তাঁর মিডিয়া উপদেষ্টা অর্চনা দত্ত। তাঁরই উদ্যোগে গত মাসে পুরুলিয়ার পাঁচ কিশোরীকে সংবর্ধনা দেন রাষ্ট্রপতি। সারা দেশের আরও একশো জন প্রতিবাদী মেয়ে আজ হাজির হয়েছিল রাষ্ট্রপতি ভবনে। যাদের মধ্যে ছিল বাংলার বাইশ জন।
রাষ্ট্রপতি কী বললেন তাদের? বললেন, ফিরে গিয়ে বাল্যবিবাহের মতো কু-প্রথার বিরুদ্ধে সরব হতে। ঠিক যেমনটি করেছে মুর্শিদাবাদের টুকটুকি বা মুনিজা খাতুনরা। পণ নেবে না, এমন পাত্র পাছে হাতছাড়া হয়, স্রেফ এই যুক্তিতেই কয়েক দিনের নোটিসে এই দু’জনের বিয়ের ব্যবস্থা করেছিল পরিবার। বেঁকে বসে দুই কন্যাই। যোগাযোগ করে বয়ঃসন্ধি মেয়েদের নিয়ে গঠিত সংস্থা ‘আশা’-র সঙ্গে। শুরু হয় বোঝানোর পালা। সেই সম্মিলিত উদ্যোগেই আপাতত বিয়ের হাত থেকে রেহাই পেয়েছে দু’জনে। টুকটুকি-মুনিজার ক্ষেত্রে তো তা-ও বিয়ের কথা পর্যন্ত এগিয়েছিল। বেলডাঙার মধুমালা খাতুন পাত্রপক্ষকে ফেরত যেতে বাধ্য করেছে বিয়ের ঠিক এক ঘণ্টা আগে। নিজের বিয়ে রুখতে অষ্টম শ্রেণির এই সপ্রতিভ মেয়েটি পড়শিদের দোরে দোরে ঘুরে ‘সুকৌশলে’ জানায় তার আপত্তির কথা। গ্রামবাসীরাই খবর দেন বিডিও-কে। শেষ মুহূর্তে রক্ষা পায় মধুমালা। জেলার প্রোটেকশন অফিসার ইমন হালদার জানালেন, “সমস্যাটা বিশেষ কোনও সম্প্রদায়েই সীমাবদ্ধ, এমন নয়। বহরমপুরের বীথিকা দাস বা নবগ্রামের আদরি প্রধানের পরিবার অল্প বয়সেই মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়েছিল স্রেফ দায়মুক্ত হতে। শেষে চাইল্ড লাইনের সাহায্যে তা আটকানো হয়।”
চিত্রটি এক মালদহ জেলাতেও। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে এই জেলা থেকে এসেছিল শামসুনেহর, ফতিমা খাতুন, হাবিবা খাতুন, ফুলো সিংহ, মুক্তরা খাতুন। চেহারায় অপুষ্টি স্পষ্ট। দিল্লির ঠান্ডায় কাঁপছে। বিয়ের প্রসঙ্গ তুলতেই চোয়াল শক্ত। ফতিমা, হাবিবারা স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, “এখনই বিয়ে নয়। আর্থিক সঙ্গতি সে ভাবে নেই। তা-ও যতটা পড়া যায় আমরা পড়তে চাই। উপার্জন করতে চাই।”
রাষ্ট্রপতির মিডিয়া উপদেষ্টা অর্চনাদেবীর কথায়, “পশ্চিমবঙ্গের মেয়েরা নিজেদের অধিকারের প্রশ্নে যে ভাবে সরব হচ্ছে তা শুভ ইঙ্গিত।” দারিদ্র-অপুষ্টি-অশিক্ষার বাধা পেরিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার এই লড়াইয়ে নেমে আশার রুপোলি রেখা দেখতে পাচ্ছে পুরুলিয়ার বীণা-আফসানারাও। জেলার জাতীয় শিশু শ্রম বিভাগের অধিকর্তা প্রসেনজিৎ কুন্ডু বললেন, “গত মাসে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে আসার পরে একটি সংস্থা এই পাঁচ জনের পড়ার খরচ বহন করবে বলে জানিয়েছে। এ বার আরফা খাতুন, দিপালি কুমার, কবিতা কৈবর্ত্য, সুনীতা সিংহ, উত্তরা সিংহদের জন্যও কেউ না কেউ এগিয়ে এলে বদলে যাবে এই মেয়েগুলির জীবন।”
সাহায্য আসুক বা না-আসুক, বাংলার বাইশটি মেয়ের লড়াই আর মনের জোর উস্কে দেবে আরও অনেক ফতিমা-বীথিকাকে, প্রত্যাশায় রয়েছেন ভারতের প্রথম নাগরিক।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.