|
|
|
|
হারিয়ে যাওয়া খেলা পর্ব ৭ |
|
বাঘবন্দি খেলা
অর্ঘ্য ঘোষ • ময়ূরেশ্বর |
|
দাবার সঙ্গে বেশ খানিকটা মিল আছে এই খেলার। এক সময় ছোট বড় সকলেরই দীর্ঘক্ষণ সময় কাটানোর মাধ্যম ছিল এই ‘বাঘবন্দি’ খেলা। দাবার মত বাঘবন্দি খেলাতেও ছক কাটা ঘর থাকে। এখানে চক-পেনসিল কিংবা ইটের কুচি দিয়ে বর্গাকার একটি ঘর আঁকা হয়। আড়াআড়ি অথবা লম্বালম্বি বিভিন্ন সরলরেখায় বিভক্ত থাকে ঘরটি। তবে ‘দাবা’র রাজা, মন্ত্রী, নৌকা, ঘোড়ার বদলে বাঘবন্দি খেলায় ব্যবহৃত হয় ২০টি ছোট ছোট পাথর বা ইটের কুচি। প্রয়োজন অপেক্ষাকৃত বড় আরও দু’টি ইট বা পাথরকুচি। খেলার পরিভাষায় ছোট ঘুটিগুলি ছাগল আর বড়গুলি বাঘ হিসেবে চিহ্নিত। |
|
খেলার নিয়ম হল, বাঘ সুযোগ পেলেই একটি করে ছাগল খাবে। ছাগল কৌশলে বাঘের পেটে যাওয়ার পরিবর্তে তাকে বন্দি করার চেষ্টা চালাবে। খেলার শুরুতে ছকে নির্ধারিত ৪টি জায়গায় ৫টি করে ছাগল রাখা হয়। আর ছাগলের মাঝে দু’টি ঘরে রাখা থাকবে দুই বাঘ। প্রথমে ছাগলকে একটি একটি করে ঘর বদল করে সতর্কতার সঙ্গে বাঘের চারি দিকে ছড়িয়ে পড়তে হয়। অর্থাৎ প্রতিটি ছাগলের ঘরে পিছনের ঘরে যেন আরও একটি ছাগল থাকে। তা না হলে, পাশাপাশি কোনা-কুনি, সামনা-সামনি যে কোনও দিকে বাঘ কোনও ছাগলকে টপকে পিছনের ফাঁকা জায়গায় বসে সেই ছাগলটিকে খেয়ে ফেলে। ফলে বাঘকে বন্দি করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। প্রথম প্রথম কিছু ছাগল বাঘের পেটে গেলেও যদি সতর্কতার সঙ্গে একটির পিছনে আর একটি ছাগল বসানো যায় তাহলে আর বাঘের পেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। উল্টে ঘর বদলের সুযোগ হারিয়ে বন্দি হয়ে পড়ে বাঘ। যদি ছাগল বাঘকে বন্দি করতে অসফল হয় তা হলে ছাগলের পরাজয় ঘটে। অন্যথায় ছাগলের দ্বারা বন্দি হলে পরাজিত হয় বাঘ।
খেলাটিতে এক কালে বহু সময় কাটিয়েছেন ময়ূরেশ্বরের সুনীল দাস, কীর্ণাহারের বিটন খানরা। তাঁরা বলেন, “ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাঘবন্দি খেলায় কেটে যেত। এখন আর ওই খেলা কাউকে খেলতেই দেখা যায় না।” |
|
|
|
|
|