ছোট্ট থেকেই অ্যাথলিট হওয়ার ইচ্ছে ছিল। সেই ইচ্ছের পাখায় ভর দিয়ে গ্রামের এবড়ো-খেবড়ো পথে দৌড়তেন নারায়ণগড়ের শ্যামলী সিংহ। কিন্তু প্রশিক্ষণ ছাড়া যে স্বপ্ন পূরণ সম্ভব নয়, মেদিনীপুরে এক দৌড় প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়ে তা বিলক্ষণ বুঝেছিলেন শ্যামলী। সফল না হওয়ার দুঃখে কেঁদেই ফেলেছিলেন সে বার। তা দেখে মেদিনীপুর শহরের তরুণ সঙ্ঘ ব্যায়ামাগার কর্তৃপক্ষ ক্লাবে রেখে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। বিরবিরা গ্রামের মুণ্ডা সম্প্রদায়ের সেই শ্যামলীই এ বার মহিলা প্রতিযোগী হিসাবে রাজ্যের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছেন ‘৪৬তম ন্যাশনাল ক্রস কান্ট্রি চ্যাম্পিয়ানশিপ’এ। ২২ জানুয়ারি ওই প্রতিযোগিতাটি হবে মহারাষ্ট্রের পুণেতে।
ইচ্ছেপূরণের সিঁড়িতে চেপে বেজায় খুশি শ্যামলী। তাঁর কথায়, “তরুণ সঙ্ঘ ব্যায়ামাগার না থাকলে এই ধরনের সুযোগ হয়তো অধরাই থেকে যেত। প্রত্যন্ত গ্রামে প্রশিক্ষণই বা দিত কে? তাছাড়া আমরা গরিব। এই সবের খরচ কম নয়। ক্লাবের নাম উজ্জ্বলের চেষ্টা করব।” শ্যামলীর সাফল্যে উচ্ছ্বসিত তরুণ সঙ্ঘ ব্যামায়াগার কর্তৃপক্ষও। সম্পাদক নন্দলাল ভকত ও স্পোর্টস সম্পাদক উত্তম মণ্ডল বলেন, “আমাদের ব্যায়ামাগারের সদস্য এত বড় সুযোগ পাওয়ায় খুব ভাল লাগছে। আমরা ওর সাফল্য কামনা করি।”
 |
নিজস্ব চিত্র। |
মহিলাদের হয়ে ৮ কিলোমিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার জন্যই শ্যামলীকে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে বেঙ্গল রোড অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে। ক্রস কান্ট্রি প্রতিযোগিতায় সমস্ত ধরনের রাস্তায় দৌড়তে হয়। তাতে যেমন পাকা রাস্তা থাকবে, তেমনই কাঁচা রাস্তা, মোরাম রাস্তা, জঙ্গলও থাকবে। এতে অবশ্য চিন্তিত নয় শ্যামলী। কারণ, এর আগে ম্যারাথন দৌড়ে যোগ দেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে শ্যামলীর। মীরাটে ম্যারাথন দৌড়ে পঞ্চম ও ঝাড়খন্ডে প্রথম হয়েছিলেন তিনি। ২০০৯ সালে কলকাতার ম্যারাথন দৌড়ে ২৫তম স্থান অধিকার করেছিলেন। এ ছাড়াও ৫ কিলোমিটার ও ১০ কিলোমিটার দৌড়ে বহু জায়গা থেকে পুরস্কার পেয়েছেন। তবে রাজ্যের হয়ে বাইরে প্রতিনিধিত্ব করতে যাওয়ার সুযোগ এই প্রথম। খেলার পাশাপাশি এ বার প্রাইভেটে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছেন বছর কুড়ির শ্যামলী। প্রত্যয়ী শ্যামলীর কথায়, “এত বড় সুযোগ যখন পেয়েছি, তখন রাজ্যের নাম রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা করব।” |